শনিবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

স্বস্তিতে ‘ঢাকা চাকা’র যাত্রী

জয়শ্রী ভাদুড়ী

স্বস্তিতে ‘ঢাকা চাকা’র যাত্রী

ভিড়, গাদাগাদি, চলন্ত বাসে ওঠা এবং বাস চালু অবস্থায় নামতে গিয়ে আহত হওয়া, ভাড়া নিয়ে হাতাহাতির মতো ঘটনা রাজধানীর গণপরিবহনের প্রতিদিনের চিত্র। কিন্তু এই দৃশ্যপট পাল্টে রাজধানীর নতুনবাজার থেকে কাকলী এবং গুলশান লিংকরোড থেকে শুটিং ক্লাব রুটে চলাচল করছে এলিট সার্ভিস ‘ঢাকা চাকা’।

গত বছরের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার পর কূটনৈতিক এই এলাকায় বন্ধ করে দেওয়া হয় গণপরিবহন। হামলার পর নিরাপত্তার কড়াকড়িতে থাকা গুলশান এলাকার জন্য বিশেষ বাস সার্ভিস পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রথম দফায় ১০টি বাস নিয়ে এ সেবা শুরু হলেও বর্তমানে ৩০টি বাস চলছে। এর মধ্যে নতুনবাজার রুটে ২০টি এবং শুটিং ক্লাব রুটে চলছে ১০টি বাস। যাত্রীদের পরিবহন সুবিধা নিশ্চিত করতে নতুন আরও ১০টি বাস নামছে শুটিং ক্লাব রুটে। ইতিমধ্যে পাঁচটি বাস যাত্রী পরিবহনে যুক্ত হয়েছে এবং আরও বাকিগুলো নামবে শিগগিরই। সরেজমিন গতকাল ঢাকা চাকা-এর দুটি রুটে গিয়ে দেখা যায়, কাউন্টার থেকে ১৫ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে সুশৃঙ্খলভাবে দাঁড়িয়ে আছেন যাত্রীরা। বাস এলে হেলপার টিকিট চেক করে যাত্রী উঠিয়ে নিচ্ছেন ৩৬ আসনের এসি বাসগুলোতে। একটি বাসে সিট পূর্ণ হলে যাত্রী চড়তে পারবেন পরের বাসটিতেই। এভাবে চক্রাকারে ঘুরতে থাকে বাস সার্ভিসটি। বাসে যাত্রীদের এবং চালকের আসনের মাঝে রয়েছে কাচের দেয়াল। এতে চালকের মনোযোগে কোনো চিড়। আর যাত্রীদেরও সহ্য করতে হয় না গাড়ির ইঞ্জিনের শব্দ এবং গরম হাওয়া। যাত্রী সেবার বিষয়ে জানতে চাইলে বীর উত্তম লে. আনোয়ার গার্লস কলেজের শিক্ষার্থী ফাহমিদা সুলতানা বলেন, আগে প্রতিদিন এই রুটে ভিড় ঠেলে যেতে হতো। ভিড় বেশি থাকলে অনেক সময় যৌন হয়রানির ঘটনাও ঘটত। দেখার কেউ ছিল না। কিন্তু নতুন এই বাস সার্ভিসে ভিড় নেই আর বাসের কর্মচারীদের ব্যবহারও ভালো। বাস জটে পড়লেও টিভি দেখে বা ওয়াইফাই ব্যবহার করে   সময় কাটিয়ে দেওয়া যায় আনন্দে। আরও বেশি বাস সার্ভিসে যুক্ত করার দাবি করে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ফিরোজ কবির বলেন, অফিসে যাওয়া এবং আসার সময় বাসের জন্য দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এ জন্য অনেক সময় অফিসে পৌঁছাতে দেরি হয়ে যায়। তাই আরও কিছু বাস নামালে ভোগান্তি কমত যাত্রীদের। যাত্রী আকলিমা আক্তার বলেন, এই বাসের কর্মচারীদের মধ্যে নিয়ম-কানুন আছে। আমি ভুল করে আমার পার্সটা বাসে ফেলে রেখে গিয়েছিলাম। পরে ‘ঢাকা চাকা’র কাউন্টারে এসে জিজ্ঞেস করতেই তারা ব্যাগে থাকা দুই হাজার টাকাসহ আমার হাতে বুঝিয়ে দিল। ঢাকা শহরে এমন ঘটনা অবিশ্বাস্য। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে ডিএমপির সহায়তায় এবং গুলশান, বারিধারা, বনানী ও নিকেতন সোসাইটির উদ্যোগে বিশেষ এই বাস সেবা পরিচালনা করছে নিটল মটরস। এই বাস সেবার পাশাপাশি এই কূটনৈতিক এলাকাতে চালু আছে হলুদ রিকশা সার্ভিস। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যাত্রীসেবা নিশ্চিত করতে আমরা বাসের চালক-হেলপার এবং রিকশা চালকদের ওরিয়েন্টেশন করেছি। এরপরও যদি কেউ যাত্রীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার বা অতিরিক্ত যাত্রী তোলার চেষ্টা করে তাহলে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার উদাহরণও আছে। সার্ভিসকে আরও বেশি উন্নত এবং যাত্রীদের কাছে জনপ্রিয় করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

সর্বশেষ খবর