মঙ্গলবার, ১৩ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

মসলার ভ্যাটে বাড়বে খরচ

রুহুল আমিন রাসেল

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী নতুন ভ্যাট আইনের আওতামুক্ত রাখার কথা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বললেও বস্তুত প্রতারণা করা হয়েছে। গুঁড়া মসলা জাতীয় পণ্যের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে প্রস্তাবিত বাজেটে। ফলে সব মানুষের ভোগ্যপণ্যের বাজার খরচ বাড়বে নিত্যদিন। প্রতি কেজি মরিচে ৪৫ টাকা, হলুদে ৩৭ টাকা, সরিষার তেলে ৩১ টাকা, ধনিয়ায় ২৭ টাকা, আচারে ২৪ টাকা, টমেটো সসে ১৩ টাকা ও চাটনিতে ১০ টাকা বাড়তি ভ্যাট নেবে এনবিআর। বাংলাদেশ পাইকারি গরম মসলা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ এনায়েত উল্লাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, একটি পণ্যে সরকার কতবার ভ্যাট নেবে? এটা তো পরিষ্কার করে বলছে না। আমাদের কাছ থেকে মসলা তো ভোক্তারা কিনবেন না, কিনবেন পাইকারি বিক্রেতারা। ভ্যাট দেবেন ভোক্তারা। কিন্তু এখন যদি খুচরা বিক্রেতাকে ভোক্তা বিবেচনা করে ভ্যাট আদায় করা হয় তাহলে মসলা জাতীয় পণ্যের দাম দ্বিগুণ বাড়বে। আইনের এই ব্যাখ্যা ব্যবসায়ীরা জানেন না। এর শানেনজুল এনবিআর চেয়ারম্যান বলুক। কারণ— তিনি বার বার বলছেন, ভ্যাটের কারণে পণ্যমূল্য বাড়বে না। এ প্রসঙ্গে ভোক্তা অধিকারবিষয়ক সংগঠন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ক্যাব সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, সরকারের অঙ্গীকার ছিল— নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যে ভ্যাট আরোপ করা হবে না। কিন্তু সব মসলা জাতীয় পণ্যে  ভ্যাটের হার বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ আরোপ করা হয়েছে। এতে ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাই বাজেট পাসের আগে ভ্যাটমুক্ত পণ্যের তালিকায় মসলা অন্তর্ভুক্ত করা হোক। প্রসঙ্গত, প্রস্তাবিত বাজেটে সব পণ্যে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করে অনলাইনভিত্তিক নতুন ভ্যাট আইন আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকর করতে যাচ্ছে সরকার। ফলে মসলা জাতীয় পণ্যে ৭ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত পণ্যমূল্য বাড়বে বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা। এই আশঙ্কা থেকে গত ৭ জুন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে দেওয়া পত্রে গুঁড়া মসলা জাতীয় পণ্যে আরোপিত ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী। ওই পত্রে তিনি বলেছেন, প্রাক-বাজেট আলোচনায় ও বাজেট প্রস্তাবনায় মসলা জাতীয় শিল্পের বিকাশ, মধ্যবিত্ত, নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও কর্মজীবী বা সীমিত আয়ের মানুষের কথা বিবেচনা করে সংকুচিত মূল্যে ভ্যাট নির্ধারণ বা ভ্যাটমুক্ত রাখার প্রস্তাব করি। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো— ভ্যাট আইনে মসলা জাতীয় পণ্যের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। ফলে সীমিত আয়ের মানুষের জীবনযাত্রায় মারাত্মক প্রভাব ফেলবে। ব্যাঘাত ঘটবে শিল্পের বিকাশে। রুগ্ন হয়ে পড়বে দেশীয় শিল্প। যা অদূর ভবিষ্যতে নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে। ধীর ধীরে সরকারের রাজস্ব আদায়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। চাপ সৃষ্টি করবে মূল্যস্ফীতি ও সীমিত আয়ের মানুষের ওপর।  ওই পত্রে প্রচলিত ভ্যাট আইন-১৯৯১ ও নতুন ভ্যাট আইন-২০১২’র আলোকে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপের ফলে মূল্য বৃদ্ধির তুলনামূলক পরিসংখ্যান চিত্র তুলে ধরা হয়। ওই পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বর্তমানে প্রতি কেজি গুঁড়া মরিচের উৎপাদন মূল্য ৩৪৩ টাকার ওপর ৬ টাকা ভ্যাট আছে। কিন্তু নতুন আইনে ১৫ শতাংশ ভ্যাট থাকায় ভোক্তাদের গুনতে হবে ৫১ টাকা। ফলে কেবল প্রতি কেজি গুঁড়া মরিচেই ৪৫ টাকা বাড়তি ভ্যাট নেবে সরকার। একইভাবে হলুদে যেখানে ভ্যাট আছে ৬ টাকা, সেখানে আরও ৩৭ টাকা বাড়িয়ে ভ্যাট নেওয়া হবে ৪৩ টাকা।

ধনিয়ায় যেখানে ভ্যাট আছে ৬ টাকা, সেখানে আরও ২৭ টাকা বাড়িয়ে ভ্যাট নেওয়া হবে ৩৩ টাকা। আচারে ভ্যাট আছে ৯ টাকা, সেখানে আরও ২৪ টাকা বাড়িয়ে নেওয়া হবে ৩৩ টাকা। টমেটো সসে ভ্যাট আছে ৮ টাকা, আরও ১৩ টাকা বাড়িয়ে নেওয়া হবে ২১ টাকা। চাটনিতে ভ্যাট আছে ৯ টাকা, সেখানে ১০ টাকা বাড়িয়ে নেওয়া হবে ১৯ টাকা। সরিষার তেলে যেখানে ভ্যাট না থাকলেও নতুন আইনের ভ্যাট আরোপ করে নেওয়া হবে ৩১ টাকা।

এমন প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে প্রস্তাবিত ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করা হলে স্বস্তি পাবে মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত ও কর্মজীবী মানুষ।

একইভাবে হলুদে যেখানে ভ্যাট আছে ৬ টাকা, সেখানে আরও ৩৭ টাকা বাড়িয়ে ভ্যাট নেওয়া হবে ৪৩ টাকা। ধনিয়ায় যেখানে ভ্যাট আছে ৬ টাকা, সেখানে আরও ২৭ টাকা বাড়িয়ে ভ্যাট নেওয়া হবে ৩৩ টাকা। আচারে ভ্যাট আছে ৯ টাকা, সেখানে আরও ২৪ টাকা বাড়িয়ে নেওয়া হবে ৩৩ টাকা। টমেটো সসে ভ্যাট আছে ৮ টাকা, আরও ১৩ টাকা বাড়িয়ে নেওয়া হবে ২১ টাকা। চাটনিতে ভ্যাট আছে ৯ টাকা, সেখানে ১০ টাকা বাড়িয়ে নেওয়া হবে ১৯ টাকা। সরিষার তেলে যেখানে ভ্যাট না থাকলেও নতুন আইনের ভ্যাট আরোপ করে নেওয়া হবে ৩১ টাকা।

এমন প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে প্রস্তাবিত ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করা হলে স্বস্তি পাবে মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত ও কর্মজীবী মানুষ।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর