রবিবার, ২৭ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

কাস্টমস হাউসে আর নয় দালাল-ফালতু

বাংলাদেশ প্রতিদিনে প্রতিবেদন

রুহুল আমিন রাসেল

চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের ‘বহিরাগত কর্মচারী’ নামে ‘দালাল’ এবং ‘ফালতু’দের সিন্ডিকেট ভেঙে ফেলতে বলেছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। সংস্থাটির এক গোপন প্রতিবেদনে বলা হয়, কাস্টমস হাউসে বহিরাগতদের অনুপ্রবেশ সরকারের সক্ষমতা সম্পর্কে প্রশ্ন সৃষ্টি করেছে। এরা নথি গায়েব ও তথ্য পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকায় রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে।

চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টমস হাউস রাষ্ট্রের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ দুই প্রতিষ্ঠানে ভয়াবহ নাশকতার আশঙ্কা করে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড—এনবিআরকে অবহিত করে বলে সূত্র জানায়। এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনে গত ২ অক্টোবর ‘বন্দরে ভয়াবহ নাশকতার আশঙ্কা’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর নড়েচড়ে বসেন সংশ্লিষ্টরা। গত অক্টোবরে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের সমস্যা নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির কমিশনারকে দিকনির্দেশনামূলক গোয়েন্দা প্রতিবেদন পাঠায় শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতর। এর পরও চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে বহাল তবিয়তে আছে দালাল ও ফালতুদের একাধিক সিন্ডিকেট। ১৪ ও ১৫ নভেম্বর শুল্ক গোয়েন্দার মহাপরিচালকের উপস্থিতিতে চার ফালতুকে আটক করা হয়।

এমন প্রেক্ষাপটে সর্বশেষ ২১ নভেম্বর চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের কমিশনারকে ‘বহিরাগত কর্মচারী’ নামে শতাধিক ‘দালাল’ এবং ‘ফালতু’দের সিন্ডিকেট ভেঙে ফেলার নির্দেশনা জারি করে গোপনীয় প্রতিবেদন দিয়েছেন শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান। তিনি এই চিঠিতে বলেন, ‘ফালতু’ হিসেবে পরিচিত শখানেক বহিরাগত কাস্টমসের গুরুত্বপূর্ণ কাজে দীর্ঘদিন ধরে নিয়োজিত আছে। এনবিআরের মাধ্যমে এসব বহিরাগতের একটি তালিকা ইতিমধ্যে পাঠানো হয়। এই বহিরাগতদের অনুপ্রবেশ একদিকে যেমন সরকারের সক্ষমতা সম্পর্কে প্রশ্ন সৃষ্টি করেছে অন্যদিকে স্পর্শকাতর প্রতিষ্ঠান হওয়ায় রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে। সেবার মান উন্নত করার ক্ষেত্রে এসব বহিরাগত ও ফালতুর উপস্থিতি বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের কার্যক্রম স্বচ্ছ ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য এবং কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব শাখা, সেকশন, বিভাগ ও দফতরের কোথাও কোনো বহিরাগতকে দাফতরিক কাজে সম্পৃক্ত না করার জন্য ৮ নভেম্বর অফিস আদেশ জারি করা হয়।

ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, শুল্ক গোয়েন্দার মহাপরিচালকের উপস্থিতিতে এবং গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ১৪ ও ১৫ নভেম্বর চট্টগ্রাম কাস্টমসে শুল্কায়ন কাজ করার সময় চারজনকে আটক করা হয়। এরা হলেন আবদুল কাদের, মোহাম্মদ মিজান, মহিন উদ্দিন ও মোহাম্মদ হোসেন। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়েই এই বহিরাগত দালাল ও ফালতুরা দীর্ঘদিন যাবৎ নথি ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এরা সরকারি কাজের গোপনীয়তা ক্ষুণ্ন ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণ হিসেবে চিহ্নিত। তারা কোনো নির্দেশনাই কর্ণপাত করেন না। এদের অধিকাংশ অসাধু ব্যবসায়ীদের এজেন্ট হিসেবে কাজ করেন। এরা অনৈতিক লেনদেনের মধ্যস্থতাকারী। এদের বিরুদ্ধে নথি গায়েব করা ও অসাধু ব্যবসায়ীদের পক্ষে তথ্য পাচারের অভিযোগ আছে। তাই ফালতুদের বিতাড়িত করতে চট্টগ্রাম কাস্টমসকে কঠোর নজরদারি বাড়াতে হবে।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টম হাউসের নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘ফালতু’দের সিন্ডিকেট। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর এমন তথ্য পেয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থাও নিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও এনবিআর। সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টম হাউস সম্পর্কে দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা সংস্থার একজন পরিচালকের স্বাক্ষর করা গোপনীয় প্রতিবেদন গত ৬ সেপ্টেম্বর আসে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোজাম্মেল হক খানের কাছে। ওই প্রতিবেদনের অনুলিপি দেওয়া হয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব ও এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমানকে।

সর্বশেষ খবর