শনিবার, ১৭ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

থমকে আছে পিতা-পুত্রের সনদ জালিয়াতি তদন্ত

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আরবি বিভাগের শিক্ষক একেএম শামসুল আলম। সৌদি আরবের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুয়া সনদ দিয়ে সহযোগী অধ্যাপক থেকে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি নেন। তার এই সনদ জালিয়াতির বিষয়টি নজরে আসার পর তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বাবার মতো ছেলেও কম যান না। একই বিভাগের শিক্ষক ইফতেখারুল আলম মাসউদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ আছে বিতর্কিত সনদে পদোন্নতি নেওয়ার। ২০১২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সিন্ডিকেটের ৪৩৯তম সভায় তার এই বিতর্কিত সনদের ঘটনাটিকে অনৈতিক বলে উল্লেখ করা হয়।

পিতা-পুত্রের সনদ জালিয়াতির বিষয়টি তদন্তে কমিটি গঠন করা হলেও তা আজও আলোর মুখ দেখেনি। তদন্ত কমিটির প্রধান অধ্যাপক অবায়দুর রহমান প্রমাণিক জানান, তারা তদন্ত কাজ শুরু করেছিলেন। একপর্যায়ে তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ফাইসুল ইসলাম ফারুকী তদন্ত কাজ বন্ধ করে দেন। ফলে তারা আর তদন্ত কাজ শেষ করতে পারেননি। তদন্ত কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন অধ্যাপক সোহরাব আলী ও অধ্যাপক ড. মু. রফিকুল ইসলাম।

রাবি সূত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের শিক্ষক একেএম শামসুল আলম তার সহযোগী অধ্যাপকের মেয়াদ পূর্তির আগেই অধ্যাপক পদের জন্য আবেদন করেন। আবেদনপত্রে তিনি সৌদি আরবের উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমএ ডিগ্রি অর্জনের সনদ দেন। ২০০১ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক প্রতিবেদনে তিনি একই তথ্য দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে তৎকালীন আরবি ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের একাডেমিক কমিটি তাকে অসত্য তথ্য বর্জন করে প্রকৃত তথ্য দেওয়ার অনুরোধ জানায়। এছাড়া শামসুল আলম সৌদি আরবের একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরবি ভাষা কোর্সে ডিপ্লোমা করেছেন বলে অধ্যাপক হওয়ার আবেদনে উল্লেখ করেন। ২০০১ সালের ১৫ মার্চ সেই সনদের অনুবাদে দেখা যায় তিনি ডিপ্লোমা করেননি। ওই কোর্সে ভর্তি হয়েছিলেন। সেটি শেষ না করেই তিনি দেশে ফিরে আসেন। এমন জালিয়াতির পরেও তাকে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। এনিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পিতার মতো সনদ জালিয়াতির অভিযোগ আছে পুত্র ইফতেখারুল আলম মাসউদের বিরুদ্ধে। ২০০৪ সালের ২৩ আগস্ট তিনি আরবি বিভাগে প্রভাষক পদে যোগ দেন। নিয়োগের জন্য আবেদনপত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতার ক্ষেত্রে তিনি উল্লেখ করেন, ১৯৯৪-৯৫ শিক্ষাবর্ষে রাবির আরবি বিভাগে ভর্তি হয়ে ১৯৯৭ সালে বিএ (সম্মান) পাস করেন। ১৯৯৭-৯৮ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হয়ে একই বিভাগ থেকে ১৯৯৯ সালে তিনি এমএ পাস করেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ইফতেখারুল আলম মাসউদ ১৯৯৪-৯৫ শিক্ষাবর্ষে রাজশাহী দারুস সালাম আলিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে ১৯৯৬ সালে ফাজিল পাস করেন। ১৯৯৬-৯৭ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হয়ে তিনি ১৯৯৮ সালে একই মাদ্রাসা থেকে কামিল পাস করেন। নিয়োগের আবেদনপত্রে ইফতেখারুল আলম মাসউদ একই শিক্ষাবর্ষে ফাজিল ও কামিল পাসের তথ্য গোপন করেন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, যেহেতু ইফতেখারুল আলম মাসউদ একই শিক্ষাবর্ষে ভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে সমমানের ডিগ্রি অর্জন করেছেন, তাই তার আরবি বিভাগ থেকে অর্জিত ডিগ্রি অবৈধ। একইভাবে তার নিয়োগও অবৈধ। ২০০১ সালে অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একই শিক্ষাবর্ষে ভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে কেউ সমমানের দুটি ডিগ্রি অর্জন করলে রাবি থেকে অর্জিত ডিগ্রি বাতিল বলে গণ্য হবে। তবে ইফতেখারুল আলম মাসউদের ক্ষেত্রে এখনো সেটি কার্যকর হয়নি। এরই মধ্যে ৭ জুন মাসউদ অধ্যাপক হয়েছেন। এখন তা সিন্ডিকেটে অনুমোদনের অপেক্ষায়। আজ এই সিন্ডিকেট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা আছে।

অসুস্থ থাকায় কথা বলতে পারেননি একেএম শামসুল আলম। আর ইফতেখারুল আলম মাসউদকে একাধিকবার ফোন ও এসএমএস (০১৭১৭-৭৯৮৪৮০) পাঠানো হলেও তিনি সাড়া দেননি। আর সনদ জালিয়াতি ধরা পড়ার পরেও পদোন্নতি দিতে বোর্ড গঠন বিষয়ে জানতে উপাচার্য অধ্যাপক আবদুস সোবহানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার ফোনটি রিসিভ করেন সাবেক প্রক্টর অধ্যাপক মো. জাকারিয়া। বাংলাদেশ প্রতিদিনের পরিচয় দেওয়ার পর তিনি বলেন, ‘উপাচার্য ব্যস্ত আছেন, এখন কথা বলতে পারবেন না।’

সর্বশেষ খবর