শুক্রবার, ১০ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

পানির জন্য হাহাকার

ব্যবস্থা নিচ্ছে না ওয়াসা

নিজস্ব প্রতিবেদক

পানির জন্য হাহাকার

পানির জন্য হাহাকার করছেন রাজধানীবাসী। গরমের তীব্রতা না ছড়াতেই বিভিন্ন এলাকায় তীব্র পানি সংকট দেখা দিয়েছে। পানি না পেয়ে বাইরে থেকে মিনারেল ওয়াটার কিনে অনেকে গৃহস্থালির কাজকর্ম সারছেন। পানির তীব্র সংকটে অনেক বাড়ির ভাড়াটিয়া বাসা ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এতে বিপাকে পড়েছেন বাড়িওয়ালারা। অনেক বাড়িওয়ালা ওয়াসা থেকে পানির গাড়ি কিনে এনে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছেন। এ ছাড়া অনেক এলাকায় পানির সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও পানিতে রয়েছে শ্যাওলার দুর্গন্ধ। পানির সঙ্গে আসছে ময়লাও। অনেক পাম্পে কার্যক্ষমতা কমে যাওয়া, পানির লাইন উঁচু-নিচু হওয়া, স্যুয়ারেজ লাইনে সমস্যাসহ নানা কারণেই পানির সংকট দেখা দিচ্ছে। পানির এমন তীব্র সংকট দেখা দিলেও সমাধানে ওয়াসা কোনো ব্যবস্থাই নিচ্ছে না।

রাজধানীর মধুবাগ, ঝিলপাড়, হাজী চান মিয়া লেন, মীরবাগ, নয়াটোলা, পেয়ারাবাগসহ মগবাজারের বেশির ভাগ অংশেই পানির জন্য হাহাকার করছেন সেখানকার বাসিন্দারা। সেখানে ওয়াসার লাইনে দিনে, রাতে কোনো সময়ই পানি আসছে না। রান্না, খাওয়া তো দূরের কথা, বাথরুমে যাওয়ার মতো পানিও পাচ্ছেন না এসব এলাকার বাসিন্দারা। কেউ কেউ মিনারেল ওয়াটার কিনে পানির আপাত সমস্যা সমাধান করলেও নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষের জীবন চালানোই কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকেই গোসল ও কাপড় কাচার জন্য চলে যাচ্ছেন দৃষ্টিনন্দন হাতির ঝিলে। পানির এমন তীব্র সংকটে অনেক বাড়ির ভাড়াটিয়ারা বাসা ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ভাড়াটিয়া ধরে রাখতে প্রচণ্ড সমস্যায় পড়েছেন বাড়িওয়ালারা। কোনো কোনো বাড়িওয়ালা ওয়াসা থেকে পানির গাড়ি কিনে এনে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছেন। এসব এলাকার বাসিন্দারা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি থেকে ওয়াসায় পানি সমস্যা সমাধানের জন্য ধরনা দিলেও কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। ওয়াসা সমস্যা সমাধানে কোনো পদক্ষেপই নিচ্ছে না। মগবাজারের হাজী চান মিয়া লেনের বাসিন্দা সুরাইয়া বেগম বলেন, ‘পানির জন্য হাহাকার চলছে এখানে। দিনে বা রাতে কখনোই ওয়াসার লাইনে পানি আসছে না। রান্না-খাওয়া তো দূরের কথা, বাথরুমে যাওয়ার পানিও পাওয়া যাচ্ছে না। গোসল, কাপড় ধোয়া হাতির ঝিলের পানি দিয়ে সারছি। আর রান্নার জন্য মিনারেল ওয়াটার কিনে চলছি। কিন্তু এভাবে আর কত দিন!’  

পেয়ারাবাগের এক বাসিন্দা জানান, এক মাস ধরে তাদের এলাকায় ওয়াসার পানির সংকটসহ পানিতে দুর্গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। পানির রং কখনো লালচে আবার কখনো কালো। এ পানি খাওয়া তো দূরের কথা, গোসল ও কাপড় ধুলে তাতেও দুর্গন্ধ থেকে যায়। এ পানি ব্যবহার করায় শিশুরা ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। মধুবাগের স্থায়ী বাসিন্দা শরিফুল ইসলাম বলেন, দুই মাস ধরে পানির তীব্র সংকট পোহাতে হচ্ছে। পানির সংকটে এখানকার বাসিন্দারা হাতির ঝিলের পানি দিয়ে প্রয়োজনীয় কাজকর্ম সারছেন। ওয়াসাকে বারবার জানালেও তারা সমস্যা সমাধানে কোনো ব্যবস্থাই নিচ্ছে না। এদিকে মিরপুরের সেনপাড়াতেও পানির সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে। এজন্য মাঝেমধ্যেই পানির সংকট পোহাতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। মেরাদিয়া, গোড়ান, দক্ষিণ বাসাবো, নন্দীপাড়া, খিলগাঁওয়ের কিছু অংশ, কমলাপুরের কিছু এলাকা, শাহজাহানপুর, শান্তিবাগসহ বিভিন্ন এলাকায় ওয়াসার পানির সরবরাহের স্বল্পতা রয়েছে। শাহজাহানপুরের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘দিনে একবার ওয়াসার পানি সরবরাহ করা হয়। এভাবে ট্যাংকে পানি সংরক্ষণ করে দিনাতিপাত করছি। বেশির ভাগ সময়ই পানির সংকটে ভুগতে হচ্ছে। রাজধানীর বনশ্রীতে পানির সংকটের পাশাপাশি সাপ্লাইয়ের পানিতে রয়েছে শ্যাওলার দুর্গন্ধ। ঢাকার ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শ্যামলী, মোহাম্মদপুর, তেজগাঁও, কাঁঠালবাগান, পল্টন, সেগুনবাগিচাসহ বিভিন্ন এলাকায় ওয়াসার সরবরাহকৃত পানিতে শ্যাওলার দুর্গন্ধ প্রকট। বেশির ভাগ এলাকায় সরবরাহকৃত পানি খাওয়ার অনুপযোগী বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। তেজগাঁওয়ে পশ্চিম তেজতুরী বাজারের মারুফ বিল্লাহ মাসুম জানান, ওয়াসার পানি সরবরাহে বিঘ্নতা না ঘটলেও পানি খাওয়ার অনুপযোগী। শ্যাওলার গন্ধ বেশি। পানি ফুটিয়েও শ্যাওলার গন্ধ দূর করা যাচ্ছে না।

শ্যাওলার গন্ধের মাত্রাটা এতটাই বেশি যে, ফোটানোর পর পিউরিফাইং মেশিনেও দুর্গন্ধ পুরোপুরি দূর হয় না। এসব এলাকার বাসিন্দা স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে বাজারের মিনারেল পানির ওপর নির্ভরশীল হচ্ছেন।

পানি সংকট, ওয়াসার পানিতে দুর্গন্ধ ও ময়লা আসাসহ ভুক্তভোগীদের নানা অভিযোগের ব্যাপারে জানতে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি একটি মিটিংয়ে রয়েছেন বলে ফোন কেটে দেন।

ভুক্তভোগীরা বলছেন, ওয়াসা কর্তৃপক্ষ বরাবরই পানি সরবরাহ নিয়ে অবহেলা করে আসছে। পানির জন্য হাহাকার হলেও ওয়াসা তা সমাধানে কোনো পদক্ষেপই নিচ্ছে না।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর