শুক্রবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
আগামী অর্থবছরের টার্গেট ১৯১ লাখ মেট্রিক টন

মাঠপর্যায়ে বোরো ধানের উৎপাদন পার্থক্য তিন টন

আহমদ সেলিম রেজা

আগামী অর্থ বছরের জন্য সরকার ৪৮ লাখ হেক্টর জমিতে ১৯১ লাখ ৫৩ হাজার মেট্রিক টন বোরো উৎপাদনের টার্গেট করেছে। তবে কৃষি বিজ্ঞানীরা বলছেন, গবেষণা পর্যায়ে উফশী ধানের গড় উৎপাদন ক্ষমতা হেক্টরে ৭ টনেরও বেশি। অথচ কৃষক পর্যায়ে উৎপাদন হচ্ছে ৪ টনেরও কম। অর্থাৎ এখানে উৎপাদন পার্থক্য ৩ টনেরও বেশি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ কমিটির সদস্য সচিব ও ক্রপস উইংয়ের পরিচালক নূরুজ্জামানের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গবেষণা পর্যায়ে উৎপাদনের সঙ্গে মাঠপর্যায়ের উৎপাদনের ফারক দিন দিন বেড়ে যাওয়ায় এবার মাঠপর্যায়ের হিসাবে টার্গেট নির্ধারণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে সরকার গম উৎপাদনের টার্গেট করেছে ১৪ লাখ ৩১ হাজার মেট্রিক টন, ভুট্টা ও গম মিলিয়ে ৩০ লাখ মেট্রিক টন। এ ছাড়া আলু উৎপাদনের টার্গেট করা হয়েছে ৯৬ লাখ মেট্রিক টন। সূত্র জানায়, সরকার অনুমোদিত উপরোক্ত লক্ষ্যমাত্রা গত ১৮ ডিসেম্বর প্রকাশ করা হয়। এতে লক্ষ্য করা গেছে, কৃষক পর্যায়ে উৎপাদনের বাস্তবতাকে সামনে রেখে এবার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নিধারণ করা হয়েছে। কৃষিবিজ্ঞানীদের অনুমিত হিসাব অনুযায়ী, মাঠপর্যায়ে ধানের ফলনের পার্থক্য হওয়ার কথা শতকরা প্রায় ২০ ভাগ অর্থাৎ গবেষণা পর্যায়ে উৎপাদনের পরিমাণ থেকে মাঠপর্যায়ে হেক্টর প্রতি প্রায় ১ টন কম উৎপাদন হওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে কৃষক পর্যায়ে উৎপাদন পার্থক্য হচ্ছে ৩ টনেরও বেশি। বাংলাদেশে গবেষণা পর্যায়ে উফশী ধানের গড় উৎপাদন ক্ষমতা হেক্টরে ৭ টনেরও বেশি। অথচ কৃষক পর্যায়ে উৎপাদন হচ্ছে ৪ টনেরও কম। বিষয়টি কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী সম্প্রতি সংসদেও তুলে ধরেছেন। তারই আলোকে এবার উফশী ধানের ফলন হেক্টর প্রতি ৩.৮৬ মেট্রিক টন হিসাব করে উফশী জাতের মোট উৎপাদন ১৫২ লাখ ৫৯ হাজার মেট্রিক টন নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া হাইব্রিড ও স্থানীয় জাতসহ মোট ১৯১ লাখ ৫৩ হাজার মেট্রিক টন বোরো ধান চাষের টার্গেট করা হয়েছে। উৎপাদন কমে যাওয়ার পিছনে বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনকে একটি বড় কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন কৃষিবিজ্ঞানীরা। কৃষি জমিতে খড়া প্রবণতা বৃদ্ধি, উপকূলের জমিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধিসহ ধান উৎপাদন কমে যাচ্ছে বলে মনে করছেন গবেষকরা। সরকারি নথি অনুযায়ী, বাংলাদেশের ধান উৎপাদন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে জলবায়ু সমস্যা বিশাল অন্তরায় সৃষ্টি করেছে। বিষয়টি কৃষিমন্ত্রী নিজেও স্বীকার করে নিয়েছেন। এ বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী সংসদের ত্রয়োদশ অধিবেশনে এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, কৃষি উৎপাদনে জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। কৃষি ক্ষেত্রে এর প্রভাব মোকাবিলায় লবণাক্ততাসহিঞ্চু ধানের চাষ, জলাবদ্ধতাসহিঞ্চু ধানের চাষ, খরাসহিঞ্চু ফসল ও ধানের চাষসহ বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের কৃষকরা যথেষ্ট শ্রম, সময় ও অর্থ ব্যয় করে ধান ফসলের ফলন বৃদ্ধির চেষ্টা করেন। কিন্তু বিজ্ঞানসম্মত আধুনিক উৎপাদন কলাকৌশল যথাযথ ব্যবহার করতে না পারার কারণে কাঙ্ক্ষিত ফলন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ ছাড়া কৃষিতে বর্তমানে যে সব চ্যালেঞ্জ রয়েছে তার মধ্যে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে গবেষণা এবং মাঠপর্যায়ে উৎপাদন পার্থক্য। এ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য কৃষি বিজ্ঞানীরা কাজ করছেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন। দেশের প্রায় ৭৫ ভাগ ফসলী জমিতে ধান চাষ করা হয় বলেও তিনি উল্লেখ করেন। সংসদে ত্রয়োদশ অধিবেশনে গত ২০ ডিসেম্বর প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারি দলের এমপি মোহাম্মদ সুবিদ আলী ভূঁইয়া ও দিদারুল আলমের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ তথ্য জানান।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর