শনিবার, ২৯ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

বাল্যবিয়ে থেকে রক্ষা পেল তিন কিশোরী

অনুষ্ঠানের খাবার এতিমখানায়

প্রতিদিন ডেস্ক

বাল্যবিয়ের কবল থেকে রক্ষা পেয়েছে চট্টগ্রামের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী সুপ্রিয়া সরকার। অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার অভিযোগে তার বাবা কার্তিক সরদারকে দুই হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এদিকে দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে বাল্যবিয়ের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে দুই কিশোরী। এতিমখানায় বিতরণ করা হয় বিয়ের অনুষ্ঠানের রান্না করা খাবার। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধির পাঠানো খবর—

চট্টগ্রাম : বাল্যবিয়ে থেকে রক্ষা পেয়েছে ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী সুপ্রিয়া সরকার। অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার অভিযোগে তার বাবা কার্তিক সরদারকে দুই হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার পূর্ব গোমদণ্ডী এলাকার সরদার পাড়ায় বৃহস্পতিবার রাতে এ ঘটনা ঘটে। অভিযানে নেতৃত্বে দেন বোয়ালখালীর সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুরাইয়া আকতার সুইটি। সুপ্রিয়া বোয়ালখালীর কধুরখীল উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী। সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুরাইয়া আকতার সুইটি বলেন, সুপ্রিয়া সরকার ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ছে। অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার দিনক্ষণ ছিল গতকাল শুক্রবার। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নিয়ম অনুযায়ী বস্ত্রালঙ্কার অনুষ্ঠানের আয়োজন করছিল কনের পরিবার। খবর পেয়ে গায়ে হলুদের (বস্ত্রালঙ্কার) অনুষ্ঠানে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে কনের বাবা কার্তিক সরদারকে দুই হাজার টাকা জরিমানা করা হয় এবং মেয়ে প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত বিয়ে না দেওয়ার জন্য মুচলেকা নেওয়া হয়।

দিনাজপুর : প্রশাসনের হস্তক্ষেপে চিরিরবন্দরে বাল্যবিয়ের হাত থেকে পরিত্রাণ পেল দুই কিশোরী। এ ছাড়া বিয়ের অনুষ্ঠানের রান্না করা খাবার এতিমখানায় বিতরণ করা হয়। ২৭ এপ্রিল রাতে তাদের বিয়ের দিন ধার্য ছিল।  কিশোরী দুজন হলো— চিরিরবন্দর উপজেলার ইসবপুর ইউনিয়নের দক্ষিণনগর গ্রামের মোকলেছুর রহমানের মেয়ে পুরান বিন্যাকুড়ি দারুল ফালাহ্ আলিম মাদ্রাসার নবম শ্রেণির ছাত্রী মল্লিকা আকতার ওরফে মিমি (১৫) ও আবদুলপুর ইউনিয়নের নান্দেড়াই গ্রামের ফজিপাড়ার নুর ইসলামের মেয়ে নুরজাহান (১৩)। স্থানীয়রা জানান, দক্ষিণনগর গ্রামের মোকলেছুর রহমানের মেয়ে মল্লিকা আকতার ওরফে মিমির সঙ্গে মামুদপুর ব্যঙ্গেরকাঁদো গ্রামের মাহমুদুল হকের ছেলে মাজেদুল হকের এবং আবদুলপুর ইউনিয়নের নান্দেড়াই গ্রামের ভজুপাড়ার নুর ইসলামের মেয়ে নুরজাহানের সঙ্গে চিরিরবন্দর হেলিপোর্ট এলাকার চেন্দু মোহাম্মদের ছেলে এন্তাজুল হক টিয়ার সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয়। উভয় বিয়েতে আত্মীয়-স্বজনের আমন্ত্রণ করা হয়।

 বিয়ে অনুষ্ঠানে আসেন আমন্ত্রিত অতিথিসহ আত্মীয়-স্বজনও। আয়োজন করা হয় খাবার-দাবারের।

 কিন্তু গোপন সংবাদের ভিত্তিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. গোলাম রব্বানী পুলিশসহ বিকাল ৪টায় মিমির বিয়ে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পুলিশের খবর পেয়ে বিয়েতে আসা আত্মীয়-স্বজন ও তার পরিবারের লোকজন আত্মগোপন করে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিমির সম্পর্কীয় নানা মাহাবুর রহমান (৬০) ও ভগ্নিপতি ফজলু হককে আটক করে থানায় নিয়ে আসেন এবং স্বজনদের জন্য আয়োজিত খাদ্য ৪টি এতিমখানায় বিতরণ করা হয়। পরে রাতে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবু হায়দার লিটনের মধ্যস্থতায় মিমির পিতা-মাতা ‘মেয়ের আর অল্প বয়সে বিয়ে দেব না’ অঙ্গীকার করে মুচলেকা দিলে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। অন্যদিকে বিকাল ৫টায় আবদুলপুর ইউনিয়নের নান্দেড়াই গ্রামের ভজুপাড়ার নুর ইসলামের মেয়ে নুরজাহানের বাল্যবিয়ে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে মেয়ের বাল্যবিয়ে দেবে না মর্মে পিতা-মাতার মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেন। ফলে উভয়ে বাল্যবিয়ের হাত থেকে রক্ষা পায়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর