মঙ্গলবার, ১১ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

ভারত থেকে প্রাপ্তি ক্ষুদ্র ভগ্নাংশ : মান্না

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভারত থেকে প্রাপ্তি ক্ষুদ্র ভগ্নাংশ : মান্না

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে এ দেশের মানুষের প্রধান মনোযোগ ছিল তিস্তা চুক্তি নিয়ে। সীমান্তে বাংলাদেশি হত্যা বন্ধ, বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চুক্তির প্রত্যাশাও ছিল। কিন্তু এসব নিয়ে চুক্তি বা কোনো সমঝোতা স্মারক হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে প্রাপ্তির পরিমাণ অপ্রাপ্তির তুলনায় খুব ক্ষুদ্র ভগ্নাংশ। সামগ্রিকভাবে প্রাপ্তির পরিমাণ খুবই কম। তিনি গতকাল বিকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে নাগরিক ঐক্যের সংবাদ সম্মেলনে বক্তৃতা করছিলেন। মান্না বলেন, চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকের সংখ্যার ব্যাপারে অস্পষ্টতা দেখেছি আমরা। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল ২২টি, কিন্তু এরপর আমাদের পররাষ্ট্র সচিব জানান সংখ্যাটি ৩৬। লিখিত বক্তব্যে মান্না বলেন, মমতা ব্যানার্জি আমাদের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার পর সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, তিস্তায় পানি নেই এবং সেই পরিপ্রেক্ষিতে অন্য নদীর পানি নিয়ে তিনি বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। আমরা মনে করি তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা পাওয়া ছাড়া আর কোনো ধরনের বিকল্প প্রস্তাব কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

পশ্চিমবঙ্গের গজলডোবা পয়েন্টে আসা তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে কথা বলছি আমরা, এটা কোনোভাবেই পানির ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিত করবে না। গঙ্গা চুক্তির মতো একটা সে ফ কাগজের চুক্তি হোক তিস্তা নিয়েও, সেটা আমরা চাই না। আমরা অভিন্ন ৫৪টি নদীর পানির অংশ চাই।

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক বলেন, প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে স্বাক্ষরিত তিনটি সমঝোতা স্মারক এর মধ্যে প্রধানটি সম্পর্কে সে ফ এটুকু জানানো হয়েছে, এটা ‘বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা রূপরেখা’ সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক। কোনো সমঝোতা স্মারক সম্পর্কে প্রয়োজনীয় ন্যূনতম তথ্য সরবরাহ না করা অসম চুক্তির ইঙ্গিত দেয়।

তিনি বলেন, দেশের প্রতিরক্ষা কৌশল, জাতীয় নিরাপত্তা খুব স্পর্শকাতর বিষয়, তাই দেশগুলো এটা রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তার মধ্যে রাখে। অন্য কোনো রাষ্ট্রের সঙ্গে বিনিময় করে না। কিন্তু আমরা এটি করলাম। অস্ত্র কেনার জন্য ৫০০ কোটি ডলারের ঋণ দেওয়া হচ্ছে। এ ঋণ কী খুব জরুরি ছিল? এটা কীভাবে ব্যয় হবে সেটাও স্পষ্ট নয়। আমরা কত টাকার অস্ত্র কিনব, কোন কোন অস্ত্র কিনব সেটা হওয়া উচিত আমাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত। কিন্তু আমরা দেখছি এখানে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ২০০১ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর গড়ে ১০০ জন মানুষ বিএসএফের হাতে খুন হয়েছে। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত প্রতি বছর গড়ে ৩৫ জন মানুষ খুন হচ্ছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে সীমান্ত হত্যা বন্ধে কোনো আশু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।

তিনি বলেন, নানা রকম অশুল্ক বাধা দিয়ে আমাদের পণ্য ভারতে ঢুকতে না দেওয়ার অভিযোগ আমাদের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সব সময়ই শুনি আমরা। এখন তার সঙ্গে শুল্ক বাধাও (এন্টি-ডাম্পিং ট্যারিফ) বসানো শুরু করেছে ভারত। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে এটা নিয়ে আলোচনা হবে। কিন্তু আমরা এমন কোনো খবর দেখছি না।

নৌপথ উন্নয়নের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে যেটা ভারতের স্বার্থে তাদের করিডর দেওয়ার প্রয়োজনেই করা হয়েছে বলে অনুমান করা যায়। প্রায় বিনা মাশুলে দেওয়া এই করিডরের ব্যাপ্তি যত বাড়বে আমাদের দেশের ক্ষতি তত বৃদ্ধি পাবে।

তৃতীয় ঋণ সহায়তার ৪৫০ কোটি ডলারের ঋণ কোন কোন খাতে দেওয়া হবে এবং এর শর্ত কেমন হবে সেটা এখনো বিস্তারিতভাবে জানা যায়নি। বাংলাদেশের বিচার বিভাগের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা তৈরির কর্মসূচির বিষয়ে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। আমাদের বিচারকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার মতো ব্যবস্থা কি আমাদের দেশে নেই? না থাকলে সেটা করার ক্ষেত্রে আমরা নিজেদের সক্ষমতা তৈরি করছি না কেন? এখানে যুক্ত করতে চাই, আমাদের বিচার বিভাগের মূল সমস্যা হলো এর ওপর সরকারগুলোর নগ্ন হস্তক্ষেপ। সেটা বন্ধ করে বিচার বিভাগকে সত্যিকার অর্থে স্বাধীন করা উচিত সবার আগে।

মান্না বলেন, বাংলাদেশে ৩৬টি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণে অর্থায়ন, খুলনা-কলকাতা রুটে মোটরযান যাত্রী চলাচল, বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তজুড়ে বর্ডার হাট স্থাপনের মতো কিছু চুক্তি হয়েছে। এ চুক্তিগুলো দুই দেশের জন্যই ভালো ফল নিয়ে আসবে বলা মনে হচ্ছে।

চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকের ক্ষেত্রে ভারতের প্রত্যাশা প্রতিফলিত হয়েছে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এ ব্যাপারে আমি কিছুই বলব না। আপনারা বললে আমি শুধু শুনব।

সংবাদ সম্মেলনে নাগরিক ঐক্যের সমন্বয়ক শহীদুল্লাহ কায়সার, কেন্দ্রীয় সদস্য মমিনুল ইসলামসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ খবর