মঙ্গলবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

শিক্ষা-স্বাস্থ্যসেবার বেহাল দশা

ফারুক তাহের, চট্টগ্রাম

শিক্ষা-স্বাস্থ্যসেবার বেহাল দশা

দেশের অন্যতম প্রধান পাইকারি বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের অবস্থান নগরীর ৩৫ নম্বর বক্সিরহাট ওয়ার্ডে। একসময় খাতুনগঞ্জকে বলা হতো ‘প্রাচ্যের ড্যান্ডি’। শুঁটকিপট্টি আছাদগঞ্জের অবস্থানও এ ওয়ার্ডে। দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রবেশদ্বার হিসেবেও চিহ্নিত এ ওয়ার্ড। তবে যানজট, জলাবদ্ধতা যেন এখানকার নিয়তি। সকাল থেকে রাতের অধিকাংশ সময় লেগে থাকে যানজট। অনেক সময় হেঁটে চলারও পথ থাকে না। ইদানীং আরেক সমস্যা ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দেখা দিয়েছে এ ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের কাছে। অমাবস্যা-পূর্ণিমার জোয়ারে ডুবে থাকে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ। বৃষ্টিতে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে। বিশেষ করে বর্ষাকালে ওয়ার্ডের দুই-তৃতীয়াংশ হাঁটু থেকে কোমর পানিতে সয়লাব হয়ে যায়। তখন ব্যবসায়ীদের সীমাহীন ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। লাখ লাখ টাকার পণ্যসামগ্রী পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে যায়। চাক্তাই খাল খনন ও অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে অতীতে সিটি করপোরেশন নিজস্ব ও এডিবির অর্থায়নে একাধিকবার উদ্যোগ নিলেও তা শেষ করেনি। ফলে চাক্তাই খাল এখন পরিণত হয়েছে আবর্জনার ভাগাড়ে। এর বাইরে প্রধান সমস্যার মধ্যে রয়েছে প্রতারণা, মাদক ব্যবসা, চোরাকারবার, ছিনতাই, চাঁদাবাজি।

এ ওয়ার্ডের চতুর্থ মেয়াদের বর্তমান কাউন্সিলর হাজী নুরুল হকও জলাবদ্ধতাকেই প্রধান সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে জলাবদ্ধতা এখানকার সাধারণ মানুষ থেকে ব্যবসায়ীদের নাকানি-চুবানি খাওয়াচ্ছে।’ এলাকাবাসীদের মতে, বক্সির হাট ওয়ার্ড ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য বিখ্যাত হলেও এখানকার মানুষ শিক্ষা-চিকিৎসার সুবিধাসহ অনেক কিছু থেকে বঞ্চিত। ৬ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ ওয়ার্ডে একটি কলেজ ও  সিটি করপোরেশন পরিচালিত একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থাকলেও সরকারি কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই। নেই লক্ষাধিক মানুষের চিকিৎসার সুব্যবস্থা। নিয়ামত-জব্বার স্বাস্থ্যকেন্দ্র নামে একটি হাসপাতাল থাকলেও সেখানে চিকিৎসক মাত্র একজন। অভিযোগ রয়েছে, তিনিও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসেন মর্জিমতো। করপোরেশনের অধিকাংশ ওয়ার্ডের মতো এখানেও রয়েছে ময়লা-আবর্জনা অপসারণে সমস্যা। রয়েছে সুপেয় পানি সংকট। ২ লাখ মানুষের আবর্জনা ফেলার জন্য ডাস্টবিন আছে ৪-৫টি। ময়লা-আবর্জনায় পুরো এলাকাটিই ডাস্টবিন বলে মনে হবে। ওয়ার্ডে নদীতীরবর্তী কিছু অংশ রয়েছে একেবারে উন্নয়নবঞ্চিত ও অবহেলিত। কাউন্সিলর নুরুল হক জানান, গত দেড় বছরে এখানে প্রায় ১০ কোটি টাকার উন্নয়ন হয়েছে। তবে এর মধ্যে ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে রাজাখালী খালের ওপর নির্মিত হয়েছে একটি সেতু। বাকি টাকায় রাস্তাঘাটের উন্নয়ন হয়েছে। উন্নয়ন বরাদ্দ অব্যাহত রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, যতই উন্নয়ন হোক না কেন কর্ণফুলীর ক্যাপিটাল ড্রেজিং না করে চাক্তাই খালের খনন কোনো কাজে আসবে না।

তাই আগে কর্ণফুলী ড্রেজিং করে চাক্তাই খাল খনন করলে জলাবদ্ধতা নিমেষে কমে আসবে।

খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বক্সিরহাট ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর জামাল হোসেন বলেন, ওয়ার্ডের সমস্যা সমাধানকল্পে গত পাঁচ বছরে চসিক মেয়র, জেলা প্রশাসক ও চট্টগ্রাম চেম্বারের সহযোগিতা চেয়ে ৮ দফা দাবি নিয়ে একাধিকবার বৈঠক হয়েছে এলাকাবাসী ও অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে। সবাই আশ্বাস দিলেও কাজের কাজ কিছুই করেননি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর