শনিবার, ২৯ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

নানা অজুহাতে বাড়ানো হচ্ছে চালসহ নিত্যপণ্যের দাম

নিজস্ব প্রতিবেদক

নানা অজুহাতে বাড়ানো হচ্ছে চালসহ নিত্যপণ্যের দাম

বাজার দর

নানা অজুহাতে বাড়ানো হচ্ছে চালসহ নিত্যপণ্যের দাম। এই মুহূর্তে বড় অজুহাত দেখানো হচ্ছে হাওরে ধান নষ্টের ঘটনা। অসাধু ব্যবসায়ীরা এ ধরনের আরও অজুহাতে গত সপ্তাহে সব ধরনের চালের দাম কেজি প্রতি দুই থেকে তিন টাকা বাড়িয়েছেন। একইভাবে বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ার অজুহাতে রাজধানীর বাজারগুলোতে শাকসবজির দামও বাড়ানো হয়েছে।

ওয়াকিবহাল সূত্রগুলো বলছে, মূলত দায়িত্বশীল মহলের নজরদারি বা মনিটরিং এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না থাকায় বাজার দরে লাগাম ছাড়া অবস্থা হয়েছে। এ কারণে কৃত্রিম সংকট তৈরিতেও সফল হচ্ছেন মিলাররা। তারা অবাধে ধান মজুদ করতে পারছেন। চালের আমদানি হ্রাস পাচ্ছে। সর্বশেষ বৃষ্টির পানিতে হাওরের ধান নষ্ট হওয়ায় দাম বাড়ানো অজুহাতের ষোলোকলা পূর্ণ হয়েছে। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দুই দিনের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে শাকসবজির দাম বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি, আগের সপ্তাহে বৃষ্টি ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে সবজি খেত থেকে শাকসবজি তুলতে পারেননি চাষিরা। রাজধানীর শান্তিনগর, মালিবাগ, রামপুরাসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত সপ্তাহে প্রতি কেজি ঝিঙার দাম ছিল ৪০ টাকা, এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা করে। মানভেদে করলার দাম বেড়েছে ৫ টাকা। গত সপ্তাহে যে করলা ৩০ টাকা বিক্রি হয়েছে, তা এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা করে, আর ৩৫ টাকার করলা বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা করে। পটোল বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা করে। আগের সপ্তাহে যে বেগুন সর্বোচ্চ ৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে গত সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি দরে। ধুন্দলের দামও বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। ৫০ টাকার বরবটি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা করে। ঢেঁড়শ ৪০ টাকা, কাঁচাকলা (হালি) ৩০ টাকা, আলু প্রতি কেজি ২০ টাকা, পেঁপে ২৫ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লেবুর হালি ২০ টাকা, পালংশাক প্রতি আঁটি ২০ টাকা, লালশাক ২০ টাকা, পুঁইশাক ২০ টাকা এবং লাউশাক ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া অন্য সবজিতেও অন্তত ৫ টাকা করে দাম বেড়েছে। তবে মাছ-মাংসের দাম বাড়েনি। মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়, মাছের দামও স্বাভাবিক।  এদিকে রমজান যত কাছাকাছি আসছে ছোলা, চিনি ও ডালের দাম তত বাড়ছে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে এসব পণ্য কেজিতে বেড়েছে ৫ থেকে ১৫ টাকা। রমজান ঘনিয়ে আসায় এমন অবস্থার সৃষ্টি করেছেন কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা। তারা চিনি, ছোলা, পিয়াজ ও মসলা জাতীয় সব পণ্য বাড়তি দামে বিক্রি করছেন। বর্তমানে বাজারে এসব পণ্যের সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই, তবুও চড়া দামের মাশুল দিতে হচ্ছে ভোক্তাদের।

গত দুই সপ্তাহ ধরে চালের বাজার ছিল সবচেয়ে অস্থির। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যমতে, চায়না ইরি, লতা, বিনা-৭, বিআর-২৮, বিআর-৩৯, ৪৯, ৫১ এবং স্বর্ণাগুটি ও পাইজাম জাতীয় মোটা চাল এক বছর আগে প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৩২-৩৪ টাকায়। আর এখন সেই একই চাল কিনতে ৪০-৪৬ টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে একজন ভোক্তাকে। পাইজাম ও লতা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৪-৪৮ টাকায়। আর নাজিরশাইল, বাঁশমতি ও মিনিকেট খ্যাত উন্নতমানের চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৮-৫৬ টাকায় এবং দাম বৃদ্ধির হার প্রায় ৬ শতাংশ। চালের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এরই মধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক করেছে। জানা গেছে, দাম বৃদ্ধির কারণ খতিয়ে দেখতে চালের মিল মালিক, পাইকার, আমদানিকারক এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যবসায়ীর সঙ্গে দ্রুত বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া খাদ্য এবং কৃষি মন্ত্রণালয় থেকেও এ বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর