শনিবার, ১৩ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

রমজানের অপরিহার্য সাত পণ্যের দাম বেড়েছে

মোস্তফা কাজল

রমজানের অপরিহার্য সাত পণ্যের দাম বেড়েছে

বাজার দর

রমজান মাস শুরু হতে এখনো ১২-১৩ দিন বাকি। এরপরও এ মাসে অপরিহার্যতার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে ৭ পণ্যের দাম বেড়েছে আরও সপ্তাহখানেক আগে। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে ডাল, ছোলা, চিনি, পিয়াজ, রসুন, খেজুর ও ভোজ্যতেল। এসব পণ্যের দাম কেজি ও লিটারে বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। রমজান মাসে এসব পণ্যের চাহিদা থাকে সবচেয়ে বেশি। আগামী ১৫ মে থেকে টিসিবি খোলাবাজারে ন্যায্যমূল্যে এসব পণ্য বিক্রি শুরু করলে বাজার কিছুটা স্থিতিশীল হবে বলে আশাবাদী ভোক্তারা। অন্যদিকে সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় ইলিশের দাম কিছুটা কমেছে। উচ্চ দামে স্থিতিশীল রয়েছে সবজি ও মাংসের দাম। গতকাল রাজধানীর কারওয়ান ও মিরপুর বাজার ঘুরে পাওয়া গেছে এসব তথ্য। কারওয়ানবাজারে সরেজমিন দেখা যায়, মৌসুমের নতুন মসুর ডালের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। প্রতি কেজি দেশি মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায়। এক মাস আগে ছিল ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায়। ছোলার দামও আগেভাগেই বাড়িয়ে বিক্রি হচ্ছে ৯৫  থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে। এক মাস আগে ছিল ৭০ থেকে ৭৫ টাকায়। জানতে চাইলে বাংলাদেশ ডাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শফি মাহমুদ দাম বাড়ানোর অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমদানি করা ডালের দাম বেড়েছে। এ কারণে ব্যবসায়ীরাও বাড়তি দামে বিক্রি করছেন। চিনির দাম আবারও বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা। দেড় মাসের ব্যবধানে প্রতি কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে খোলা চিনি এখন ৬৫ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্যাকেট চিনির দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৮ থেকে ৭২ টাকায়। ব্যবসায়ীরা অবশ্য দাবি করছেন, মূসক ও শুল্ক বাড়ানোর ফলে চিনির দাম বাড়ছে। এ ছাড়াও মৌসুমের নতুন পিয়াজ ও রসুনের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকার পরও দাম বাড়ছে। গত দুই সপ্তাহে কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে। বর্তমানে প্রতি কেজি দেশি পিয়াজ ৩০ ও আমদানি করা ভারতীয় পিয়াজ ২৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মিরপুর বাজারে দেখা যায়, এ বাজারে চীনা রসুন ২৫০ ও দেশি রসুন ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এদিকে ভারতীয় পিয়াজ আমদানি হচ্ছে মাত্র ২২ থেকে ২৪ টাকা দরে। চীনা রসুন ২০০ থেকে ২২০ টাকায় আমদানি হচ্ছে। বাজারে প্রচুর পরিমাণ নতুন পিয়াজ ও রসুন রয়েছে। এ অবস্থায় দাম বাড়ার কথা নয়। বছরে ২২ লাখ টন পিয়াজের চাহিদার বিপরীতে বর্তমানে ১৭ লাখ টন পিয়াজ দেশে উৎপাদন হচ্ছে। এ বাজারের ব্যবসায়ী ইয়াসিন আলী বলেন, মৌসুমের পিয়াজ ও রসুন এখন সংরক্ষণ করা হচ্ছে। এ কারণে মোকামেই কিছুটা বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া রমজানের আগে খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের আগাম প্রস্তুতির জন্য বাড়তি চাহিদা থাকায় বাজারেও কিছুটা দাম বেড়েছে। গত রমজানের পর থেকেই খোলা খেজুর ১২০ থেকে ২২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। দুই সপ্তাহ ধরে এর দাম বেড়ে ১৫০ থেকে ২০০ টাকায় পৌঁছেছে। প্যাকেটজাত ভালো মানের খেজুর ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া গতকাল থেকে ভোজ্যতেলের দাম প্রতি লিটারে বেড়েছে দুই টাকা। গতকাল বাজার ঘুরে আরও দেখা গেছে, গরুর মাংস প্রতিকেজি ৫০০, খাসি ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া পাকিস্তানি কক ২২০ টাকায় এবং দেশি মুরগি ৩৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মাছের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রুই ২২০ থেকে ২৫০, কাতলা ১৮০ থেকে ২২০, কৈ এক কুড়ি ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মৃগেল ও বড় তেলাপিয়া ১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। চিংড়ি ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

টিসিবির যত প্রস্তুতি : প্রতি বছরের মতো এবারও রমজানকে উপলক্ষ করে এ মাসে বেশি ব্যবহার হওয়া এমন কিছু পণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নিয়েছে একমাত্র সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। রোজায় সংস্থাটি চিনি, সয়াবিন তেল, মসুর ডাল, ছোলা ও খেজুর এই পাঁচ পণ্য আগামী ১৫ মে থেকে খোলাবাজারে ন্যায্যমূল্যে বিক্রি শুরু করবে। এ জন্য এসব পণ্য মজুদ শুরু করেছে সংস্থাটি।

এবার রমজানের জন্য টিসিবি চিনি দেড়শ টন, সয়াবিন তেল ৫০০ টন, মসুর ডাল এক হাজার ১০০ টন, ছোলা দেড় হাজার টন বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে। ডিলারের পাশাপাশি সারা দেশে এবার ১৭৪টি ট্রাকে করে পণ্য বিক্রি করবে টিসিবি। টিসিবির মুখপাত্র হুমায়ুন কবীর বলেন, এবার রোজার মাস শুরুর আগেই সাধারণ মানুষের বাড়তি পণ্যের চাহিদা মেটাতে প্রস্তুতি নিয়েছে টিসিবি। আমরা ছোলা, ডাল, চিনি, ভোজ্যতেল খোলাবাজারের চেয়ে অপেক্ষাকৃত কম দামে বিক্রি করব।

নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর জানান, রমজানকে সামনে রেখে খোলাবাজারে চিনি, ছোলা, মসুর ডাল ও সয়াবিন তেলের দাম বেড়ে গেছে। টিসিবি রংপুর আঞ্চলিক কর্মকর্তা মিশকাতুল আলম জানান, রমজান মাসজুড়ে চিনি ৫৫ টাকা, সয়াবিন তেল ৮৫ টাকা, ছোলা ৭০ টাকা, মসুর ডাল ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হবে। নগরীর মুলাটোল এলাকার কলেজ শিক্ষক সোহরাব আলী দুলাল বলেন, সাশ্রয়ী মূল্যে সাধারণ মানুষ যাতে টিসিবির পণ্য কিনতে পারে সে জন্য সংশ্লিষ্ট ডিলারদের নজরদারিতে রাখতে হবে। কোনো ডিলার যাতে অধিক মুনাফার আশায় পণ্য উত্তোলন করে কালোবাজারে বিক্রি করতে না পারে সে ব্যাপারে প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর