সোমবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

বিশৃঙ্খলা গণপরিবহনে

সিটিং সার্ভিসের নামে চিটিংবাজি

জয়শ্রী ভাদুড়ী

রাজধানীর গণপরিবহন ব্যবস্থায় কোনো শৃঙ্খলা নেই। এগুলো চলছে যে যার মতো। মানা হচ্ছে না কোনো নিয়ম-কানুন। অদৃশ্য কারণে বিআরটিএ বা ট্রাফিক বিভাগও এদের বিরুদ্ধে তেমন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। সবমিলিয়ে জনসাধারণের যাতায়াতের এ মাধ্যমে বিরাজ করছে হ য ব র ল অবস্থা।

ভুক্তভোগীরা জানান, স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচলের মতো রাজধানীতে নেই কোনো পরিবহন ব্যবস্থা। বিআরটিসির এসি বাসেও গাদাগাদি করে যাত্রী তোলা হয়। নগর পরিবহনের নানারকম চিটিংবাজিতে নাকাল নগরজীবন। সিটিং সার্ভিসের নামে চলছে চিটিংবাজি। মোবাইল কোর্ট বসে, মন্ত্রী রাস্তায় নামেন- কিন্তু সুফল পায় না নগরবাসী। এক ভুক্তভোগী শারমিন নাহার জানান, সকাল ৮টায় মিরপুর-১০ থেকে আগারগাঁও যাওয়ার জন্য তিনি মিনি পরিবহনের গাড়িতে ওঠেন। তার কাছে থেকে ১৫ টাকা ভাড়া নেওয়া হয়। ১০ টাকার জায়গায় ১৫ টাকা কেন- জিজ্ঞেস করলে বাসের সুপারভাইজার ‘সিটিং সার্ভিস’ লেখা দেখিয়ে দেন। কিন্তু কিছুক্ষণ পর পর থামিয়ে গাদাগাদি করে যাত্রী ওঠানোর ফলে সিট না পাওয়ায় এবং ‘কম স্টপেজের’ নামে বেশি স্টপেজ দেওয়ায় যাত্রীদের সঙ্গে হেলপারের বাকবিতণ্ডা হয়। সরজমিনে রাজধানীর মিরপুর, ফার্মগেট, বাড্ডা, পল্টন, মতিঝিল এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, মিরপুর থেকে গুলশানগামী বাসগুলোতে যাত্রীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হচ্ছে উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। সেখানে লেখা রয়েছে ‘নতুন বছরের শুরু থেকে বাস সিটিং সার্ভিসে চলবে এবং এতে স্টপেজ থাকবে কম। এই বাসে হাফ পাস নাই।’ বাস্তবে এসব বিজ্ঞপ্তিকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের ফাঁদ হিসেবে ব্যবহার করছেন পরিবহন মালিক এবং শ্রমিকরা। লক্কড়-ঝক্কড়, সিট ভাঙা, ছাড়পোকা ভর্তি এসব বাসের রাতারাতি সিটিং সার্ভিস বনে যাওয়ায় আগের তুলনায় যাত্রীদের ভাড়া গুণতে হচ্ছে দ্বিগুণ। কুড়িল বিশ্বরোড থেকে বাড্ডাগামী তুরাগ পরিবহনের একটি বাসে সিটিং সার্ভিস লেখা থাকলেও রড ধরে দাঁড়িয়ে যেতে দেখা যায় যাত্রীদের। তাদেরকে লোকাল সার্ভিস দিলেও ভাড়া নেওয়া হচ্ছে সিটিং সার্ভিসের।

মিরপুর থেকে গুলিস্তান ও আজিমপুরগামী বিকল্প, শিখর, বিহঙ্গ, সেফটি, মিরপুর লিংকসহ বেশ কয়েকটি বাসকে সিটিং সার্ভিস বলা হলেও তিল ধারণের জায়গা রাখা হয় না ভিতরে। গতকাল এ অবস্থায় পড়া এক যাত্রী ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী কামরুল হাসান বাড্ডা থেকে এয়ারপোর্টগামী একটিভ পরিবহনের বাসে উঠেছিলেন। অর্ধেক ভাড়া দিতে গেলে তার সঙ্গে কথাকাটি শুরু হয় বাসের হেলপারের। ‘যোগাযোগমন্ত্রী শিক্ষার্থীদের অর্ধেক ভাড়া নিতে বলেছেন’ বলে এ শিক্ষার্থী বোঝানোর চেষ্টা করলেও হেলপার বলেন, ‘আমাদের নিয়ম শেখাতে আসবেন না।’ এক পর্যায়ে হাতাহাতি বেধে যায় যাত্রীর সঙ্গে। যাত্রীদের এসব দুর্ভোগের ব্যাপারে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সংস্থার মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, গণপরিবহনে ‘সিটিং সার্ভিস’ বলে কোনো আইনগত বিধান নেই। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির চেয়ারম্যান (বিআরটিএ) মো. মশিয়ার রহমান বলেন, রাজধানীতে ‘সিটিং সার্ভিস’ বলে কোনো পরিবহন ব্যবস্থা নেই। এসব প্রতারণা বন্ধে আমরা প্রতিদিন রুট পারমিট চেক করছি এবং মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছি। যাত্রীদের কাছ থেকে যেন কোনোভাবেই অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা না হয়- এ বিষয়ে আমরা সব সময় সতর্ক আছি।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর