শুক্রবার, ১৪ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

পাল্টা অবস্থান মহিউদ্দিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) কাউন্সিলররা। তারা বললেন, মহিউদ্দিনচৌধুরী ১৯৯৪ সালের পর থেকে ১৭ বছর চসিকের মেয়র ছিলেন। এ সময় তিনি অসংখ্য পদে আত্মীয়স্বজন ও অস্থায়ী লোক নিয়োগ দিয়েছেন। কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে অনেক পদের নিয়োগ স্থায়ী করেছেন  তিনি। গতকাল দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে চসিকের প্যানেল মেয়র কাউন্সিলর চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী এ অভিযোগ করেন। ১০ এপ্রিল বিকালে নগরের লালদীঘি ময়দানে আয়োজিত সমাবেশে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনকে উদ্দেশ করে সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর আনা বিভিন্ন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কাউন্সিলররা এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, মহিউদ্দিনের সময় চসিকের নিজস্ব জায়গায় অপরিকল্পিতভাবে স্থাপনা নির্মাণ করায় আবাসিক ও বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে কোনো সুফল আসেনি। এমনকি অপরিকল্পিতভাবে ওষুধ, রং, টিউবলাইট, লাকড়ি, বিদ্যুৎ উৎপাদন প্লান্ট ও পানি উৎপাদন কারখানাসহ অসংখ্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়। এগুলোর কোনো অনুমোদন ছিল না। আলোর মুখ দেখেনি এসব প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া চট্টগ্রাম শহরকে বর্ধিত করার প্রক্রিয়ায় কোটি কোটি টাকা অপচয়, উত্তর খুলশী কোবে সিটি হাউজিং প্রকল্প, মাদারবাড়ী পোর্ট সিটি হাউজিং প্রকল্প নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে দলিলপত্রের বৈধতা নিয়ে। লেক সিটি হাউজিং প্রকল্পে বরাদ্দপ্রাপ্তদের মধ্যে প্রায় শতাধিক প্লটগ্রহীতা এখনো বঞ্চিত। মহিউদ্দিন চৌধুরীর ‘আপনি একজন খুনি, আপনি ১২টা লোককে হত্যা করেছেন’ শীর্ষক বক্তব্য প্রসঙ্গে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘যে ১২ জন লোক হত্যার কথা উল্লেখ করেছেন মহিউদ্দিন চৌধুরী, আমরা তার কাছ থেকে সে লোকগুলোর নাম-ঠিকানা জানতে চাই। একই সঙ্গে আমরা সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে তার স্ত্রী সাহেদা মহিউদ্দিন, কাজের মেয়ে রানু, সন্তোষ, রবি, ওয়াজিউল্লাহ হত্যার বিচার চাই।’ প্রসঙ্গত, আশির দশকে মহিউদ্দিন চৌধুরীর বাসায় বোমা বিস্ফোরণে সাহেদা মহিউদ্দিনসহ ওই কয়েকজন নিহত হন। ‘আ জ ম নাছির সিটি করপোরেশনের দরজায় তালা মেরে সারাক্ষণ বন্দর চেয়ারম্যানের রুমে বসে থাকেন’—মহিউদ্দিন চৌধুরীর এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, চসিকের প্রধান কার্যালয়ে সার্বক্ষণিক সিসিটিভি ক্যামেরা সক্রিয় আছে। বন্দরের চেয়ারম্যানের কক্ষ ও বন্দরের প্রধান কার্যালয়ের সর্বত্র সিসিটিভি ক্যামেরা আছে। এসব ক্যামেরাই প্রমাণ করবে সাবেক মেয়রের বক্তব্য অসাড় ও মিথ্যা। ‘বিচ্ছু (শামসুল হক চৌধুরী এমপি), লতিফ (এম এ লতিফ এমপি), মনজুর ভাতিজা (দিদারুল আলম এমপি) সংসদে কথা বলে না, বলে বন্দর চেয়ারম্যানের অফিসে’—মহিউদ্দিন চৌধুরীর এ ধরনের বক্তব্য প্রসঙ্গে বলা হয়, ‘জনগণের ভোটে নির্বাচিত আইনপ্রণেতা, মাননীয় সংসদ সদস্যের নাম বিকৃত করে “বিচ্ছু” নামে উপহাস করা কতটা সমীচীন তা গণমাধ্যম বিচার করবে। এ ছাড়া আরেকজন সংসদ সদস্যের নাম উল্লেখ না করে “মনজুর ভাতিজা” বলার পেছনে যৌক্তিক কী কারণ থাকতে পারে তাও আমাদের বোধগম্য নয়। সম্মানিত একজন নাগরিকের মুখে মহান জাতীয় সংসদের আইনপ্রণেতাদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য ভাষায় অমর্যাদাকর আচরণ শোভনীয় কি? সম্মানিত সংসদ সদস্যরা বন্দর চেয়ারম্যানের অফিস কক্ষে থাকেন, না মহান সংসদের অধিবেশনে থাকেন, তা জাতীয় সংসদের রেজিস্টার অনুসন্ধান করলেই বের হয়ে আসবে।’ ‘অথর্ব মেয়রকে অপসারণে প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব পাঠাব’—মেয়র আ জ ম নাছিরকে ইঙ্গিত করে মহিউদ্দিন চৌধুরীর এমন বক্তব্য প্রসঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘বর্তমান মেয়র দায়িত্ব গ্রহণের পর বিলবোর্ড অপসারণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন, সবুজায়ন কর্মসূচি, ৭১৬ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প, ১৯০ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প, জাইকার ২০১ কোটি টাকার প্রকল্প, একনেকে অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকা ৮৯৮ কোটি টাকার প্রকল্প, বিএমডিএফের আওতায় প্রস্তাবিত ১৫০ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। এসব কি একজন অথর্ব মেয়র করতে পারেন?’ ‘টাকা দিয়ে মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন কেনা হয়েছে’—মহিউদ্দিন চৌধুরীর এ অভিযোগ প্রসঙ্গে বলা হয়, ‘এর মাধ্যমে আওয়ামী লীগ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সততা ও সুশাসনের সুনামকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে।’ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন প্যানেল মেয়র-২ অধ্যাপক নিসার উদ্দিন মঞ্জু ও জোবাইদা নার্গিস খান, কাউন্সিলর ইসমাঈল বালি, হাসান মুরাদ, গোলাম হায়দার মিন্টুসহ সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলরা।

সর্বশেষ খবর