বৃহস্পতিবার, ৫ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

দুই দফা রিমান্ড শেষে সাংবাদিক নাজমুল কারাগারে

আদালত প্রতিবেদক

ঢাকার আশুলিয়া থানায় করা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের মামলায় দুই দফা রিমান্ড শেষে সাংবাদিক নাজমুল হুদাকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। গতকাল ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম ফাইরুজ তাসনীম কারাগারে পাঠানোর এ আদেশ দেন। এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুই দফা রিমান্ড শেষে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সাভার প্রতিনিধি নাজমুলকে ঢাকার মুখ্য  বিচারিক হাকিম আদালতে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। এ সময় সাংবাদিক নাজমুলের আইনজীবীরা আদালতে বলেন, ‘এ মামলায় যে অভিযোগ করা হয়েছে, তার বিন্দুমাত্র সত্যতা নেই। বাংলাদেশ প্রতিদিন যে সংবাদ প্রকাশ ও প্রচার করেছে, সেই সংবাদের কারণে শ্রমিক আন্দোলনে উসকানি বা সরকারবিরোধী উসকানি দেওয়া হয়নি। যা ঘটনা শুধু সেটুকুই প্রচার করা হয়েছে। সাংবাদিকতার নীতিমালা অনুযায়ী ওই সংবাদে পুলিশ, বিজিএমইএ নেতাসহ নানা তরফের বক্তব্য যুক্ত রয়েছে। আসলে পূর্বশত্রুতার কারণে অসাধু ব্যক্তিদের স্বার্থ হাসিলের জন্য শ্রমিক উসকানির অসিলা দিয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের অপব্যবহার করা হচ্ছে। মাননীয় আদালত, পৃথিবীর অনেক দেশের বিচারব্যবস্থায় অভিযোগ করার পর মামলা প্রমাণযোগ্য কিনা আদালতে আসার আগে তা যাচাই করা হয়। কিন্তু আমাদের দেশে এ রকম ব্যবস্থা নেই। তাই আপনার কাছে জামিনের আবেদন করছি। এ মামলায় বর্ণিত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের কোনো অপরাধ সাংবাদিক নাজমুল করেননি। এ ছাড়া মামলার ঘটনা সাজানো ও বানোয়াট। আসলে এ মামলার অভিযোগের বিষয়ে সাংবাদিক নাজমুল কিছুই জানেন না। তার বিরুদ্ধে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগও নেই মামলায়। যদিও পুলিশ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭(১) ধারায় মামলা করেছে, কিন্তু নিয়মানুযায়ী মামলার এজাহারে সাংবাদিক নাজমুলের বিরুদ্ধে সেই ধারার অভিযোগ নেই। এ কারণে এ মামলা চলে না। এ ছাড়া মামলার এজাহারের অভিযোগ ও রিমান্ড আবেদনের বক্তব্যে ব্যাপক গরমিল রয়েছে। মামলায় শ্রমিকদের উসকানি দেওয়ার কথা বলেছে পুলিশ। মাননীয় আদালত, একজন সাংবাদিক শিল্পবিরোধী কোনো কাজ করতে পারেন না। উদ্দেশ্যমূলকভাবে পুলিশ তার বিরুদ্ধে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে অস্পষ্ট অভিযোগ এনেছে। এ ছাড়া সুকৌশলে কারাগারে পাঠানোর উদ্দেশ্যে রিমান্ড-ফেরত প্রতিবেদনে পুলিশ বলেছে যে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে। আসলে রিমান্ডে নিয়ে তার কাছ থেকে কোনো তথ্যই পায়নি পুলিশ। উল্টো রিমান্ডে নেওয়ার পথে সাংবাদিক নাজমুলকে মারধর করা হয়েছে। তিনি বর্তমানে গুরুতর অসুস্থ। তাকে যে কোনো শর্তে জামিনে মুক্তির আদেশ দেওয়া হলে পলাতক হবেন না। উপযুক্ত স্থানীয় জামিনদার দেওয়া হবে এবং আদালতের আদেশ মোতাবেক তিনি নিয়মিত হাজিরা প্রদান করবেন।’ শুনানি শেষে বিচারক জামিন আবেদন নাকচ করে দেন। এরপর অসুস্থ নাজমুলের সুচিকিৎসার জন্য আবেদন করা হয়। পরে কারাবিধি অনুযায়ী নাজমুলকে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন বিচারক। আদালতে নাজমুল হুদার পক্ষে শুনানি করেন ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সাইদুর রহমান মানিক, আইনজীবী সৈয়দ শাহ আলম, আবদুল্লাহ আল মুনসুর রিপন, তুহিন হাওলাদার, মাসুদ হোসেনসহ ২০ জনের বেশি আইনজীবী।

 মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ২৩ ডিসেম্বর রাতে আশুলিয়া থানা পুলিশ বাদী হয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সাভার প্রতিনিধি নাজমুল হুদার বিরুদ্ধে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে মামলা করে। এর কিছুক্ষণ পরই তাকে গ্রেফতার করা হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর