বৃহস্পতিবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

অপ্রাপ্ত বয়স্ক নারীর বিয়ের বিধান রেখেই বিল চূড়ান্ত

বাতিল দাবিতে নারী সমাবেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিশেষ প্রেক্ষাপটে অপ্রাপ্ত বয়স্ক নারীর বিয়ে দেওয়ার বিধান রেখেই বহুল আলোচিত ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন-২০১৬’ বিলটি চূড়ান্ত করেছে সংসদীয় কমিটি। আইনে বিয়ের জন্য ছেলের বয়স ২১ ও মেয়ের বয়স ১৮ বছর করা হলেও ‘বিশেষ কেইসের’ জন্য বিশেষ বিধান রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে বাল্যবিবাহ বন্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে আদালতকে।

সংসদ ভবনে গতকাল অনুষ্ঠিত নারী ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ বিলের রিপোর্ট চূড়ান্ত করা হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন কমিটির সভাপতি রেবেকা মমিন। বৈঠকে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ, ফজিলাতুন নেসা, আমিনা আহমেদ ও মনোয়ারা বেগম অংশ নেন। গত বছরের ৮ ডিসেম্বর বিলটি সংসদে উত্থাপন করেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি। গত ২৪ নভেম্বর মন্ত্রিসভায় আলোচিত ওই বিলটি অনুমোদন দেওয়া হয়। বিলে উল্লেখ করা হয়েছে, বিয়ের ক্ষেত্রে ছেলেদের বয়স ন্যূনতম ২১ ও মেয়েদের বয়স ১৮ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে। বিলে ‘তবে’ যুক্ত করে বিশেষ বিধানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, “এই আইনের অন্যান্য বিধানে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, কোনো বিশেষ প্রেক্ষাপটে অপ্রাপ্ত বয়স্ক কোনো নারীর সর্বোত্তম স্বার্থে, বিধি দ্বারা নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণক্রমে, বিবাহ সম্পাদিত হইলে উহা এই আইনের অধীন অপরাধ বলিয়া গণ্য হইবে না।”

সংসদে উত্থাপিত বিলের ৩ ধারায় বলা হয়েছে, সরকার বিধিমালা দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে জাতীয়, জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে সরকারি কর্মকর্তা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তা এবং স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তির সমন্বয়ে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ কমিটি গঠন করতে পারবে। এই আইনের বলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তারা বাল্যবিবাহ বন্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবেন।

এদিকে প্রস্তাবিত বাল্যবিয়ে নিরোধ আইনে মেয়েদের বিয়ের বয়স শিথিলের বিধান বাতিলের দাবিতে ঢাকায় সমাবেশ করেছে সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি। গতকাল বিকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানমের সভাপতিত্বে ওই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

আয়শা খানম বক্তব্যে বলেন, সরকার বিশেষ বিধান রেখে নারীর বিয়ের বয়স ১৮ রাখার কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। আন্তর্জাতিক যে নীতিগুলো, আইনগুলো আছে সেখানে কোনো শর্ত, কোনো বিধান নেই। ১৮ এর আগে কোনো বিয়ে নয়। মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী একটি শক্তি আজ দেশ পরিচালনা করছেন। কাজেই তাদের কাছে আমাদের প্রত্যাশা তারা কখনোই এমন সিদ্ধান্ত নেবেন না, যা নারীর জন্য হুমকি স্বরূপ।

সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সালমা আলী, ব্র্যাকের পরিচালক আন্না মিনজ, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীর, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, সুজনের সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, অ্যাকশন এইডের ফারাহ কবীর, গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে. চৌধুরী, নিজেরা করির সমন্বয়ক খুশী কবিরসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতারা বক্তব্য দেন।

বাল্যবিয়ে নিরোধ আইন ২০১৬-এর বিশেষ বিধান বাতিলের দাবিতে প্রস্তাব পাঠ করেন ‘উই ক্যান’ ক্যাম্পেইনের সমন্বয়ক জিনাত আরা হক।

গত ৮ ডিসেম্বর ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন-২০১৬’ বিলটি জাতীয় সংসদে উত্থাপন করা হয়।

সর্বশেষ খবর