মঙ্গলবার, ৩ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

দুই বিচারপতির মৃত্যুতে সুপ্রিম কোর্টে ছুটি

নিজস্ব প্রতিবেদক

কর্মরত দুই বিচারপতির মৃত্যুতে গতকাল সুপ্রিম কোর্টে ছুটি পালন করা হয়েছে। এর ফলে সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগে গতকাল বিচার কার্যক্রম চলেনি। রবিবার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি মোহাম্মদ বজলুর রহমান ও ১৫ ডিসেম্বর হাই কোর্ট বিভাগের বিচারপতি জে এন দেব চৌধুরী মৃত্যুবরণ করেন। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে বিচারপতি বজলুর রহমানের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন, সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতিরা, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল বাসেত মজুমদার, ড. কামাল হোসেন, সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, সম্পাদক মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ আইনজীবীরা জানাজায় অংশ নেন। জানাজা শেষে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, ‘এই দুই বিচারকের আত্মার প্রতি সম্মান জানিয়ে প্রধান বিচারপতি হিসেবে আমি সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগে আজকের (গতকাল) বিচারকাজ ছুটি ঘোষণা করলাম।’ জানাজা শেষে বিচারপতি বজলুর রহমানের লাশ গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তার মৃত্যুর পর আপিল বিভাগের বিচারপতি এখন আটজন। এদিকে আপিল বিভাগের বিচারপতি, সাবেক ছাত্রনেতা ও সাংবাদিক মো. বজলুর রহমানের দাফন গতকাল বিকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জে সম্পন্ন হয়েছে।

এর আগে দুপুরে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে তার লাশ চাঁপাইনবাবগঞ্জে আনা হয়। বিকাল সাড়ে ৪টায় সেন্ট্রাল ঈদগাহ ময়দানে জানাজা শেষে খালঘাট গোরস্তানে তার লাশ দাফন করা হয়। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সারে ভুগছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী ও দুই ছেলেসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

বিচারপতি বজলুর রহমান ১৯৫৫ সালের ১২ এপ্রিল চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের পুরাতন বাজার গোয়ালপাড়া মহল্লায় এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৭০ সালে নবাবগঞ্জ হরিমোহন সরকারি উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ১৯৭২ সালে নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। মেধাবী ছাত্র বজলুর রহমান ১৯৭৬ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদ থেকে জুরিসপ্রুডেন্স বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) এবং ১৯৭৭ সালে একই বিষয়ে কৃতিত্বের সঙ্গে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৮২ সালে সমাজবিজ্ঞান বিভাগ থেকেও তিনি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। তত্কালীন বৃহত্তর রাজশাহী তথা উত্তরবঙ্গের অন্যতম সাবেক ছাত্রনেতা বজলুর রহমান ১৯৭০ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের মাধ্যমে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। তিনি তত্কালীন নবাবগঞ্জ মহকুমা ছাত্রলীগ ও আশির দশকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের শীর্ষ পর্যায়ে নেতৃত্ব দেন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। ১৯৮০ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং সিনেট সদস্য নির্বাচিত হন। পঁচাত্তর-পরবর্তী সামরিক শাসনামলে ১৯৭৮ ও ১৯৭৯-৮০ সালে নিবর্তনমূলক আটকাদেশে কারা বরণ করেন তিনি। ১৯৮৩ সালের বিশেষ সামরিক শাসনামলে সামরিক আদালতে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে তত্কালীন সামরিক জান্তা মামলাটি প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়।

সর্বশেষ খবর