শিরোনাম
রবিবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

লাগামহীন চালের দাম

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা ও চট্টগ্রাম

লাগামহীন চালের দাম

চালের মূল্য বৃদ্ধির লাগাম কোনোভাবেই টেনে ধরা যাচ্ছে না।  এখন চালকল বা খামার পর্যায় থেকে শুরু করে পাইকারি-খুচরা সব পর্যায়েই চালের দাম বাড়তি অবস্থায় রয়েছে। এরফলে রাজধানীর বাজারে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। বিশেষ করে  সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। কিন্তু চালের দাম কেন বাড়ছে- এ প্রশ্নে উত্তর খুঁজতে গিয়ে দেখা গেছে দাম বৃদ্ধির মূল কলকাঠি নাড়ছেন চালকল মালিকরা। কারণ কৃষকের ঘর থেকে ধান চলে যাওয়ার পর ফড়িয়াদের মাধ্যমে সেগুলো যায় মিল মালিকদের হাতেই। তারপর মিল মালিকরা সেগুলো গুদামজাত করে কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করেন। যার ফলে ধানের দাম বেড়ে যায়। ধানের দাম বাড়ানোর পর তারা চালের দাম বাড়িয়ে দেন। চালের দাম বৃদ্ধি সম্পর্কে কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সঙ্কট না থাকার পরও যখন চালের দাম বাড়ছে- তখন বুঝতে হবে নিশ্চয়ই এর পেছনে কারসাজি রয়েছে। এই কারসাজি  রোখার দায়িত্ব কিন্তু সরকারের।’ গতকাল চালের বাজারে দেখা গেছে, ৫০ কেজির প্রতি বস্তায় পাইকারি পর্যায়ে বেড়েছে ১০০ টাকা। আর খুচরা পর্যায়ে কেজি প্রতি বেড়েছে ৩-৪ টাকা। এভাবে পাইকারি বাজারে নিম্নমানের নাজিরশাইলের বস্তা ২৪৫০ টাকার বদলে ২৫৫০ টাকা হয়েছে। আর খুচরা বাজারে ৫০ টাকার নিম্নমানের নাজিরশাইল ৫৩ টাকা হয়েছে।

এদিকে চট্টগ্রামের বৃহত্তম চালের পাইকারি বাজার চাক্তাইয়ে মোটা বেতি চালের (৫০ কেজি) বস্তা বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার টাকা। এক মাস আগে ছিল এক হাজার ২০০। আর বেতি-২৮ জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ২০০ টাকা। এক মাস আগে ছিল এক হাজার ৩০০। বেতি-২৯ চাল বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ১০০ টাকা, আগে বিক্রি হতো ১ হাজার ৪০০ টাকা। মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৩০০ টাকা। এক মাস আগেও ছিল ১ হাজার ৬০০ টাকা। ভারতীয় বেতি বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫০০ টাকা। যা আগে ছিল এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৩০০ টাকা। 

এভাবে চালের মূল্যে অস্থিরতা বিরাজ করছে। এতে নাভিশ্বাস উঠেছে সাধারণ মানুষের। ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে সীমিত ও নিম্ন আয়ের মানুষের। প্রায় দুই মাসের ব্যবধানে প্রতি বস্তায় দাম সর্বোচ্চ ৮০০ টাকা বেড়েছে।

অভিযোগ আছে, আওয়ামী লীগ  ১৯৯৬, ২০০৮ এবং ২০১৪ সালে সরকার গঠনের পর চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখে। অসাধু ব্যবসায়ীর কারসাজি সত্ত্বেও দাম বাড়তে দেয়নি। এবার অসাধু ব্যবসায়ীদের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।  চট্টগ্রাম চাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি এনামুল হক বলেন, চাল আমদানিতে ২৫ শতাংশ কাস্টমস ডিউটি (শুল্ক) এবং ৩ শতাংশ রেগুলেটরি ডিউটি (আরডি) নির্ধারিত রয়েছে। সরকারের উচিত আমদানি শুল্ক তুলে নেওয়া। এতে বাজারে চালের দাম সহনীয় পর্যায়ে আসবে। নইলে চালের দাম কমার সম্ভাবনা নেই।

বাংলাদেশ মেজর ফ্লাওয়ার মিলের ব্যবস্থাপক মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, সাধারণ মানুষ কেনেন এমন চালের দামই ঊর্ধ্বমুখী। ভারত থেকে আমদানি কমে যাওয়ায় চালের দাম বেড়েছে। তবে সরকার চাল আমদানির ঘোষণা দিলেই আবারও আগের অবস্থায় ফিরে আসবে।

তবে ক্রেতাদের অভিযোগ, আমন মৌসুমে বাম্পার ফলন হওয়ায় চালের বাজার স্বাভাবিক থাকার কথা। কিন্তু মজুদদার ও চাতাল মালিকদের অসাধু চক্রের কারণে চালের দাম বাড়ছে। সরকার যদি অসাধু এই চক্রকে নিয়ন্ত্রণ না করে তাহলে চালের মূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করা সম্ভব হবে না। 

পক্ষান্তরে চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, বর্তমান অবস্থা বিরাজ করলে আগামী এক মাসের মধ্যেও চালের দাম কমার সম্ভাবনা নেই। তবে সরকার যদি দ্রুত সময়ে চালের আমদানি শুল্ক কমায় তাহলে দাম কমবে।   

চাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চট্টগ্রামে চাল আসে নওগাঁ, মহাদেবপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ, দিনাজপুর, পাবনা ও ঈশ্বরদী থেকে। এর মধ্যে আশুগঞ্জ থেকে আসে বেতি ও ইরি, দিনাজপুর থেকে মিনিকেট, পাইজাম, চিনিগুঁড়া ও কাটারিভোগ জাতের আতপ এবং নওগাঁ, পাবনা, ঈশ্বরদী থেকে সিদ্ধ জাতের চাল। প্রতিদিন ৪৫০ থেকে ৫০০ টন চাল চাক্তাইয়ের আড়তগুলোতে আসে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর