সোমবার, ২০ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

রোকেয়ার ভিসিসহ পাঁচজনের নামে চার্জশিট

অর্থের বিনিময়ে জনবল নিয়োগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর

দুর্নীতির মামলায় রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) সাবেক উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ড. আবদুল জলিল মিয়াসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদক সমন্বিত রংপুর জেলা কার্যালয়ের উপ-সহকারী পরিচালক আকবর আলী গতকাল দুপুরে রংপুরের মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে অভিযোগপত্র দেন। অপর আসামিরা হলেন, বেরোবির উপ-রেজিস্ট্রার শাহজাহান আলী মণ্ডল, উপ-পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) এটিজিএম গোলাম ফিরোজ, সহকারী রেজিস্ট্রার মোর্শেদ উল আলম রনি ও সহকারী পরিচালক (অর্থ ও হিসাব) খন্দকার আশরাফুল আলম। এদের মধ্যে আবদুল জলিল মিয়া কানাডায় বসবাস করলেও অন্যরা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত আছেন। অভিযোগপত্রে বলা হয়, সাবেক উপাচার্য ড. আবদুল জলিল মিয়া দায়িত্বপালনকালে নিয়োগ সংক্রান্ত যাচাই কমিটির সভাপতি হিসেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও এটিজিএম গোলাম ফিরোজ, মোর্শেদ উল আলম রনি, খন্দকার আশরাফুল ইসলামসহ অননুমোদিত ৩৪৯ জনকে নিয়োগ দেন। সরকার বাজেট বরাদ্দ না দেওয়া সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য খাত থেকে তাদের বেতন-ভাতা দেওয়া হয়। আসামি উপ-রেজিস্ট্রার শাহজাহান আলী মণ্ডল ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এবং বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট সভার সদস্য সচিবের দায়িত্বে থেকে জনবল নিয়োগসহ উপাচার্যের সব অন্যায় কাজে সহযোগিতা করেন। আসামি এটিজিএম গোলাম ফিরোজের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্রে বলা হয়, তিনি আগের বেসরকারি চাকরির অভিজ্ঞতা দিয়ে উপাচার্য আবদুল জলিল মিয়াকে প্ররোচিত করে প্রয়োজনীয় যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা ছাড়াই পিএস টু পিডি পদে (৯ম গ্রেডে) এডহক ভিত্তিতে নিয়োগ পান। ২০ দিন পর উপ-পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) ৫ম গ্রেড পদে এডহক নিয়োগ এবং পরে উপ-পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) পদে নিয়োগ পান।

আসামি মোর্শেদ উল আলম রনির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ হলো, তিনি ২০০৭ সালের নভেম্বরে এমএসসি পাস করেন। কিন্তু ২০০৭ সাল থেকে ২০০৯ সালের ২৫ মার্চ পর্যন্ত এসোড নামে একটি এনজিওতে চাকরি করেন। ভুয়াভাবে পাঁচ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতার সনদ দিয়ে অবৈধভাবে সহকারী রেজিস্ট্রার পদে আবেদন করেন। বিজ্ঞপ্তির শর্ত অনুযায়ী পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা না থাকলেও তিনি সহকারী রেজিস্ট্রার পদে নিয়োগ পান। আর আসামি খন্দকার আশরাফুল আলমের বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো— ন্যূনতম তিন বছরের অভিজ্ঞতা, কম্পিউটার পরিচালনায় বাস্তব অভিজ্ঞতা, বয়সসীমা অনূর্ধ্ব ৩৫ বছর এবং স্নাতক (সম্মান) না থাকা সত্ত্বেও তিনি তথ্য গোপন করে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা পদে চাকরি নেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আকবর আলী জানান, মামলাটি তদন্ত করে এর অভিযোগপত্র অনুমোদনের জন্য ঢাকায় দুদক কার্যালয়ে পাঠানো হয়। গত ৮ মার্চ দুদক ঢাকার কার্যালয় অভিযোগপত্র দাখিলের জন্য অনুমোদন দেয়। আসামিদের বিরুদ্ধে ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় ক্ষমতার অপব্যবহার এবং দণ্ডবিধি ৪০৯ ও ১০৯ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে বলে জানান তিনি।

২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর দুদক সমন্বিত রংপুর জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আবদুল করিম রংপুর কোতোয়ালি থানায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আবদুল জলিল মিয়াসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় ইউজিসি এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতি ২০১৩ সালের ৪ মে উপাচার্য আবদুল জলিলকে তার পদ থেকে অব্যাহিত দেন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে ফিরে যান। পরে জলিল মিয়া গোপনে দেশ ত্যাগ করে কানাডায় চলে গেছেন।

সর্বশেষ খবর