সোমবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

জ্ঞান আহরণে সাড়া জাগাল ঢাবির ‘ভার্চুয়াল ক্লাসরুম’

ফরহাদ উদ্দীন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) প্রতিষ্ঠিত হয়েছে চারটি অত্যাধুনিক ভার্চুয়াল ক্লাসরুম। এসব ক্লাসরুমের মাধ্যমে পৃথিবীর যে কোনো প্রান্ত থেকে ক্লাস পরিচালনা সম্ভব হচ্ছে। তথ্যের আদান-প্রদান ঘটছে বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে। এর মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যেও জ্ঞান বিতরণে আন্তসম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান সরকারের ‘উচ্চশিক্ষা মানোন্নয়ন প্রকল্পের (হেকেপ)’ আওতায় এ ধরনের ক্লাসরুম নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। বর্তমানে বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি করে ভার্চুয়াল ক্লাসরুম রয়েছে। এগুলো অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল দ্বারা আন্তসম্পর্কযুক্ত। যে কারণে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসরুমে বসে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস নেওয়া সম্ভব হচ্ছে। বর্তমানে দেশে ৩৪টি ‘ভার্চুয়াল ক্লাসরুম’ রয়েছে। তবে ঢাবি, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় এবং যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া অন্যগুলোয় এই ক্লাসরুমের কার্যকর  ব্যবহার হচ্ছে না। সংশ্লিষ্টরা জানান, ভার্চুয়াল ক্লাসরুম বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মধ্যে জ্ঞান বিনিময় সহজ করে দিয়েছে। শিক্ষার্থীরা বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের লেকচার শুনতে পারছেন। যে কোনো জায়গা থেকে ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে শিক্ষকরা ক্লাস নিতে পারছেন। এ ছাড়া এই ক্লাসরুমে লেকচারের রেকর্ড ভবিষ্যতে ব্যবহারের জন্য ডকুমেন্ট হিসেবে সংরক্ষণের ব্যবস্থাও রয়েছে। ঢাবির উপাচার্য দফতরসংলগ্ন পুরাতন সিনেট ভবনে প্রথম ভার্চুয়াল ক্লাসরুম প্রতিষ্ঠিত হয়। এর নামকরণ হয় ‘অধ্যাপক আবদুল মতিন চৌধুরী ভার্চুয়াল ক্লাসরুম’। ক্লাস ছাড়াও এটিতে বিভিন্ন কনফারেন্স, মিটিং বা প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হয়। এখানে ৯০ জনের বসার সুব্যবস্থা রয়েছে। ক্লাসরুমটিতে চারটি ডিসপ্লে ডিভাইস রয়েছে। যার মধ্যে দুটি প্রজেক্টর ও দুটি মনিটর। একটি প্রজেক্টরের মাধ্যমে দূরের দর্শকদের (রিমোট অডিয়েন্স) এবং অন্যটির মাধ্যমে কাছের দর্শকদের (লোকাল অডিয়েন্স) দেখানো হয়। আরও রয়েছে তিনটি ক্যামেরা। দুটি ক্যামেরার মাধ্যমে অডিয়েন্সকে দেখানো হয় এবং একটির মাধ্যমে ডকুমেন্ট প্রদর্শন করা হয়। এ ছাড়া ক্লাসরুমটিতে একটি ইন্টারঅ্যাকটিভ হোয়াইট বোর্ড আছে, যেখানে হাতের আঙ্গুল দিয়ে লেখা যায়। এই বোর্ডটি সরাসরি ল্যাপটপের সঙ্গে সংযুক্ত। ল্যাপটপ দিয়ে এটিকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আবার বোর্ডের টার্চস্ক্রিনের মাধ্যমে ল্যাপটপকেও নিয়ন্ত্রণ করা যায়। সম্পূর্ণ ক্লাসরুমটি শীততাপ নিয়ন্ত্রিত। এছাড়াও রয়েছে একটি চমৎকার সাউন্ড সিস্টেম। যে কারণে ক্লাসরুমের যে কোনো জায়গায় দাঁড়িয়ে কথা বললে তা দূরের দর্শকরা শুনতে পান। এ ছাড়া শব্দদূষণ কমাতে ব্যবহার করা হয়েছে অ্যাকুয়িস্টিক প্যানেল।

ঢাবিতে অন্য তিনটি ক্লাসরুমের মধ্যে একটি ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদে, একটি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে এবং অন্যটি উচ্চতর সামাজিক বিজ্ঞান গবেষণা সেন্টারে অবস্থিত। এসব ক্লাসরুম নির্মাণে টেকনিক্যাল কনসালট্যান্ট হিসেবে কাজ করেছেন ঢাবির কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক মামুনুর রশিদ। বর্তমানে তিনি এটি ব্যবহার করে ঢাবিতে অবস্থান করে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় এবং যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি কোর্সের পাঠদান করেন। তিনি বলেন, এ ধরনের ক্লাসরুমের মাধ্যমে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা অনেক দূর এগিয়ে যাচ্ছে। এটি ব্যবহার করে যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট রয়েছে তারা অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মাধ্যমে পাঠদানের ব্যবস্থা করতে পারছে। এ ছাড়া ঢাকার বাইরে যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে রিসোর্সের সংখ্যা অনেক কম, তারা এই ক্লাসরুমের মাধ্যমে রিসোর্স শেয়ার করতে পারছে।

ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, এ ধরনের ক্লাসরুম একবিংশ শতাব্দীর বাস্তবতা। এর ফলে তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে ক্লাসরুমে বসেই অন্য জায়গার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে জ্ঞান বিনিময় সম্ভব হচ্ছে। এ ছাড়া উচ্চতর কোর্সের বিভিন্ন বিষয়ে দেশের বা বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে শেয়ার করাও সম্ভব হচ্ছে। ভবিষ্যতে এই ক্লাসরুমের সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর