রবিবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

পুরান ঢাকায় জমেছিল সাকরাইন উৎসব

রাশেদ হোসাইন

পুরান ঢাকায় জমেছিল সাকরাইন উৎসব

পুরান ঢাকায় গতকাল আয়োজিত ঘুড়ি উৎসবে কয়েকজন তরুণী —বাংলাদেশ প্রতিদিন

ব্যস্ত নগরীতে খোলা আকাশে তাকানোর সময়ই থাকে না। বড় বড় অট্টালিকার ভিড়ে নজর দেওয়া আরও কঠিন। এ অবস্থায় পুরান ঢাকাবাসী আয়োজন করেছিল ঘুড়ি-উৎসব খ্যাত সাকরাইন উৎসব। পৌষকে বিদায় জানাতে গতকাল এ উৎসবের আয়োজন করা হয়। এ দিন ভোর থেকে দেখা গেছে, হরেক রকম রঙিন আর নানান ডিজাইনের ছোট-বড় ঘুড়ি উড়ছে আকাশে। পুরান ঢাকার গোটা আকাশই এসব ঘুড়িতে বর্ণিল হয়ে ওঠে। শুধু ওড়া নয়, আকাশকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে এসব ঘুড়ির ছোটাছুটি কিংবা ওঠানামা। দেখা গেছে, কোনো ঘুড়ি মাটিতে লুটিয়ে পড়ছে, আবার কোনো ঘুড়ি আকাশে রাজত্ব করছে। কোনো ঘুড়ি দিগন্ত ছাড়িয়ে গেছে, আবার কোনো ঘুড়ি নীল আকাশে নৃত্য করছে। নিচে বাড়িঘরের ছাদ, মাঠ, রাস্তাঘাটও কম দর্শনীয় ছিল না। প্রতিটি বাড়ির ছাদে ছিলেন মানুষ। তাদের অনেকে ছিলেন ঘুড়ির নাটাই হাতে, আবার অনেকে দর্শক। নারী, শিশু, বৃদ্ধ, কিশোর কেও বাদ যাননি উৎসব থেকে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছিল বাংলা গানের তালে তালে ডিজে। বেলা যত বেড়েছে, উৎসবের মুখরতা ততই বেড়েছে। বেড়েছে আকাশে ঘুড়ির সংখ্যাও। ঘুড়ির এই খেলা সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি চলে। তারপর শুরু হয় আরেক পর্ব। দিনের আলো নিভতেই এলাকা সেজেছে নানান রঙের আলোকশয্যায়। আরও যোগ হয়েছে আতশবাজি, ফানুস ওড়ানো, আগুন নিয়ে খেলা, বড় বড় গ্যাস বেলুন উড়ানো, আকাশে উড়িয়ে দেওয়া হরেক রকম আলোর ফোয়ারা। যা অন্ধকার আকাশকে নানা আলোয় আলোকিত করে রাখে। সঙ্গে ডিজের তালে তালে চলে গান-নাচ। সন্ধ্যা থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত পুরান ঢাকার সূত্রাপুর, মিলব্যারাক, সদরঘাট, নবাবপুর, লালবাগ, চকবাজার, দয়াগঞ্জ, মুরগিটোলা, ধূপখোলা মাঠ, বংশাল, ওয়ারী, ইসলামপুর, শাঁখারীবাজার, তাঁতীবাজার, রায়শাহেব বাজার এলাকার মানুষ ঘটা করে এই সাকরাইন উৎসব পালন করেন। বাংলা পৌষ মাসের শেষের দিন ও মাঘ মাসের প্রথম দিন উদযাপন করা হয় পৌষসংক্রান্তি। বর্তমানে ‘পৌষসংক্রান্তি’ শুধু ‘সংক্রান্তি’ নামে পরিচিতি লাভ করেছে। আর পুরান ঢাকার মানুষ একে বলেন ‘সাকরাইন’। এ সময় লক্ষ্মীবাজার, শাঁখারীবাজার ঘুরে দেখা গেছে, কিছু বাড়িতে ভীষণ শব্দে বাদ্য বাজছে। ছাদ থেকে ঘুড়ি উড়াচ্ছেন মধ্যবয়স্করা। যুবকরা বাজনার সঙ্গে নাচছেন, গান গাইছেন। তাদের একজন শরিফ হোসেন জানান, ছাদে এমনভাবে স্পিকার, বাদ্য আর লাইটিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে—যাতে আশপাশের কেউ আওয়াজ আর আনন্দ থেকে বাদ না পড়েন। পুরান ঢাকার স্থায়ী বাসিন্দা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র কবির হোসেন বলেন, ‘আমি দশ বছর যাবৎ এই উৎসব পালন করে আসছি। এই উৎসব দল-মত-নির্বিশেষে সবার। সর্বস্তরের মানুষ এ উৎসবকে আপন করে নিয়েছেন।’

সর্বশেষ খবর