বুধবার, ২২ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

এখনো আঁতকে ওঠেন আহতরা

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

এখনো আঁতকে ওঠেন আহতরা

সিলেটের হজরত শাহজালাল (রহ.) মাজার প্রাঙ্গণে তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা মামলায় ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত মুফতি হান্নানসহ তিন জঙ্গির মধ্যে দেলোয়ার হোসেন রিপন রয়েছেন সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে। আর মুফতি হান্নান ও শরীফ শাহেদুল আলম ওরফে বিপুল রয়েছেন কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি জেলে। প্রায় ১৩ বছর আগে ঘটে যাওয়া এই হামলার কথা স্মরণ হলে এখনো আঁতকে উঠেন শরীরে গ্রেনেডের স্প্লিন্টার বয়ে বেড়ানো আহতরা। আর হামলার পর সন্দেহভাজন হিসেবে যাদেরকে আটক করে রিমান্ডের নামে চালানো হয়েছিল অমানবিক নির্যাতন তারাও আতঙ্কিত হয়ে উঠেন পুরনো স্মৃতি মনে হলে। এ ঘটনার পর হামলাকারীদের রক্ষা করতে তদন্তের নামে যেসব কর্মকর্তা নিরপরাধ লোকজনকে আটক করে জঙ্গি বানানোর চেষ্টা চালিয়েছিলেন তাদেরও বিচার চান সংশ্লিষ্টরা।

২০০৪ সালের ২১ মে জুমার নামাজ পড়ে বের হওয়ার সময় হজরত শাহজালাল (রহ.) মাজার প্রাঙ্গণে তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীকে লক্ষ্য করে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। হামলায় নিহত হন তিনজন। আনোয়ার চৌধুরীসহ আহত হন অন্তত ৭০ জন। এ ঘটনার পর সে সময়কার মহানগর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান সেলিম, মহানগর যুবলীগের বর্তমান আহ্বায়ক আলম খান মুক্তি, যুগ্ম আহ্বায়ক সেলিম আহমদ সেলিম, মুন্সীপাড়ার ব্যবসায়ী ও যুবলীগ নেতা মো. আবদুস সালাম লাকিসহ যুবলীগ ও ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন নেতাকে আটক করে পুলিশ। রিমান্ডে নিয়ে জয়েন্ট ইন্টারগেশন সেলে নির্যাতন করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আদায়ের চেষ্টা চালানো হয়। প্রায় চার বছর মামলার ঘানি টানার পর তাদের অব্যাহতি দেয় আদালত।

রিমান্ডে নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে মুন্সিপাড়ার আবদুস সালাম লাকি বলেন— ‘আদালত আমার ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করার পর আমাকে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকায় জয়েন্ট ইন্টারগেশন সেলে। সেখানে আমার ওপর চালানো হয় অমানবিক নির্যাতন। স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য ইলেকট্রিক শক দেওয়া হতো। এখনো বৃষ্টি হলে বা ঠাণ্ডা পড়লে শরীর অবশ হয়ে যায়।’

একইভাবে নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক আলম খান মুক্তি বলেন— ‘ব্রিটিশ হাইকমিশনারের ওপর হামলার প্রতিবাদে আমরা নগরীতে মিছিল বের করি। এই অপরাধে আমিসহ কয়েকজনকে আটক করা হয়। সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে থানায় আমাদের ওপর যেভাবে নির্যাতন চালানো হয় তা ভাষায় প্রকাশের নয়। ওই সময় যারা জঙ্গিদের আড়াল করতে আমাদের ধরে নিয়ে নির্যাতন করেছিল জঙ্গিদের সঙ্গে তাদেরও বিচার চাই আমরা।’

গ্রেনেড হামলায় ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর সঙ্গে আহত হন সিলেটের দুই সাংবাদিক। তাদের একজন হচ্ছেন স্থানীয় ‘দৈনিক সিলেটের হালচাল’ সম্পাদক মো. ছুরত আলী। ওইদিনের বর্ণনা দিতে গিয়ে চোখে পানি চলে আসে তার। বলেন, ‘আনোয়ার চৌধুরীর সঙ্গেই নামাজ পড়ে মসজিদ থেকে বের হচ্ছিলাম। মাজার প্রাঙ্গণে আসার পরই বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। এরপর আর কিছু বলতে পারি না। পরে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিজেকে দেখতে পাই। আমার মাথা ও মুখে স্প্লিন্টার বিদ্ধ হয়। এখনো সেই স্প্লিন্টার নিয়ে ঘুরে বেড়াই। রাতে ঘুমের মধ্যে এই বিভীষিকাময় স্মৃতির কথা মনে হলে আঁতকে জেগে উঠি।’

মামলায় ফাঁসির রায় হওয়া তিন জঙ্গির মধ্যে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন দেলোয়ার হোসেন রিপন। রিভিউ আবেদন খারিজের কপি আদালত থেকে কারাগারে এসে পৌঁছলে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইবে কি-না তা রিপনকে জিজ্ঞাসা করা হবে বলে জানিয়েছেন সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. ছগির আলী। প্রাণভিক্ষা চাইলে তার আবেদন রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হবে। আর না চাইলে জেল কোড অনুযায়ী ২১ দিনের চেয়ে কম নয় এবং ২৮ দিনের চেয়ে বেশি নয় এরকম সময়ের মধ্যে ফাঁসি কার্যকরের তারিখ ধার্য করে সরকারের কাছে পাঠানো হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর