শুক্রবার, ৭ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

সাধারণ আসন এখন ‘পুরুষ সিট’ মহিলা যাত্রীদের ভোগান্তি কমেনি

ভ্রাম্যমাণ আদালতকে নজরদারির আহ্বান

জিন্নাতুন নূর

রাজধানীতে চলাচলকারী বাসে মহিলা যাত্রীদের সংরক্ষিত আসনে পুরুষ যাত্রীদের বসার বিষয়ে নতুন আইনের খসড়া অনুমোদন দেওয়ার পরও মহিলা যাত্রীদের ভোগান্তি কমেনি। নগরীর বাসগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনসহ (বিআরটিসি) হাতে গোনা কিছু সিটিং সার্ভিসের বাসে যাতায়াতকারী নারীরা সংরক্ষিত আসনে বসার সুযোগ পেলেও লোকাল বাস ও মিনিবাসগুলোতে সংরক্ষিত আসনে বসতে পারছেন না। কর্মজীবী নারী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়ে শিক্ষার্থী বাসে সাধারণ সিট ছাড়া মহিলা সিটে আসন পেলেও অসচেতন ও স্বল্প আয়ের নারীরা বিশেষ করে শ্রমিকরা এখনো সংরক্ষিত আসনে বসার সুযোগ পাচ্ছেন না। এর ওপর আইনটি অনুমোদন দেওয়ার পর সচেতন পুরুষ যাত্রীরা মহিলা সিটে বসছেন না ঠিকই কিন্তু একই সঙ্গে কিছু পুরুষ আবার নারীদের দিকে নতুন আইনটি নিয়ে ব্রিবতকর মন্তব্য ছুঁড়ে দিচ্ছেন। বহু পুুরুষ যাত্রী নারীরা সাধারণ সিটে ‘কেন বসবেন’, সেই আসনগুলো ‘পুরুষ সিট’ বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। নতুন আইনের খসড়া অনুমোদনের এক সপ্তাহের মাথায় এসেও সাধারণ যাত্রীদের অনেকে এ সম্পর্কে কিছু জানেন না। রাজধানীর কয়েকটি রুটের যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাসে নারীদের জন্য নির্ধারিত আসনের কথা তারা জানলেও নতুন আইনে মহিলা সিটে বসলে যে জেল ও অর্থদণ্ডের বিধান করা হয়েছে সে সম্পর্কে তারা জানেন না। তবে রাজধানীর লোকাল বাসগুলোতে সংরক্ষিত মহিলা আসনের কথা উল্লেখ থাকলেও সেখানে নারীরা বসার সুযোগ পাচ্ছেন না। মিরপুর ১ নম্বর থেকে প্রেস ক্লাবগামী এভারেস্ট বাসের যাত্রী ফাতেমা ইয়াসমিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এই বাসে মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত আসন থাকলেও এখনো বাসের সেই আসনগুলোতে পুরুষরা বসছেন। আর এই বাসের ৫টি সংরক্ষিত আসন পূর্ণ হয়ে গেলে আর কোনো নারী যাত্রীকেও হেলপার বাসে উঠাচ্ছেন না। এভারেস্ট বাস সার্ভিসের হেলপারদের কাছে এর কারণ জানতে চাইলে তাদের একজন বলেন, ‘মহিলা যাত্রী তুললে ঝামেলা বেশি হয়। আর দাঁড়ানো যাত্রীও বেশি তুলতে পারি না।’ এর ফলে এভারেস্টের মতো বাসগুলোতে নারীরা এখনো আসন না পেয়ে দাঁড়িয়েই গন্তব্যে যাচ্ছেন। আর নির্ধারিত আসনে বসার কথা বললেই পুরুষ যাত্রীদের অনেকে এ ব্যাপারে কিছু জানেন না আবার কেউ মহিলাদের ‘পুরুষ সিট’ এ বসা উচিত না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।  মিরপুর থেকে গুলিস্তানগামী বিআরটিসির বাসগুলোতে অবশ্য নারীদের জন্য নির্ধারিত আসনগুলো ছেড়ে পুরুষরা সাধারণ সিটে বসছেন। এমনও দেখা গেছে যে, কোনো পুরুষ যাত্রী মহিলা সিটে জায়গা পেয়ে বসলেই অন্য পুরুষরা তাকে সেই আসন ছেড়ে অন্য সিটে যাওয়ার অনুরোধ করছেন। এজন্য যে নতুন আইন হয়েছে সে বিষয়েও তারা সেই যাত্রীকে সচেতন করে দিচ্ছেন। শ্যাওড়াপাড়া ১০ নম্বর বাসস্ট্যান্ডে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী তানজিনা রহমান বলেন, ‘সকালে বিআরটিসি’র বাসে উঠে নারীদের নির্ধারিত স্থানে নারীদেরকেই বসতে দেখেছি। এমনকি অনেক সময় সিট খালি হয়ে গেলেও পুরুষ যাত্রীরা এসব সিটে বসছেন না। তবে নতুন আইনটি হওয়ার পর মহিলা যাত্রীদের এক ধরনের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে। পুরুষ যাত্রীরা নারীদের বাসে ওঠা নিয়ে নানা ধরনের বিরূপ মন্তব্য ও হাসিঠাট্টা করছেন। এমনকি সাধারণ সিটে নারীদের বসা নিয়েও তারা অসন্তোষ প্রকাশ করছেন। সাধারণ সিটগুলোকে পুরুষ যাত্রীরা ‘পুরুষ সিট’ বলে দাবি করছেন বলে তানজিনা জানান। উল্লেখ্য, নারী, শিশু, প্রতিবন্ধী ও বয়স্কদের জন্য সংরক্ষিত আসনে কোনো পুরুষ বা অন্য যাত্রী বসতে পারবেন না বলে নতুন আইনের খসড়া অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এতে বলা হয়েছে, যদি কেউ বসেন বা পুরুষ যাত্রীদের বসার অনুমতি দেন তবে এক মাসের কারাদণ্ড বা পাঁচ হাজার টাকা বা উভয়দণ্ডে জরিমানা দিতে হবে।

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের নতুন আইনের খসড়াটিতে সম্প্রতি মন্ত্রিসভা সম্মতি দিয়েছে। বিআরটিসি সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে রাজধানীতে ১৯টি মহিলা বাস সার্ভিস চালু আছে। তবে নগরীর মহিলা যাত্রীদের তুলনায় এই সংখ্যা খুবই অপ্রতুল।  

সর্বশেষ খবর