সোমবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা
পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন

তিন মামলায় সাংবাদিক নাজমুলের রিমান্ড শুনানি আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক

পুলিশের দায়ের করা তিন মামলায় আজ বাংলাদেশ প্রতিদিনের সাভার প্রতিনিধি নাজমুল হুদার রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে। আশুলিয়ায় গার্মেন্ট কারখানার শ্রমিকদের দাবি এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে একাধিক রিপোর্ট করায় তার বিরুদ্ধে এ মামলা দায়ের করা হয়।

জানা গেছে, ঢাকার আশুলিয়া থানায় গত বছর দায়ের করা তিনটি মামলার এজাহারে সাংবাদিক নাজমুলের নাম ছিল না। এরপরও তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ওই তিন মামলায় মোট ১৯ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আইন বিশেষজ্ঞ ও মানবাধিকার কর্মীরা। তারা বলছেন, কেবল হয়রানি করার জন্যই  পুলিশ একের পর এক পেন্ডিং মামলায় নাজমুলকে জড়িয়ে দিচ্ছে। অন্যদিকে নাজমুলের অবিলম্বে মুক্তির দাবি করে বিবৃতি দিয়েছে সাংবাদিকদের আন্তর্জাতিক সংগঠন রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার। জার্মানভিত্তিক বার্তা সংস্থা ডয়েচে ভেলের এক প্রতিবেদনে সাভারের পুলিশের বিরুদ্ধে নাজমুল হুদার মামলার এজাহারে অসত্য তথ্য উপস্থাপনের অভিযোগ করা হয়েছে। এরই মধ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনসহ মোট ছয় মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে সাংবাদিক নাজমুলকে। নেওয়া হয়েছে কয়েক দফা রিমান্ডে। এতেও ক্ষান্ত হয়নি পুলিশ। আরও কয়েকটি পেন্ডিং মামলায় নাজমুলকে গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ডে নেওয়ার ভয় দেখানো হচ্ছে বলে তার পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন। এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. শাহ্দীন মালিক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এভাবে বারবার সাংবাদিককে রিমান্ডের আদেশ দেওয়া স্পষ্টতই রিমান্ড সংক্রান্ত সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা মানা হচ্ছে বলে প্রতীয়মান হয় না। প্রায়ই লক্ষ্য করছি, যেসব অপরাধ সংবাদমাধ্যমে আসছে, সেসব অভিযুক্তকে বিচারকরা নির্বিচারে রিমান্ডে দিচ্ছেন। এতে জনমনে প্রশ্ন উঠবে, বিচারকদের জন্য রিমান্ড সংক্রান্ত সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা বড়-না পুলিশের চাহিদা বড়।’ এর আগে এ মামলার শুনানিতে আইনজীবীরা আদালতকে বলেছিলেন, ‘এই মামলার অভিযোগের বিন্দুমাত্র সত্যতা নেই।

 বাংলাদেশ প্রতিদিন যে সংবাদ প্রকাশ ও প্রচার করেছে, সেই সংবাদের কারণে শ্রমিক আন্দোলনে উসকানি বা সরকারবিরোধী উসকানি দেওয়া হয়নি। যা ঘটনা শুধু সেটুকুই প্রচার করা হয়েছে। সাংবাদিকতার নীতিমালা অনুযায়ী ওই সংবাদে পুলিশ, বিজিএমইএ নেতাসহ নানা তরফের বক্তব্য যুক্ত রয়েছে। আসলে পূর্বের শত্রুতার কারণে অসাধু ব্যক্তিদের ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের জন্য শ্রমিক উসকানির অসিলা দিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করা হচ্ছে।’

প্রসঙ্গত, আশুলিয়ায় গার্মেন্ট কারখানার শ্রমিকদের দাবি এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে নাজমুল একাধিক রিপোর্ট করেন। এসব রিপোর্টের কারণে ক্ষুব্ধ হন পুলিশ কর্মকর্তারা। তারা নাজমুলকে আইনের আওতায় আনতে চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে গত ২৩ ডিসেম্বর তাকে আটক করা হয়। ২৪ ডিসেম্বর আশুলিয়া থানায় আইসিটি আইনে নাজমুলের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। ওই মামলায় এরই মধ্যে তাকে দুই দিনের রিমান্ডে নিয়েছে ঢাকা জেলা গোয়েন্দা পুলিশ।

নাজমুলের পরিবার বলছে, গ্রেফতারের আগের দিন ২২ ডিসেম্বর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে নাজমুলের কথা কাটাকাটি হয়। তারা নাজমুলকে গার্মেন্ট নিয়ে কোনো নিউজ না করতে হুমকি দেন। সব স্বাভাবিক রয়েছে- মর্মে নিউজ করতে পুলিশ কর্মকর্তারা নির্দেশ দেন। পরদিন আবার গার্মেন্ট নিয়ে নিউজ করলে ওই পুলিশ কর্মকর্তারা ক্ষিপ্ত হন। এক পর্যায়ে তাদের সঙ্গে আরেক দফা বাকবিতণ্ডা হয়। এরপর পুলিশের ওই কর্মকর্তারা নাজমুলকে শাসিয়ে চলে যান। ওই দিন সন্ধ্যায়ই নাজমুলকে আটক করা হয়।

এদিকে নাজমুলকে গ্রেফতারের পর একের পর এক রিমান্ড চেয়ে পুলিশ প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছে বলে মনে করছেন সাংবাদিক মহল ও সমাজের বিশিষ্টজনরা। তারা বলছেন, পুলিশের এ ধরনের আচরণে আমরা উদ্বিগ্ন। অবিলম্বে নাজমুলের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি করেন তারা। নাজমুলকে গ্রেফতারের কারণে শুধু দেশের ভিতরেই ক্ষোভের সৃষ্টি হয়নি, বিদেশি সাংবাদিক ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোও অবিলম্বে তার মুক্তি দাবি করেছে। 

এ বিষয়ে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক নূর খান বলেন, ‘আমরা দেখেছি সাংবাদিক নাজমুল কোনো মিথ্যা বা উদ্দেশ্যমূলক তথ্য পরিবেশন করেননি। বরং পুলিশই এজাহারে তথ্য বিকৃতি ঘটিয়েছে।’

উল্লেখ্য, রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানার বিরুদ্ধে হত্যা মামলায় নাজমুলের ধারণ করা ভিডিও ফুটেজই প্রধান সাক্ষ্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। রানা প্লাজা ধসের সময় নাজমুলের সাহসী সাংবাদিকতার জন্য তাকে নিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম তথ্যচিত্রও নির্মাণ করেছে।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর