বুধবার, ১২ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

নির্যাতিতা নারীর সহায়তায় পুলিশের পূর্ণাঙ্গ ডিভিশন

সেবা দিতে খোলা থাকবে ২৪ ঘণ্টা

জিন্নাতুন নূর

বাংলাদেশে নারী ও শিশুরা অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন বেশি নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। আর নির্যাতিতা নারী ও শিশুর সহায়তায় বাংলাদেশ পুলিশ ২৪ ঘণ্টাব্যাপী সেবা প্রদানের লক্ষ্যে চালু করেছে ওমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন। রাজধানীর তেজগাঁও থানা কমপ্লেক্সে এই ডিভিশনের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

মূলত ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় নারী ও শিশু নির্যাতন সংক্রান্ত মামলার তদন্ত এই ডিভিশনের নারী তদন্তকারী কর্মকর্তারা পরিচালনা করেন। বলা যায়, নারী নির্যাতন প্রতিরোধে এবং নারীবান্ধব পুলিশিং ব্যবস্থা চালু করার লক্ষ্যে নারী পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্য দ্বারা পরিচালিত একটি স্বতন্ত্র বিভাগ হচ্ছে ওমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন।

এই ডিভিশনের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কর্মক্ষেত্র, যানবাহনে এবং পরিবারিক নির্যাতন ও হয়রানির শিকার নারীদের এখানে আইনি সহায়তা দেওয়া হয়। এখানে অভিযোগ গ্রহণকারী, তদন্তকারী, কাউন্সিলর, মধ্যস্থতাকারী, আইনজীবী ও অন্য কর্মকর্তাদের সবাই নারী। নির্যাতিত নারী ও শিশুদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনাই এদের লক্ষ্য। প্রয়োজনে তারা ভিকটিম উদ্ধার কার্যক্রমেও অংশগ্রহণ করেন। সহযোগী এনজিও থেকে আইনগত ও পুনর্বাসন সেবাও নেওয়া হয়। আর প্রয়োজন হলে ভিকটিমকে সর্বোচ্চ পাঁচ দিনের আশ্রয়ও দেওয়া হয়। এ ছাড়া ডিভিশনের কুইক রেসপন্স টিমের হট লাইনে প্রাপ্ত অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে যথাযথ ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়।

ওমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের কর্মকর্তারা জানান, নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে নাগরিকদের বিভিন্ন আইন সম্পর্কে সচেতন করাই এই ডিভিশনের মূল উদ্দেশ্য। পর্যায়ক্রমে ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার সব থানার নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা এই বিভাগ কর্তৃক তদন্ত করার পরিকল্পনা আছে। এ ছাড়া এর মাধ্যমে নারী ও শিশুর প্রতি সংঘটিত অপরাধের তথ্যও সংরক্ষণ করা হচ্ছে এবং ই-মেইলের মাধ্যমে প্রাপ্ত অভিযোগ তদন্ত করে আইনগত সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। তারা জানান, ঢাকা মহানগর পুলিশের অধীনে থাকা ৪৯টি থানার নারী  নির্যাতনের মামলা হওয়ার পর কোনো থানা যদি মনে করে মামলাটি জটিল। এর তদন্ত ঠিকভাবে করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তখন তা এই ডিভিশনে তা পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কারণ পুলিশের তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে নির্যাতনের শিকার নারী অনেক সময় খোলামেলা কথা বলতে পারেন না। আর তদন্তকারী নারী হলে ভিকটিম অনায়াসেই তার সমস্যাটি খুলে বলতে পারেন। কর্মকর্তারা জানান, তাদের এখানে আসা নির্যাতিতাদের অনেকেই সেবা গ্রহণ করে নিজ পরিবারের কাছে ফিরে গেছেন। আবার কেউ কেউ দীর্ঘ মেয়াদি পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার আওতায় সরকারি ও বেসরকারি আশ্রয় কেন্দ্রে চলে গেছেন। আবার অনেকে এখান থেকে একাধিকবার সেবা নিয়েছেন। এই ডিভিশনটির মূলত তিনটি শাখার মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এগুলো হলো ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার, তদন্ত ইউনিট এবং কুইক রেসপন্স টিম।

ওমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের উপ-কমিশনার ফরিদা ইয়াসমিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সারা দেশে নারীর প্রতি সহিংসতা ও ধরন পাল্টেছে। আর আমাদের এই ডিভিশনটি একটি পূর্ণাঙ্গ ডিভিশন। এখানে নির্যাতিত নারীদের যেমন আশ্রয় দেওয়া হয়, একই সঙ্গে একটি স্পর্শকাতর মামলার সাক্ষীকেও সুরক্ষা দেওয়া হয়। ২০১১ সালে তদন্তকাজ শুরু হওয়ার পর, গত পাঁচ বছরে ১ হাজার ৯৬৪টি মামলা তদন্তের জন্য পাঠানো হয়। এর মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ১ হাজার ৭৯৪টি মামলা। তদন্তাধীন রয়েছে ১২৭টি মামলা। তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এখানে আসা মামলাগুলোর অধিকাংশই হচ্ছে ধর্ষণ, অপহরণ, শ্লীলতাহানি, পাচার, অ্যাসিড নিক্ষেপ ও যৌতুকের।

সর্বশেষ খবর