মঙ্গলবার, ১৮ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

চট্টগ্রামে ভিন্ন পথে বিপণন হচ্ছে নিষিদ্ধ পলিথিন

বাধাগ্রস্ত পাটজাত পণ্যের ব্যবহার

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

সরকার পাটজাত পণ্যের ব্যবহার বাড়াতে যখন নানা উদ্যোগে ব্যস্ত, ঠিক সে মুহূর্তেও চট্টগ্রামে নানা কৌশলে বিপণন হচ্ছে উৎপাদন-বিক্রি নিষিদ্ধ পলিথিন। যত্রতত্র পাওয়া যাচ্ছে নিষিদ্ধ ও অপচনশীল এ পণ্য। ফলে পলিথিন ব্যবহার বন্ধের কর্মসূচি শতভাগ সফল হচ্ছে না। এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী অতি লাভের আশায় পরিবেশ বিধ্বংসী এ বস্তু তৈরি ও বিপণন করছে।

পরিবেশ অধিদফতর চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে চট্টগ্রামে পলিথিন তৈরির কারখানা হাতেগোনা। কিন্তু চট্টগ্রামে যত পলিথিন আছে সেগুলো দেশের অন্য জেলায় তৈরি। এসব পলিথিন এখন নানাভাবে আসছে চট্টগ্রামে। অতীতে প্রকাশ্যে বিপণন হলেও প্রশাসনিক কঠোরতায় তারা ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে। প্রথম দিকে বিভিন্ন বেসরকারি পরিবহন সার্ভিস, পরে বিভিন্ন গ্রুপের নিজস্ব পরিবহন ও কাভার্ড ভ্যানে করে পরিবহন করা হতো। প্রশাসনের কাছে এসব শনাক্ত হওয়ার পর তারা এখন সাইকেলে এলাকাভিত্তিক বিপণন করছে। পরিবেশ অধিদফতর চট্টগ্রাম মহানগরের পরিচালক আজাদুর রহমান মল্লিক বলেন, ‘কুরিয়ার সার্ভিসের মতো পরিবহন সার্ভিস, কাভার্ড ভ্যান ও বড় বড় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব পরিবহন দিয়ে পলিথিন বিপণন করত। কিন্তু এখন এসব বাদ দিয়ে কৌশল পরিবর্তন করে সাইকেলে অঞ্চলভিত্তিক তারা পলিথিন বিপণন করছে। কিন্তু তারা বিচ্ছিন্নভাবে যতগুলো স্থান দিয়ে পলিথিন বিপণন করছে সেগুলো পাহারা দেওয়ার মতো জনবল আমাদের নেই। তবে এ কথা সত্য যে, পলিথিন ব্যবহার বন্ধ করতে হলে বিপণন নয়, উৎপাদন-শূন্য করতেই হবে। তিনি বলেন, পুলিশ প্রশাসনের কাছে আমরা আরও বেশি সহযোগিতা প্রত্যাশা করি। তারা যদি চেক পোস্টসহ সংশ্লিষ্ট সব জায়গায় টহল ও তল্লাশি বাড়িয়ে দেয়, তাহলে এর বিপণন অনেকাংশে কমবে।’ খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নগরীর কোরবানীগঞ্জ, চাক্তাই, রাজাখালী, খাতুনগঞ্জ, নাসিরাবাদ শিল্প এলাকা, ইপিজেড, পাঁচলাইশ, কালুরঘাট শিল্প এলাকায় ছোট-বড় অবৈধ পলিথিন কারখানা গড়ে উঠেছে। এসব কারখানায় বৈধপথে পলিথিন দানা আমদানি করে অবৈধ পলিথিন ব্যাগ তৈরি করছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, নগরীর কাঁচাবাজার থেকে শুরু করে মুদি দোকান ও অভিজাত শপিংমলে ব্যাপক হারে পলিথিন ব্যবহার হচ্ছে। তা ছাড়া অনেক পণ্যের সঙ্গে বিনামূল্যে নিষিদ্ধ এ পলিথিনও দেওয়া হয়। ব্যবসায়ীরা মনে করেন, পলিথিন বেশি ব্যবহারের অন্যতম কারণ এটি সহজলভ্য, কম দাম এবং বিভিন্ন সাইজের পাওয়া যাচ্ছে। ২ টাকা দিয়েও একটি পলিথিন পাওয়া যায়।

 বিপরীতে পাটজাত ব্যাগ এখনো সহজলভ্য না হওয়া, মূল্য বেশি এবং প্রায় সবগুলো অভিন্ন সাইজের। এ কারণে ক্রেতারা এখনো পলিথিন নির্ভর হয়ে আছে। একটি চটের থলের দাম ২০-৩০ টাকা।

জানা যায়, পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর বিবেচনা করে ২০০২ সালে পলিথিন উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করে সরকার। ২০০২ সালের পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে উল্লেখ রয়েছে, পলিথিন ব্যাগ বিক্রি, প্রদর্শন, মজুদ ও বাণিজ্যিকভাবে বিতরণ করা যাবে না। ওই বছরের ১ জানুয়ারি ঢাকা ও ১ মার্চ সারা দেশে পরিবেশ রক্ষায় পলিথিনের তৈরি ব্যাগ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন (সংশোধিত) ২০০২ অনুযায়ী, এ আইন অমান্য করলে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। আর বাজারজাত করলে ৬ মাসের জেল ও ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান বলবৎ আছে। কিন্তু এরপরও বর্তমানে প্রকাশ্যে পলিথিন ব্যবহার করা হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর