বুধবার, ২২ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

তীব্রতর হচ্ছে সুপেয় পানির সংকট

আজ বিশ্ব পানি দিবস

নিজস্ব প্রতিবেদক

নদীমাতৃক বাংলাদেশে এখন প্রায় দুই কোটি ১০ লাখ মানুষ সুপেয় পানি থেকে বঞ্চিত (সূত্র: ওয়াটার এইড বাংলাদেশ)। আর হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদন বলছে, পানিতে আর্সেনিক দূষণের জন্য দেশের প্রায় দুই কোটি মানুষ ঝুঁকিতে আছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নদ-নদীর গতিপথ বদলে যাওয়া ও খাল-বিল, জলাশয় ভরাটের ফলে পানির উৎসস্থল কমে আসছে। অতিরিক্ত পানি উত্তোলনের কারণে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে সুপেয় পানির উৎসগুলোতে তীব্র সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। সুপেয় পানির সংকট নিয়ে যখন গোটা বিশ্ব উদ্বিগ্ন, তখন বিষয়টি বিশেষজ্ঞদেরও দুশ্চিন্তায় ফেলছে। তারা আশঙ্কা করছেন, নগর জীবনে যদি এ সমস্যার দ্রুত সমাধান করা না যায় তবে সমস্যা আরও তীব্র হয়ে উঠবে।

পানি সংকটের জন্য কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করেছেন বিশেষজ্ঞরা। এগুলো হলো— যত্রতত্র সেচ পাম্প বসানো, তিস্তায় ভারতের পানি প্রত্যাহার, ভূগর্ভ থেকে যে পরিমাণ পানি উত্তোলন হচ্ছে তার সমপর্যায়ের পানি রিচার্জ না হওয়া, পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়া, জলবায়ু পরিবর্তন ও বৃক্ষ নিধন ইত্যাদি। অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে নদীতে লবণাক্ততা বাড়ছে। উপকূলীয় এলাকার বিভিন্ন চর-যেমন দাকোপ, লালুয়া ইত্যাদি এলাকায় লবণাক্ত পানি বেড়ে গেছে। আর এসব এলাকার মানুষও অপরিষ্কার পানি পান করে ঘন ঘন অসুস্থ হয়ে পড়ছে। জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন এলাকায় দিন দিন সুপেয় পানির সংকট তীব্র হচ্ছে। বিশেষ করে শহরাঞ্চলে এ সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করছে। এমনকি নগরজীবনে পানি পান ও ব্যবহারের জন্য যে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে তার বিশুদ্ধতা নিয়েও সন্দেহ আছে। রাজধানী ঢাকায় পানি সংকট জনজীবনকে বিষিয়ে তুলেছে। বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে ঢাকায় পানি সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করে। আর পানির চাহিদা মেটাতে অনেকেই ভ্যান গাড়িতে ড্রামে ড্রামে পানি কিনে প্রয়োজনীয় কাজ সারেন। পিপাসা মেটাতে কেনেন বোতলজাত পানি। ঢাকা ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে, নগরীতে প্রতিদিন পানির চাহিদা ২৫০ কোটি লিটার। কিন্তু সরবরাহ করা হয় ২০০ থেকে ২০৫ কোটি লিটার। অর্থাৎ প্রায় ৪৫ কোটি লিটার ঘাটতি থেকে যায়। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জরিপে জানা যায়, ঢাকায় এক দশকে আড়াই মিটার হারে ভূগর্ভের পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। মূলত ওয়াসার ৮৬ শতাংশ পানি আসে ভূগর্ভ থেকে। বাকি ১৪ শতাংশ আসে নদীর পানি শোধন করে। কিন্তু যেভাবে নদ-নদীগুলোতে পানি দূষণ বাড়ছে এতে এ পানিও পান অযোগ্য হয়ে পড়ার আশঙ্কা আছে। আর পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় গভীর নলকূপগুলোর উত্তোলনও কমে যাচ্ছে। বিশেষ করে যাত্রাবাড়ী, নারিন্দা, সায়েদাবাদ, চাঁদনীঘাট, রামপুরা, তাঁতিবাজার, নয়াপল্টন, ওয়ারী, রাজারবাগ, মুগদা, গোপীবাগ, পানিটোলা, স্বামীবাগ, নবাবপুর, মিটফোর্ড, ইসলামপুর, বংশাল, শাখারীবাজার, মিরপুর, খিলগাঁও ইত্যাদি এলাকায় গ্রীষ্মকাল এলেই পানির সংকট দেখা দেয়। ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. তাকসিম এ খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ভূগর্ভের পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় এ পানি সংকট তৈরি হচ্ছে। আমাদের পরিকল্পনা আছে ভূগর্ভের পানির ব্যবহার ৭০ শতাংশ কমিয়ে আনার। এ অবস্থায় আজ বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশেও পালিত হবে বিশ্ব পানি দিবস। দেশে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালিত হবে। এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘বর্জ্য পানি’।

এ উপলক্ষে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এ ছাড়া টিআইবি জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধনের আয়োজন করেছে।  

সর্বশেষ খবর