শনিবার, ২২ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা
রফিউর রাব্বির গ্রেফতার দাবি

নারায়ণগঞ্জে আলেম ওলামা সমাবেশ

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

নারায়ণগঞ্জে আলেম ওলামা সমাবেশ

নারায়ণগঞ্জের ডিআইটি এলাকায় গতকাল বাদ জুমা এক আলেম-ওলামা সমাবেশে বক্তব্য দেন সংসদ সদস্য শামীম ওসমান —বাংলাদেশ প্রতিদিন

‘বিসমিল্লাহ’ সম্পর্কে কটূক্তি ও ধর্ম অবমাননার প্রতিবাদে নারায়ণগঞ্জের আলেম-ওলামারা নগরীর ডিআইটি এলাকায় গতকাল বিশাল সমাবেশ করেছেন। বাদ জুমা সমাবেশ চলাকালে কটূক্তিকারী তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা কমিটি নারায়ণগঞ্জের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি এবং মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর বাড়ি ও নগর ভবনের সামনে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। সমাবেশে বক্তারা অবিলম্বে রাব্বিকে গ্রেফতারের দাবি জানান। তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করে দোয়া করেন। সমাবেশ থেকে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়, ইসলামের অবমাননাকারীদের কোনোরকম ছাড় দেওয়া হবে না। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন নারায়ণগঞ্জ জেলা হেফাজত ইসলামের আহ্বায়ক ও ডিআইটি মসজিদের খতিব মাওলানা আবদুল আউয়াল। বক্তৃতা করেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর হেফাজতের আহ্বায়ক মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান, মুফতি জাবির হোসাইন কাসেমী, মুফতি বশিরউল্লাহ, মাওলানা কামালউদ্দিন দায়েমী, মুফতি তৈয়ব আল হোসাইনী, মুফতি আনিস আনসারী, জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক আবু জাহের, সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।

উল্লেখ্য, ৭ এপ্রিল চাষাঢ়া শহীদ মিনারে এক অনুষ্ঠানে রফিউর রাব্বি বলেছিলেন, ‘যদি বাংলার মানুষ জানত সংবিধান বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম দিয়ে শুরু হবে, দেশ হবে সাম্প্রদায়িকতার দেশ তবে মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের কেউ অংশগ্রহণ করত না।’ এ ঘটনায় ১৯ এপ্রিল রফিউর রাব্বির বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ এনে আদালতে মামলা করেন মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান। সংসদ সদস্য শামীম ওসমান আলেম-ওলামাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে সমাবেশে যোগ দেন। এ ছাড়া সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতারা। সভাপতির বক্তব্যদানকালে মাওলানা আউয়াল বলেন, গণভবনে ডেকে নিয়ে সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা আলেমদের যে সম্মান দিয়েছেন তা বিরল। তার মধ্যে আল্লাহ ও রসুলের মহব্বত আছে। শেখ হাসিনা আলেমদের বলেছেন, আপনাদের পদধূলিতে গণভবন ধন্য। আল্লামা শফী প্রধানমন্ত্রীর জন্য দোয়া করেছেন। এই যে আলেমদের প্রতি, হুজুরদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এটা নাস্তিকদের সহ্য হচ্ছে না। তারা বলে বেড়াচ্ছে আমরা নাকি আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছি। আমাদের সাফ কথা— আমরা কোনো দল করি না। মাওলানা আবদুল আউয়াল বলেন, দাবি-দাওয়া নিয়ে আলাপ করতে অন্যরা যেমন যায় আমরাও তেমনই সরকারপ্রধানের কাছে গিয়েছি। সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে অন্তত আলেমদের ৫-১০ বার মিটিং হয়েছে। এরপর আমরা গণভবনে যাই। এতে দোষের কী হলো। যারা আজ এসব নিয়ে উল্টাপাল্টা বলছেন তাদের ইতিহাস আমাদের জানা আছে। তারাই অতীতে সরকারের পদলেহন করেছেন। মাওলানা আউয়াল বলেন, রফিউর রাব্বি বিসমিল্লাহ নিয়ে কটূক্তি করায় বিসমিল্লাহর কিছু যায় আসে না। কিন্তু আমরা মুসলমান হিসেবে এর প্রতিবাদ জানাবই। আইনে বলা আছে, সংবিধানের বিধিকে নিয়ে কটূক্তি করলে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মামলা হবে। ইতিমধ্যে আমাদের পক্ষ থেকে রাব্বির বিরুদ্ধে একজন মামলা করেছেন। প্রয়োজনে আরও মামলা হবে। সংসদ সদস্য শামীম ওসমান বলেন, তিনি কোনো রাব্বির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে আসেননি। এসেছেন মুসলমানের সন্তান হিসেবে। তিনি বলেন, বিসমিল্লাহকে নিয়ে কটূক্তি করলে কেউ মাঠে না নামলেও আমি সবার আগে নামব। দেখব প্রশাসন কী করে।

শামীম ওসমান বলেন, হুজুরদের সঙ্গে বসলেই কারও কারও গা জ্বালা করে। কাদের জ্বলে বুঝতে হবে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী আল্লাহওয়ালা মানুষ। তিনি আমাকে প্রবোধ দিয়ে বলেছেন, ‘শামীম! হতাশ হলেই মহানবীর জীবনী পড়বি। মহানবীর মতো মহামানব দুনিয়ায় কত দুঃখ-কষ্ট করে গেছেন! তার তুলনায় আমরা তো কিছুই না।’

তিনি বলেন, শুধু বিসমিল্লাহ নয়, মুসলিম হয়ে অন্য ধর্মকে সম্মান করার দায়িত্বও আমাদের। মসজিদ, মন্দির ও গির্জাকে অসম্মান করা যাবে না। তিনি বলেন, ইসলামকে কোনোরকম কটূক্তি করলে আমি মাঠে একা নেমে যাব। এ সময় সমাবেশের আলেম-ওলামারা ‘নারায়ে তাকবির আল্লাহু আকবার’ বলে ধ্বনি দিয়ে শামীম ওসমানের সঙ্গে মাঠে নামবেন বলে হাত তুলে সম্মতি জানান।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর