রবিবার, ২০ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

বর্ণিল আয়োজনে শেষ হলো সুবর্ণজয়ন্তী

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

বর্ণিল আয়োজনে শেষ হলো সুবর্ণজয়ন্তী

বর্ণিল আয়োজনের মধ্য দিয়ে সাবেক নবীন-প্রবীণ শিক্ষার্থীদের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠেছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ক্যাম্পাস। দুই দিনব্যাপী চবির সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠান গতকাল শেষ হয়েছে। রংবেরঙের ব্যানার, ফেস্টুন হাতে র‌্যালিতে অংশ নিয়েছেন কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। এ সময় নবীন-প্রবীণ শিক্ষার্থীর মিলনমেলায় রূপ নেয় চবি। জমিয়ে তোলেন স্মৃতির আড্ডা। আয়োজক কমিটির সদস্য সাংবাদিক চৌধুরী ফরিদ বলেন, চবি ক্যাম্পাসে প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।

মুখরিত চবির সেই ঝুপড়ি : চবির ৫০ বছরপূর্তিতে সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থীরা গান আর আড্ডায় মুখরিত ছিল চবি কলা অনুষদের সেই ঝুপড়িটি। ঝুপড়ির আগের সেই চিরচেনা রূপ না থাকলেও সাবেক শিক্ষার্থীদের জমজমাট গান আর আড্ডায় যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে ঝুপড়ি। এতে বর্তমান শিক্ষার্থীদের চেয়ে সাবেকদের উপস্থিতিই বেশি লক্ষণীয় ছিল। অনেকেই দলবেঁধে বসে গেছেন দোকানে। কেউ টেবিল চাপড়ে গান গাইছেন, কেউ চুমুক দিচ্ছেন চায়ের কাপে, আবার কেউবা মেতে রয়েছেন আড্ডায়। এতে অনেকেই এসে স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েছেন আর পুরনো বন্ধু, পরিচিত মুখ খুঁজে নিতে বেছে নিয়েছেন ঝুপড়িটি।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী : চবি দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ অভিহিত করে লক্ষ্য পূরণে প্রতিষ্ঠানটি সফল হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবের দ্বিতীয় দিন গতকাল আলোচনা ও সাংস্কৃতিক পর্বের প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। স্পিকার বলেন, ‘যে ভিশনকে সামনে রেখে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রা শুরু করে, সেখানে এই বিশ্ববিদ্যালয় আজ এক মহীরুহ। দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।’ তিনি বলেন, ‘সেলিব্রেশন অব কালেকটিভ এচিভমেন্ট এখন এক মাইলফলক। সামগ্রিক পরিকল্পনায় শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যুগোপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থা সুসংহত করার মধ্য দিয়ে আগামী দিনের পথ রচনায় কাজ করবে চবি।’ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে স্পিকার বলেন, মেধা ও দক্ষতা বিকাশের মধ্য দিয়ে তোমাদের হাত ধরে এগিয়ে যাবে আগামী দিনের বাংলাদেশ। “আমরাই গড়ে তুলব শোষণমুক্ত, ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত, গণতান্ত্রিক, অসম্প্রদায়িক, উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। যা আমাদের সংবিধানের অঙ্গীকার।” তিনি বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীরা আজ দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিষ্ঠিত। ৫০ বছর পর হয়তো আমাদের অনেকেই থাকব না। কিন্তু এই বিশ্ববিদ্যালয় তার জ্ঞান বিতরণ করেই যাবে। যুগ যুগ ধরে যেন এভাবেই এই ধারা চলমান থাকে।

প্রফেসর ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান : উপস্থিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান বলেন, যেখানে শত শত বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, সেখানে পঞ্চাশ বছর অতিক্রম করা কিছু নয়। তবুও এ দেশের প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয় যখন এখনো শতবর্ষ অতিক্রম করেনি, সেখানে আমাদের ৫০ বর্ষপূর্তি একটা উল্লেখযোগ্য ঘটনা বটে। তবে এটা যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্বের দিকেই আমাদের তাকাতে হবে। আমাদের লক্ষ্য হবে জগতের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো হয়ে ওঠা। তার জন্য সাধনা ও শৃঙ্খলা চাই, স্বপ্ন ও অধ্যবসায় চাই। আমার বিশ্বাস, সেখানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পেছনে পড়ে থাকবে না।

চবির উপাচার্য প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দীন চৌধুরী : চবি উপাচার্য ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেছেন, সুবর্ণজয়ন্তীতে যদি কোনো ভুলত্রুটি হয়, তাহলে সব দোষ আমার। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীরা অনুষ্ঠান সফল করতে সর্বাত্মক। সভায় বক্তব্য রাখেন পানিসম্পদমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি, সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগ সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী, চবির সাবেক উপাচার্য এ জে এম নুরুউদ্দীন চৌধুরী, ওয়াশিকা আয়েশা খান এমপি, চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম।

শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর সুকান্ত ভট্টাচার্য ও নাসরিন আক্তারের সঞ্চালনায় সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কামরুল হুদা।

চবির উপাচার্য প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দীন চৌধুরী বলেছেন, যদি কোনো ভুলত্রুটি হয়, তাহলে সব দোষ আমার। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীরা অনুষ্ঠান সফল করতে সর্বাত্মক চেষ্টা করেছেন।

দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের প্রথম দিন শুক্রবার নগরীর বাদশা মিয়া সড়কে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে শোভাযাত্রা শুরু হয়। আর গতকাল সন্ধ্যায় জিইসি কনভেনশন সেন্টারে সাবেক শিক্ষার্থীদের আয়োজনে মনোরম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী রুনা লায়নাসহ দেশের বিভিন্ন শিল্পী।

সর্বশেষ খবর