শিরোনাম
শনিবার, ২৫ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

হঠাৎ কেন লাগামহীন চালের বাজার

এক সপ্তাহে বেড়েছে ৩ থেকে ৫ টাকা

মোস্তফা কাজল

হঠাৎ কেন লাগামহীন চালের বাজার

বাজার দর

অস্থির রাজধানীর চালের বাজার। গত এক সপ্তাহে মানভেদে চালের দাম কেজিতে বেড়েছে তিন থেকে পাঁচ টাকা। গত তিন-চার মাসে মোটা চাল ৫০ কেজির বস্তাপ্রতি বেড়েছে ৫০০-৬০০ টাকা। এতে সীমিত আয়ের মানুষের জীবনযাত্রায় মারাত্মক ছন্দপতন ঘটেছে। চলতি বোরো মৌসুমে দেশে মোটা ও মাঝারি মানের ধান আবাদ তুলনামূলক কম হয়েছে। এমনটাই জানিয়েছেন রাইস মিল মালিক ও কৃষকরা। তবে অভিজ্ঞ মহলের মতে, বাজারে সরকারের নিয়ন্ত্রণ না থাকায় রাইস মিল মালিক-ব্যবসায়ীরা ভোক্তাদের জিম্মি করে রেখেছে। এ ছাড়া গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারে বেড়েছে সব ধরনের মাছ, মাংস ও সবজির দাম। বাজারে গিয়ে গরু, খাসি ও মুরগির মাংস এবং মাছ কিনতে আগের চেয়ে প্রতি কেজিতে ২০ থেকে ৪০ টাকা বেশি দাম দিতে হচ্ছে ক্রেতাদের। সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় দেশের সাধারণ জনগোষ্ঠীর অবস্থা ভালো যাচ্ছে না।

তিন-চার মাস ধরে মোটা চালের বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। আর এ মোটা চালের ভোক্তা দেশের বৃহত্তর সাধারণ জনগোষ্ঠী। সরকারি গুদাম, মোকাম ও পাইকারি বাজারে বিপুল পরিমাণ চাল মজুদ রয়েছে। এ অবস্থায় বাজারে মোটা চালের দাম কোনোভাবেই বাড়ার কথা নয়। গুটিকয়েক মিল মালিকের কারসাজিতে চালের বাজার অস্থির হয়ে উঠছে এমন অভিযোগ পাইকারি ব্যবসায়ীদের। সরেজমিন রাজধানীর পুরান ঢাকার বাবুবাজার ও বাদামতলীর চালের বিভিন্ন আড়ত ঘুরে দেখা গেছে, গতকাল প্রতি কেজি মোটা চাল সর্বোচ্চ ৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এক সপ্তাহ আগে একই বাজারে একই মানের প্রতি কেজি চাল বিক্রি হয়েছে ৩৫ থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে ৩৬ টাকায়। এ হিসাবে এক সপ্তাহের ব্যবধানে নিত্যপণ্যটির দাম কেজিতে চার থেকে পাঁচ টাকা  বেড়েছে। বাজারে মোটা চালের সঙ্গে তাল মিলিয়ে হাঁটছে মিনিকেটও। গতকাল প্রতি কেজি মিনিকেট বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে এর দাম কেজি প্রতি ৪৬ টাকা ছিল। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ৪ টাকা দাম বেড়েছে মিনিকেট চালের। রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাব অনুযায়ী, দেশের বাজারে বর্তমানে প্রতি কেজি মোটা চাল ৩৭-৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত বছর একই চাল কেজিপ্রতি ৩২-৩৪ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। এ ছাড়া বোরো চাল বাজারে আসতে এখনো এক মাস সময় লাগতে পারে। তবে এখন থেকেই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে মোটা চালের দাম বাড়ানো হচ্ছে বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের। তারা বলছেন, যেসব ব্যবসায়ী ও মিল মালিকের পর্যাপ্ত মূলধন ও প্রয়োজনীয় সংরক্ষণাগার রয়েছে মূলত তারাই দাম বাড়াতে ভূমিকা রাখছেন। দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বাবুবাজারের রশিদ রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী মনির হোসেন জমাদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণে মোটা চাল মজুদ আছে। এ অবস্থায় কোনোভাবেই পণ্যটির দাম বাড়ার কথা নয়। গুটিকয়েক অসাধু ব্যবসায়ীর যোগসাজশেই মোটা চালের দাম বাড়ছে। পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাজারে মোটা চালের দর ওঠানামা করে মিল মালিকদের প্রভাবে। বর্তমানে মোটা চাল তৈরির উপযোগী ধানের মজুদ তাদের হাতেই বেশি। বেশি পরিমাণে শুল্ক আরোপ করায় ভারত থেকে চাল আসা অনেকটাই কমেছে। এ অবস্থায় ব্যবসায়ী ও কৃষকরা আশঙ্কা করছেন, চলতি বোরো মৌসুমে মোটা চাল উৎপাদন কমতে পারে। বিষয় দুটি মাথায় রেখে এখন থেকেই চালের দাম বাড়াতে শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। চাল ব্যবসায়ী নিরোধ চন্দ্র সাহা বলেন, এক-দেড় মাসের মধ্যে বোরো মৌসুমের চাল বাজারে আসবে। মৌসুমের শেষের দিকে প্রতিবারই মোটা চালের দাম সামান্য বাড়ে। তবে এবার আগেভাগেই বাড়তে শুরু করেছে। এ দর বৃদ্ধিকে অস্বাভাবিক হিসেবে অভিহিত করেছেন তিনি। এদিকে চালের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধির কথা বলছেন বাংলাদেশ রাইস মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি জাকির হোসেন রনি। তিনি বলেন, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে চাল পরিবহন বাবদ ব্যয় বেড়েছে। এ কারণে দাম কিছুটা বেশি।

