মঙ্গলবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

ফুলেল শ্রদ্ধায় সিক্ত ভাষা সৈনিক গাফ্ফার চৌধুরী

শাহবাগে জন্মদিনের সংবর্ধনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিশিষ্ট সাংবাদিক ও ভাষা সৈনিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী বলেছেন, এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে বাংলাদেশ। দেশে উন্নয়ন হচ্ছে, রাজনৈতিক দিক দিয়েও দেশ স্থিতিশীলতার মধ্যে রয়েছে। কিন্তু সন্ত্রাসবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। তবে এ মুহূর্তে বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদ অনেকটাই নিষ্প্রভ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারণেই এটা সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমার মতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের কোনো তুলনা নেই।’ তার ৮৩তম জন্মবার্ষিকী ছিল ১২ ডিসেম্বর। এ উপলক্ষে দেওয়া এক ফুলেল সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে গতকাল গাফ্ফার চৌধুরী এসব কথা বলেন। রাজধানীর ঢাকা ক্লাবে স্যামসন এইচ চৌধুরী সেন্টার ভরে গিয়েছিল ভক্তদের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায়। শুভার্থীদের ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত হয়েছেন এই ভাষা সৈনিক। জনাকীর্ণ এ অনুষ্ঠানে কিছুটা আবেগাপ্লুত কণ্ঠে তিনি বলেন, আমাদের জাতীয় পরিচয়কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে ঊর্ধ্বে তুলে ধরেছেন, তা সমুন্নত রাখতে তিনি রীতিমতো যুদ্ধ করছেন। এ সরকারকে অনেকে অগণতান্ত্রিক সরকার বলে উল্লেখ করে কিন্তু যে গণতন্ত্র তালেবান সৃষ্টি করে তার চেয়ে এই গণতন্ত্র ভালো। গাফ্ফার চৌধুরী জানান, তিনি বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর জীবন নিয়ে প্রমাণ্যচিত্র ‘শেখ হাসিনা : দুর্গম পথের যাত্রী’ নির্মাণ করেছেন। এটা গত ১৭ ডিসেম্বর তিনি প্রধানমন্ত্রীকে  দেখিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এটা করার কী দরকার ছিল। এর জবাবে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে বলেছেন, দেশের মানুষ দেখুক— এ দেশ শুধু জিয়া-খালেদার জন্ম দেয়নি। এদেশ শুধু মীরজাফরকে জন্ম দেয়নি। সিরাজউদ্দৌলারও জন্ম দিয়েছে। মানুষ দেখুক দেশের উন্নয়নে নিবেদিতপ্রাণ এই নেতাকে। এ সময় তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ পরিচালনায় তার পিতাকেও অতিক্রম করেছেন। অনুষ্ঠানে অমর একুশে গানের রচয়িতা আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর শতায়ু কামনা করলেন দেশের বিশিষ্টজনেরা। প্রত্যাশা করলেন, সামনের দিনগুলোতেও বাংলাদেশের সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথে অভিভাবকের মতো পথ দেখাবেন তিনি। ক্রান্তিকালে দেবেন পথের দিশা। আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান তার প্রেস সচিব ইহসানুল করিম। শুভেচ্ছা জানাতে আসেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর, বেসামরিক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, পাট ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম, এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা, সংসদ সদস্য ফজলে নূর তাপস, জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আবদুর রহমান, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোজাম্মেল হক খান, শিল্প সচিব মোশাররফ হোসেন ভূইয়া, শিক্ষা সচিব সোহরাব হোসাইন, সংস্কৃতি সচিব আকতারী মমতাজ, ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম, সাবেক সেনাপ্রধান হারুন অর রশিদ, শিল্পী হাশেম খান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান, সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার, বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি মুহম্মদ শফিকুর রহমান, একাত্তর টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী পরিচালক মোজাম্মেল বাবু, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম, লায়লা হাসান, নাসির উদ্দিন ইউসুফ, শিমুল ইউসুফ, চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর, নাট্যজন পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়, ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, শহীদ বুদ্ধিজীবীর সন্তান ডা. নুজহাত চৌধুরী, কবি আসাদ চৌধুরী, পিআইবির মহাপরিচালক শাহ আলমগীর। সবাই হৃদয়ের উষ্ণতায় ভালোবাসায় সিক্ত করেন এই ক্ষণজন্মা ব্যক্তিত্বকে। প্রত্যাশা করেন দীর্ঘ জীবনের। সবাই প্রত্যাশা করেন, তিনি যেন বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় তার সুতীক্ষ লেখনী দিয়ে আরও দীর্ঘদিন জাতিকে পথনির্দেশ করে চলেন। সবার কণ্ঠে উচ্চারিত হয়, আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী ও বাঙালি জাতীয়তাবাদ এক সমার্থক শব্দ। আদর্শের প্রশ্নে তার আপসহীন অবস্থান সমকালে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে তিনি এক অসমসাহসী যোদ্ধা। বিশ্বব্যাপী যারাই বাংলা ভাষাকে ভালোবাসেন, লালন করেন তাদের অন্তরে তিনি এক আলোকবর্তিকা হিসেবে পথনির্দেশ করে যাবেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠনের পরেই গাফ্ফার চৌধুরী বিদেশে পাড়ি জমান। কিন্তু কখনোই তার অনুপস্থিতি বোঝা যায়নি। লেখালেখির মধ্য দিয়ে তিনি সবসময় কাছেই ছিলেন। তার প্রতিটি লেখায় আদর্শবাদের ছাপ রয়েছে। তার কৃতিত্ব সাংবাদিক হিসেবে সবচেয়ে বেশি। টিএস ইলিয়টের মতো করে বলতে চাই— সাংবাদিকতা এক ধরনের সাহিত্য। তার লেখার সংকলনের একটা বড় অংশজুড়ে রয়েছে সাহিত্য। তার লেখার সংকলন সাহিত্যের বড় অংশ দখল করে আছে। তিনি সারাজীবন আওয়ামী লীগকে সমর্থন করেছেন, সময়ে সময়ে সমালোচনা করেছেন, উপদেশ দিয়েছেন। নানা মাধ্যমে কাজ করে তিনি কিংবদন্তি হয়ে আছেন, কিংবদন্তি হয়েই থাকবেন। তার কর্মমুখর দীর্ঘায়ু কামনা করি।

সর্বশেষ খবর