বৃহস্পতিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

দশ মাসে আত্মহত্যার মিছিলে ১৪২ জন

রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকসহ স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

অনেক আগেই সকাল হয়েছে। তবু তন্ময়ের ঘরের দরজা খুলছিল না। ঘরের জানালা দিয়ে মা দেখেন, তন্ময় ঘরের মধ্যে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। তিনি ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে পড়াশোনা করতেন। তার বাড়ি রাজশাহীর দুর্গাপুরে। ঘটনাটি সোমবারের। রবিবার রাজশাহী মহানগরীর কুমারপাড়া এলাকায় ফারহানা ইয়াসমিন পিংকি (২৪) নামে এক গৃহবধূ গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। রবিবার নগরীর উপকণ্ঠ নওহাটায় বাগধানী উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির এক ছাত্রী স্কুলে গিয়ে কীটনাশক পান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। এর আগে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নগরীর উপকণ্ঠ শাহাপুর এলাকায় সপ্তম শ্রেণি পড়ুয়া দুই বান্ধবী একসঙ্গে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। এমন আত্মহত্যার ঘটনা রাজশাহীতে প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে।

শুধু রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, গত ১০ মাসে রাজশাহীতে ১৪২ জন আত্মহত্যা করেছে। এদের অধিকাংশই স্কুল-কলেজের ছাত্রী। এদের বেশিরভাগ প্রেমে ব্যর্থ হয়ে, কেউ উত্ত্যক্তের শিকার হয়ে, কেউ পরকীয়া আবার কেউ সামান্য অভিমান করেই আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বিদ্যাপীঠে গত ছয় বছরে ১০ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। সম্প্রতি এক শিক্ষকও আত্মহত্যা করেছেন। গত ৯ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবেরী ভবনের নিজ কক্ষ থেকে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক আকতার জাহান জলির মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। রাজশাহীতে হঠাৎ করেই বেড়ে চলেছে আত্মহত্যার প্রবণতা। সাম্প্রতিক সময়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থেকে শুরু করে তরুণ-তরুণীরা আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। পুরো সমাজে পারিবারিক বন্ধন ও মূল্যবোধের বিপর্যয়ের কারণে এ ধরনের ঘটনা বেশি ঘটছে বলে জানিয়েছেন মনোবিজ্ঞানীরা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল আলম সুফি বলেন, পুরো সমাজে পারিবারিক বন্ধন ও মূল্যবোধের বিপর্যয় ঘটেছে। আর এ কারণেই এ ধরনের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। তিনি জানান, বর্তমান সময়ে মানুষ তার সমস্যা খুলে বলতে পারছে না। পরিবারগুলো ভেঙে যাচ্ছে। এটাও আত্মহত্যার অন্যতম কারণ।

সর্বশেষ খবর