ঊর্ধ্বমুখী মাছ, মাংস ও সবজি : এক সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারে বেড়েছে সব ধরনের মাছ, মাংস ও সবজির দাম। গরু, খাসি ও মুরগির মাংস এবং মাছ কিনতে আগের চেয়ে ২০ থেকে ৪০ টাকা বেশি দাম দিতে হচ্ছে ক্রেতাদের। তবে অপরিবর্তিত দামে বিক্রি হচ্ছে ব্রয়লার মুরগির দাম। গতকাল রাজধানীর মিরপুর ও রামপুরা কাঁচাবাজার ঘুরে দোকানি ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে। সরেজমিন গতকাল আরও দেখা যায়, গত সপ্তাহের চেয়ে বিভিন্ন ধরনের সবজি বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ১৮ থেকে ২০ টাকায়। গত সপ্তাহে আলুর দাম ছিল ১৬ থেকে ১৮ টাকায়। বেগুন গেল সপ্তাহে ৪০ টাকায় কেজি বিক্রি হলেও গতকাল ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় কিনতে হয়েছে। ফুলকপি ও বাঁধাকপি আকারভেদে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়, শালগম ২৫ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি করছেন দোকানিরা। করলা প্রতি কেজি ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হলেও এ সপ্তাহে দাম বেড়ে হয়েছে ৭০ টাকায়। শিম প্রকারভেদে প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৫০, টমেটো ৩০ থেকে ৪০, গাজর ২০, মূলা ৩০, শসা ও খিরা ৩০ থেকে ৪০, পেঁপে ২০, মিষ্টি কুমড়া প্রতি পিস ১৫ থেকে ২০, বরবটি ৬০ থেকে ৭০,  ঢেঁড়স ৬০, কচুরলতি ৫০, মটরশুটি ৭০, কাঁচা কলা প্রতি হালি ৩২, লেবু প্রতি হালি ২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর কাঁচামরিচ ৬০ থেকে ৭০ টাকায়, প্রতি আঁটি লাউ শাক ২৫, লাল শাক, পালং শাক ১০, পুঁই শাক ও ডাঁটা শাক ২০-৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এসব সবজির প্রতিটিতেই ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা। মিরপুর কাঁচাবাজারে জিনাত সুলতানা নামে একজন ক্রেতা বলেন, গতকালও লাউ শাক ১৫ থেকে ২০ টাকায় কিনেছি। কিন্তু আজ ৩০ টাকার কম পাওয়াই যাচ্ছে না। তবে বিক্রেতারা বলছেন, মৌসুম পরিবর্তনের কারণে এ বাড়তি দাম। বাজারে নতুন সবজি আসা শুরু করলে দাম কিছুটা কমে যাবে। এদিকে এ সপ্তাহে দেশি পিয়াজ প্রকারভেদে কেজিপ্রতি ৩০ টাকায় এবং ভারতীয় পিয়াজ ২০ থেকে ২৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাছ বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি রুই ৩৬০ থেকে ৪০০, কাতলা ৪০০, তেলাপিয়া ১৩০ থেকে ২০০, সিলভার কার্প ১৮০ থেকে ২০০, আইড় ৪৫০ থেকে ৬০০, মেনি মাছ ৩৫০ থেকে ৪০০, বাইলা মাছ প্রকারভেদে ২৫০ থেকে ৪০০, বাইন মাছ ৪০০ থেকে ৫০০, গলদা চিংড়ি ৪৫০ থেকে ৮০০, পুঁটি ১৮০ থেকে ২০০, পোয়া ৪০০ থেকে ৪৫০, মলা ৩২০ থেকে ৩০০, পাবদা ৫০০ থেকে ৬০০, বোয়াল ৪৫০ থেকে ৫০০, শিং ৪০০ থেকে ৭০০, দেশি মাগুর ৪০০ থেকে ৭০০, শোল মাছ ৩৫০ থেকে ৫০০, পাঙ্গাশ ১৪০ থেকে ১৬০, চাষের কই ২০০ থেকে ২৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৭৫০ টাকায়। এ সপ্তাহে ডিমের দামও অপরিবর্তিত রয়েছে বলে জানান দোকানিরা।

তারা জানান, ফার্মের লাল ডিম প্রতি হালি ৩০ থেকে ৩২ টাকা এবং দেশি মুরগির ডিম ৪৬ টাকা ও হাঁসের ডিম ৪৪-৪৬ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে দাম বেড়েছে গরুর ও খাসির মাংসের। রামপুরা বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস  ৫০০ টাকায় বিক্রি হলেও খাসির মাংস কিনতে হচ্ছে ৭৫০ টাকায়। যা গত সপ্তাহে ৪৮০ এবং ৬৫০ টাকায় পাওয়া যেত। গত সপ্তাহের তুলনায় ব্রয়লার মুরগিও প্রতি কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে। গেল সপ্তাহে ১৫০ টাকায় বিক্রি হলেও গতকাল তা ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া এক কেজি ওজনের প্রতি পিস কক মুরগি ২৩০ টাকা থেকে ২৬০ টাকায় ও দেশি মুরগি ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে জানান বিক্রেতা রফিক। তিনি বলেন, পাইকারি বাজারে দাম বাড়ার কারণে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। রাজধানীর খোলাবাজারে সয়াবিন লিটারপ্রতি বোতলজাত তেল ১০৫-১০৭ ও খোলা ৮৫ থেকে ৯০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর