রবিবার, ২৮ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

আলামত থেকে মিলেছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

বনানীতে ছাত্রী ধর্ষণ

নিজস্ব প্রতিবেদক

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফরেনসিক ল্যাবরেটরিতে বনানীর রেইন ট্রি হোটেলে দুই বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্রী ধর্ষণের আলামতের পরীক্ষা চলছে। তবে এরই মধ্যে আলামত থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও মিলেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, রেইন ট্রির ঘটনার একটি ভিডিও ফরেনসিক টেস্টে বেরিয়ে এসেছে। একটি শিগগিরই প্রতিবেদন তদন্তকারী সংস্থার কাছে পাঠানো হবে। এদিকে তলবের প্রথম তারিখে হাজির না হওয়ায় আগামী ৪ জুন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে গুলশান বিভাগের উপকমিশনার, বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এবং পরিদর্শক (তদন্ত) হাজির হবেন বলে জানা গেছে। অন্যদিকে একের পর এক হুমকিতে ঘরবন্দী হয়ে পড়েছেন ভুক্তভোগী দুই ধর্ষিতার পরিবারের সদস্যরা। এদিকে আলামত পরীক্ষার বিষয়ে জানতে চাইলে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএস) রুমানা আক্তার বলেন, ‘আমরা আলামতগুলো পেয়েছি। ডিএনএ ল্যাবে এসব আলামতের পরীক্ষা কাজ চলছে। এটি স্পর্শকাতর মামলা। এর বাইরে আর কিছু বলা যাবে না। পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর প্রতিবেদন তদন্তকারী সংস্থার কাছে পাঠানো হবে।’ রবিবার দুই শিক্ষার্থী ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি সাফাত আহমেদ ও সাদমান সাকিফের কাছ থেকে জব্দ করা পাঁচটি মোবাইল ফোন ও একটি পাওয়ার ব্যাংক পরীক্ষার জন্য আদালতের নির্দেশে ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) কাছে পাঠানো হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের পরিদর্শক ইসমত আরা এ্যামির আবেদনে ঢাকার মহানগর হাকিম দেলোয়ার হোসেন এ আদেশ দেন। এ ছাড়া মামলার অন্যতম আসামি নাঈম আশরাফের ডিএনএ পরীক্ষার অনুমতি দিয়েছে আদালত।

তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, ধর্ষণের ঘটনায় সাফাত ও সাদমান ইতিমধ্যে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। তবে তদন্তের স্বার্থে জব্দ আলামত বেশ গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে দুই শিক্ষার্থীর স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রতিবেদনের পাশাপাশি নাঈম আশরাফের ডিএনএ নমুনার চূড়ান্ত প্রতিবেদনের জন্য তারা অপেক্ষা করছেন। সিআইডিতে আলামত হিসেবে আসামিদের পাঁচটি মোবাইল ফোন সেট পাঠানো হয়েছে। এগুলো ইংল্যান্ডের তৈরি ভার্চ্যু, ওয়ালটন এল টেন, হাওয়াই, নকিয়া ও আইফোন এস। এগুলোসহ একটি পাওয়ার ব্যাংকও সিআইডির ল্যাবে ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। তবে এ মামলার প্রধান দুই আসামি সাফাত ও সাদমানের মোবাইল ফোন প্রাথমিকভাবে পর্যালোচনা করে ধর্ষণের সময় ধারণ করা একটি ভিডিও উদ্ধার হয়েছে। ওই ভিডিও ফুটেজ ছাড়াও আর কোনো ভিডিও মোবাইল ফোনে রয়েছে কি না বা তারা মুছে দিয়েছে কি না তা নিশ্চিত হতেই তাদের ব্যবহৃত পাঁচটি মোবাইলের ফরেনসিক পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। এ ছাড়া রেইন ট্রি হোটেল থেকে উদ্ধার করা সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজও পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। ইতিমধ্যে এসব ফুটেজের কিছু তথ্য উদ্ঘাটন করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন মামলার তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা।

দুই শিক্ষার্থীর স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রতিবেদন সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, প্রতিবেদন এখনো চূড়ান্ত হয়নি। পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে।

মামলার তদারক কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর পুলিশের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের উইমেন (সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন বিভাগ) উপকমিশনার (ডিসি) ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, দুই শিক্ষার্থী ধর্ষণের ঘটনায় এজাহারভুক্ত সব আসামি গ্রেফতার হয়েছে। তাদের মধ্যে চারজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। তবে তদন্ত এখনো শেষ হয়নি।

এদিকে এজাহারভুক্ত আসামিরা গ্রেফতার হলেও তাদের ঘনিষ্ঠ প্রভাবশালীদের নানা চাপে ধর্ষিতার পরিবারের সদস্যরা এখন অনেকটা ঘরবন্দী। বাসা থেকে বের হলেই নানা হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তাদের পরিবারের সদস্যদেরও এ বিষয়ে নীরব থাকতে বলা হয়েছে আসামিদের পক্ষ থেকে। ‘যথেষ্ট হয়েছে’ বলে সমঝোতার প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে। প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় এর আগে তাদের হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। এমনকি দুই শিক্ষার্থীর বাসায় ঢুকেও প্রভাবশালীদের লোকজন নানা তত্পরতা চালিয়েছে। এ অবস্থায় দুই শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা বিপাকে আছেন। যদিও মামলার তদন্ত সংস্থার দাবি, দুই শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবারের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কোনো ত্রুটি রাখা হচ্ছে না।

পুলিশ বলছে, আদালত থেকে দুই তরুণীকে পূর্ণ নিরাপত্তা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। দুই শিক্ষার্থীকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের ছবি প্রকাশকারীদের বিরুদ্ধে তথ্য ও প্রযুক্তি (আইসিটি) আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) যুগ্ম-কমিশনার আবদুল বাতেন। তিনি বলেন, ‘যারা ভুক্তভোগী দুই তরুণীর ছবি প্রকাশ করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইসিটি আইনে মামলা করা হবে।’

জানতে চাইলে গুলশান থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘নিরাপত্তার হুমকি তো আছেই। আদালতের নির্দেশে তাদের সব ধরনের নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে। পুলিশ পোশাক ও সাদা পোশাকে তাদের বাসার ওপর নজরদারি রাখছে।’

প্রসঙ্গত, ২৮ মার্চ রাতে রেইন ট্রি হোটেলে ধর্ষণের শিকার হন দুই তরুণী। ধর্ষণের অভিযোগ এনে তারা ৬ মে বনানী থানায় একটি মামলা করেন। মামলার এজাহারে দাবি করা হয়, ২৮ মার্চ পূর্বপরিচিত সাফাত আহমেদ ও নাঈম আশরাফ ওই দুই তরুণীকে জন্মদিনের দাওয়াত দিয়ে রেইন ট্রি নামের হোটেলে নিয়ে যায়। সেখানে একটি কক্ষে আটকে রেখে মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে তাদের দুজনকে ধর্ষণ করে সাফাত ও নাঈম। সাফাতের গাড়িচালক বিল্লালকে দিয়ে এ ঘটনা ভিডিও করানো হয় বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে। ধর্ষণ মামলার আসামি সাফাত আহমেদ, নাঈম আশরাফ, সাদমান সাকিফ, সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল ও দেহরক্ষী রহমত আলী ওরফে আবুল কালাম আজাদকে সিলেট, ঢাকা ও মুন্সীগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করা হয়। পরে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে তারা অভিযোগ স্বীকার করে।

সর্বশেষ খবর