সোমবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

জলাবদ্ধতা ও ময়লায় ওষ্ঠাগত জীবনযাত্রা

ফারুক তাহের, চট্টগ্রাম

জলাবদ্ধতা ও ময়লায় ওষ্ঠাগত জীবনযাত্রা

চট্টগ্রাম মহানগরীর বৃহৎ ওয়ার্ড ২ নম্বর জালালাবাদ। ১৯৩০ সালের ২২ এপ্রিল ইংরেজদের বিরুদ্ধে মাস্টার দা সূর্যসেনের নেতৃত্বে এখানকার জালালাবাদ পাহাড়েই সংঘটিত হয়েছিল রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। ইতিহাসে যা ‘জালালাবাদ যুদ্ধ’ নামে পরিচিত। আবার ইসলামের জাগরণকালে সুদূর ইরান থেকে ধর্মপ্রচারের জন্য এখানে এসে আস্তানা গড়ে তুলেন মহান সাধক হজরত বায়েজিদ বোস্তামী (রহ.)। তার স্মৃতিধন্য বায়েজিদ বোস্তামী মাজারসংলগ্ন পুকুরে রয়েছে বিরল প্রজাতির কাছিম। যেগুলো বোস্তামী কাছিম হিসেবে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে বেশ সমাদৃত। এ ছাড়া চট্টগ্রাম সেনানিবাসের অবস্থানও এই ওয়ার্ডে। যার ফলে জালালাবাদ ওয়ার্ডের রয়েছে আলাদা গুরুত্ব। আবাসিক এলাকা ছাড়াও জালালাবাদে রয়েছে নাসিরাবাদ শিল্পাঞ্চল। চট্টগ্রামের বেশ কয়েকটি ভারী শিল্প-প্রতিষ্ঠান ও বাংলাদেশ চা বোর্ডের প্রধান কার্যালয় এই ওয়ার্ডে অবস্থিত।

অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও জনবহুল এই ওয়ার্ডে এখনো অনেক সমস্যা বিদ্যমান। প্রায় আড়াই লাখ লোকের বসবাস এই ওয়ার্ডে। শ্রমজীবী মানুষের সংখ্যাই বেশি। এই ওয়ার্ডের প্রধান সমস্যা জলাবদ্ধতা ও ময়লা-আবর্জনা। অক্সিজেন মোড়সহ সদ্য উদ্বোধন হওয়া বঙ্গবন্ধু এভিনিউর প্রায় পুরোটাই চলে গেছে গাড়ি পার্কিং ও ভাসমান হকারদের দখলে। পাহাড় কাটা ও অপরিকল্পিত আবাসিক স্থাপনা গড়ে ওঠার কারণে বৃহত্তর এই এলাকার প্রাকৃতিক পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

এলাকার সমস্যা ও সম্ভাবনা প্রসঙ্গে জালালাবাদ ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. শাহেদ ইকবাল বাবু বলেন, অপরিকল্পিত পাহাড় কাটার কারণে এই ওয়ার্ডে প্রধান সমস্যা জলাবদ্ধতা। এ ছাড়া দিনের বেলায় নিষেধ থাকার পরও ওয়ার্ডবাসী যত্রতত্র ময়লা ফেলে চলে যায়। যার কারণে এটাও বিশেষ সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত। লোকবলের অভাবের কারণে এখানে পর্যাপ্ত নাগরিক সেবা দেওয়া যাচ্ছে না উল্লেখ করে কাউন্সিলর বলেন, ওয়ার্ড কার্যালয়ের সহকারী ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীসহ এখানে সিটি করপোরেশনের কর্মচারী রয়েছে ৪৭ জন। লোকবল না বাড়িয়ে নাগরিক সেবা দেওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। ভাসমান শ্রমিকসহ এই ওয়ার্ডের বাসিন্দা প্রায় ৪ লাখ। ১৩ দশমিক পাঁচ বর্গ কিলোমিটার এলাকার এই ওয়ার্ডে ছিনতাই ও মাদকাসক্তদের সংখ্যাও উদ্বেগজনক। প্রায় দেড় বছর আগে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জালালাবাদ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ায় এলাকার অনেক সমস্যার সমাধান হয়েছে বলে জানান তিনি।

 এর মধ্যে সাধারণ জনগণের জন্ম সনদ ও জাতীয়তা সনদ বিনামূল্যে দেওয়া হয়। এ ছাড়া গত দেড় বছরে প্রায় সাড়ে চার লাখ টাকার সড়ক উন্নয়নের কাজ হয়েছে। আরও উন্নয়ন কাজ অব্যাহত রয়েছে।

জালালাবাদ ওয়ার্ডের বাসিন্দা শেরশাহ আবাসিকের চাকরিজীবী সাইদুল আলম বলেন, এই ওয়ার্ডে অনেক ভারী শিল্প-কারখানা থাকায় অনেক শ্রমিক, মেহনতি মানুষ এখানে বসবাস করেন। এ ছাড়া অনেক পোশাক শ্রমিক রাতের বেলা চাকরি করে ঘরে ফিরতে গেলে ছিনতাইকারীর শিকার হন। অথচ পুলিশ প্রশাসন রাত ১১টার পর কোনো দোকানপাট খোলা রাখতে দেয় না। এতে সাধারণ চাকরিজীবীদের হয়রানি বেড়েই চলছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর