চলমান পাঁচটি উন্নয়ন প্রকল্পে দরপত্রে উল্লিখিত কাজ বেড়ে যাওয়ায় ১৬২ কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় এবং ১৩ লাখ টন জ্বালানি তেল আমদানিসহ ১২টি দরপ্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এতে প্রায় ৫ হাজার ৯৮ কোটি টাকা ব্যয় হবে। গতকাল সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোস্তাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। অতিরিক্ত সচিব বলেন, ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো) থেকে চুক্তিবদ্ধ তিন লাখ টনের মধ্যে দ্বিতীয় লটে ৩০ হাজার টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ৫৫ কোটি ৯০ লাখ টাকা। ‘জামালপুর জেলার ইসলামপুর উপজেলাধীন ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর দুটি ব্রিজ নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পের    আওতায় পাইলিং ঘাটে ৫৬০ মিটার দীর্ঘ ব্রিজ নির্মাণে দরপত্রে উল্লিখিত কাজ বেড়ে যাওয়ায় এর মোট ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১২ কোটি ৯৩ লাখ টাকায়। ঢাকার মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার প্রকল্পের আওতায় তেজগাঁও সাতরাস্তা মোড় থেকে এফডিসি মোড়, সোনারগাঁও রেলক্রসিং-মগবাজার মোড় হয়ে হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল পর্যন্ত ২ দশমিক ৫৫৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের চার লেনবিশিষ্ট ফ্লাইওভার নির্মাণকাজের ভেরিয়েশন প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সংশোধিত এ প্রকল্পের ব্যয় ২৭২ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২১৮ কোটি ৮৯ লাখ টাকা।

 এটি অবশ্য আগেই বেড়েছে। শুধু ক্রয় কমিটির অনুমোদন দেওয়া বাকি ছিল। একই প্রকল্পের আওতায় বাংলামোটর থেকে মগবাজার ক্রসিং হয়ে মৌচাক পর্যন্ত চার লেনবিশিষ্ট ২ দশমিক ২০৮ কিলোমিটার ফ্লাইওভার নির্মাণকাজের ভেরিয়েশন প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

ভারতীয় ডলার ক্রেডিট লাইন চুক্তির অধীনে বাংলাদেশ রেলওয়ের লাইনসহ ভৈরব দ্বিতীয় ও তিতাস দ্বিতীয় রেলওয়ে সেতু নির্মাণের পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের কাজের ভেরিয়েশনের একটি প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে ক্রয় কমিটি। এ ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকায়।

ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের (ইআরএল) দ্বিতীয় ইউনিটের ফ্রন্ট অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ডিজাইন (এফইইডি) ডকুমেন্ট তৈরির জন্য বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ আইন), ২০১০ অনুসরণে একক প্রতিষ্ঠান ফ্রান্সের টেকনিপের সঙ্গে নেগোশিয়েটেড দর ৩০ দশমিক ৭৫ মিলিয়ন ইউরো নোটিফিকেশন অব অ্যাওয়ার্ড (এনওএ) প্রদান ও খসড়া চুক্তি অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২৬৮ কোটি ৯৭ লাখ টাকা।

ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের প্রক্রিয়াকরণের জন্য ২০১৬ পঞ্জিকাবর্ষে আবুধাবি ন্যাশনাল অয়েল কোম্পানি ও সৌদি অ্যারাবিয়ান অয়েল কোম্পানি থেকে অপরিশোধিত মারবান ও অ্যারাবিয়ান লাইট ক্রুড অয়েল আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এতে ব্যয় হবে ২ হাজার ৫৫ কোটি টাকা। আর সৌদি আরব থেকে ৬ লাখ টন জ্বালানি তেল আমদানি করতে ব্যয় হবে ১ হাজার ৫৪৩ কোটি টাকা।

এ ছাড়া ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে জিটুজি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কোটেশন আহ্বানের মাধ্যমে ৫০ হাজার টন ফার্নেস অয়েল ১৮০ সিএসটি আমদানির প্রিমিয়াম ও মূল্য নির্ধারণ (রেফারেন্স প্রাইস অনুযায়ী) প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ জন্য ব্যয় হবে ১১৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা।

বৈঠকে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের ‘পল্লী বিদ্যুতায়ন সম্প্রসারণ রাজশাহী-রংপুর বিভাগীয় কার্যক্রম-২’ শীর্ষক প্রকল্পের একটি প্যাকেজে টার্ন-কি ভিত্তিতে একটি সাবস্টেশন নির্মাণের প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে ব্যয় হবে ২০ কোটি ৭৩ লাখ টাকা।

এ ছাড়া ‘পল্লী বিদ্যুৎ বিতরণ সিস্টেমের ক্ষমতাবর্ধন (ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগ)’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় একটি প্যাকেজের অধীনে সাবস্টেশন এবং বে ব্রেকার ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ৪২৬ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। এ ছাড়া বৈঠকে তাত্ক্ষণিকভাবে নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর একটি ব্রিজ নির্মাণের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এতে ব্যয় হবে ৪৪৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকা।