শনিবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

সন্ত্রাসী তালিকা নিয়ে মাঠে পুলিশ

নাসিক নির্বাচন

নিজস্ব প্রতিবেদক ও নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

সন্ত্রাসী তালিকা নিয়ে মাঠে পুলিশ

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচন ২২ ডিসেম্বর। নির্বাচনকে ঘিরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে শতাধিক সন্ত্রাসী। তাদের ধরতে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তবে নাসিকের আওতাধীন তিনটি থানায় এখনো রয়েছে সন্ত্রাসীদের সেই পুরনো তালিকা। নতুন করে কোনো তালিকা হয়নি বলে জানা গেছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ২০ থেকে ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত পুলিশের বিশেষ অভিযানে উল্লেখযোগ্য কেউ গ্রেফতার হয়নি। এদিকে নারায়ণগঞ্জ ও জেলা পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সারা দেশে নির্বাচনী এলাকায় অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান পরিচালনা করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

জানা গেছে, নাসিক এলাকার তিন থানায় ৭৫ জন তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী রয়েছে। এর মধ্যে সদর মডেল থানায় ২৩, বন্দর থানায় ৪০ ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় রয়েছে ১২ জন। এদের অনেকের বিরুদ্ধে রয়েছে খুন, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, অস্ত্র ব্যবসা, ডাকাতিসহ ডজনখানেক মামলা। মূলত এ তালিকার অনেকে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে। কেউ কেউ জামিনে বেরিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে প্রকাশ্যে। কয়েকজন আছে কারাগারে। কিন্তু বেশ কয়েক বছর ধরে মাঠ পর্যায়ের যেসব সন্ত্রাসী জেলা শহরে নানা অপকর্ম করে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে তাদের অনেকের নাম এ তালিকায় আছে কিনা বা হালনাগাদ হয়েছে কিনা তা নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন।

কয়েক মাস আগে জেলায় নতুন পুলিশ সুপারসহ চারজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার যোগদান করেছেন। শীর্ষ পুলিশের নতুন সেটআপ নিয়ে কাজ করতে অনেকটা হিমশিম খাচ্ছেন অধস্তনরা। অভিযোগ উঠেছে, চার-পাঁচ মাস ধরে নাসিক নির্বাচন নিয়ে উত্তাপ চললেও পুলিশ প্রশাসন নতুন করে সন্ত্রাসী তালিকা হালনাগাদে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। সূত্রমতে, সদর মডেল থানার তালিকাভুক্ত জেলার শীর্ষ সন্ত্রাসী জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জাকির খান। তার বিরুদ্ধে জেলার বিভিন্ন থানায় ৩০টির বেশি মামলা রয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে পলাতক। কিছুদিন আগে দেশে ফিরে আসেন বলে গুঞ্জন উঠেছিল। তাকে পুলিশ এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি। আরেক তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী মাজহারুল ইসলাম জোসেফকে শহরের টানবাজার এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরতে দেখা গেছে। তিনি বর্তমানে জামিনে থাকলেও তার বিরুদ্ধে রয়েছে ঝুট সন্ত্রাসের অভিযোগ। টিটু ওরফে বাঘা টিটুকে দেখা গেছে ১০-১২ দিন আগেও প্রকাশ্যে। এখন লাপাত্তা। তবে প্রশাসনের চোখ এড়িয়ে কৌশলে এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তালিকায় থাকা আক্তার হোসেন ওরফে কানা আক্তার জামিনে বের হয়ে ফতুল্লার কাশীপুরে মুরগির ব্যবসায়ী বনে গেছেন বলে জানা গেছে। আমলাপাড়ার সাঈদ ওরফে বগি সাঈদ এখন সৌদিআরব প্রবাসী। সন্ত্রাসী জাকির খানের ভাই মামুন কলকাতায় পালিয়ে আছেন বলে জানা গেছে। গলাকাটা জাকির দুবাই বা সৌদিআরবে পালিয়ে গেছেন। অস্ত্র ব্যবসায়ী সওয়াদ হোসেন বান্টি জেলে। এদের সবার বিরুদ্ধে রয়েছে ১০-১২টি করে মামলা। একই অবস্থা সিদ্ধিরগঞ্জ থানার তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীদের। ওই থানার তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী নূর হোসেন সাত খুন মামলায় জেলে। আনোয়ারুল হক আশিকও জেলে। এ থানার তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ঢাকাইয়া জালাল ও দর্জি সেলিমের দীর্ঘদিন ধরে হদিস নেই। ফয়েজ মেম্বার জামিনে বের হয়ে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। সরল ডাকাত কিছু দিন আগে গ্রেফতার হয়েছেন। এ তালিকায় নতুন কোনো সন্ত্রাসীর নাম নেই বলে জানা গেছে। বন্দর থানার তালিকায় মনিরুজ্জামান মনু শীর্ষ সন্ত্রাসী। তিনি গতবারের ইউপি নির্বাচনে বাহিনী নিয়ে এলাকায় প্রবেশ করেছিলেন। বিভিন্ন সময় বাহিনী নিয়ে মহড়া দেন। তালিকায় থাকা শাহানশাহ ২০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী। সেলিম নামে এক সন্ত্রাসী সাত খুন মামলার আসামি। বিল্লাল হোসেন নামে এক সন্ত্রাসী রাজাকার রফিক চেয়ারম্যানের নাতি। তিনি জামিনে বের হলেও রয়েছেন লোকচক্ষুর আড়ালে। তালিকায় থাকা আনোয়ার হোসেন সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। জানা যায়, তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীর মধ্যে একমাত্র জাকির খান নারায়ণগঞ্জে বাহিনী নিয়ে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছেন। তালিকাভুক্ত বাকি সন্ত্রাসীরা অনেকটাই নিষ্ক্রিয়। কেউ রয়েছেন জেল হাজতে, কেউ বিদেশে। কারও হদিস নেই। তবে যেসব সন্ত্রাসী কয়েক বছর ধরে শহর দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন তাদের অনেকেরই নাম নেই তালিকায়। ফলে নাসিক নির্বাচনে সন্ত্রাসী গ্রেফতার জরুরি হয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মঈনুল হক বলেন, ‘তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীদের অনেকেই জামিন নিয়ে নির্বাচনী মাঠে থাকতে পারেন। আদালত জামিন দিলে আমাদের তেমন কিছু করার নেই। তবে কারও বিরুদ্ধে মামলা চলমান বা ওয়ারেন্ট থাকলে তাদের আটক করা হবে। আমাদের অ্যাসেসমেন্ট হচ্ছে এ নির্বাচন সুষ্ঠু হবে।’ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী গ্রেফতারে বিশেষ অভিযান চালিয়েছি। এটি নির্বাচনকেন্দ্রিক নয়, চলমান প্রক্রিয়া। নির্বাচনে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাতে পারে এমন ব্যক্তিদেরও আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।’ তালিকাভুক্ত অনেকেই নির্বাচনের মাঠে রয়েছেন— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যারা মামলার আসামি কিন্তু জামিনে নেই এমন কেউ প্রচারণা চালালে তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে।’

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ইসির চিঠি : অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান পরিচালনা করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এ ছাড়া এ দুই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে ফলাফলের গেজেট প্রকাশ পর্যন্ত এই অভিযান পরিচালনা করতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে নারায়ণগঞ্জ ও জেলা পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের বিশৃঙ্খলা রোধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ইসি সচিব মোহাম্মদ আবদুল্লাহ স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত চিঠি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোজাম্মেল হক খানের কাছে পাঠানো হয়েছে। আগামী ২২ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন ও ২৮ ডিসেম্বর দেশের ৬১ জেলায় জেলা পরিষদ নির্বাচন হবে। কমিশনের সিদ্ধান্ত তুলে ধরে ইসি সচিব চিঠিতে লিখেছেন—‘নির্বাচন-পূর্ব সময় তথা দুই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে ফলাফলের গেজেট প্রকাশ পর্যন্ত সময়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন ও জেলা পরিষদ (পার্বত্য জেলাসমূহ ব্যতীত) নির্বাচনী এলাকায় অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান পরিচালনায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।’ এছাড়া নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কেউ যেন স্বার্থ হাসিলের জন্য সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট না করে সেদিকে নজর দেওয়ার জন্য জোর দিয়েছে ইসি। সংখ্যালঘু ধর্মাবলম্বীদের নিরাপত্তার সর্বপ্রকার ব্যবস্থা নিতে হবে। অবৈধ অনুপ্রবেশকারীরা নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতে ও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরিতে বাধা সৃষ্টি করায় তাদের বিষয়ে তীক্ষ নজর রাখতেও বলেছে কমিশন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর