সোমবার, ৩ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

রিজার্ভ চুরির অর্থ ফেরতের উদ্যোগে আবার ভাটা

দুই দেশে চিঠি চালাচালির মধ্যে সীমাবদ্ধ

মানিক মুনতাসির

নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেম থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনায় হ্যাকার এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়ী কর্মকর্তাদের তথ্য পেতে মরিয়া ফিলিপাইন। এ ছাড়া কোনোমতেই দেশটি অর্থ ফেরত দিতে চায় না। অন্যদিকে এ ধরনের কোনো প্রকার তথ্য না দিয়ে ফিলিপাইনকে অর্থ ফেরতে বাধ্য করতে চায় বাংলাদেশ ব্যাংক। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক ও ফিলিপাইন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যে আদান-প্রদান হওয়া একাধিক চিঠির সূত্র ধরে এ তথ্য জানা গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করে, চুরি হওয়া রিজার্ভের টাকা ফেরত না দিতে ফিলিপাইন যে অনড় অবস্থান নিয়েছে তা অযৌক্তিক এবং আইনবহির্ভূত। কেননা মানি লন্ডারিং সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক আইন এবং এগমন্ট গ্রুপের শর্ত অনুযায়ী কোর্টে মামলা করা হলে ফিলিপাইন টাকা ফেরত দিতে বাধ্য থাকবে।

এদিকে এ ঘটনায় ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও গণমাধ্যম প্রথমদিকে সরব থাকলেও প্রায় ছয় মাস ধরে এ ব্যাপারে তারা নিশ্চুপ। এমনকি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের চিঠির জবাব দিচ্ছে না ফিলিপাইন। এমতাবস্থায় বিষয়টিকে সমাধানের পথে এগিয়ে নিতে একজন আন্তর্জাতিক লবিস্ট নিয়োগের কথা ভাবছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ কারণে মামলা ছাড়া আর কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে সে ব্যাপারে প্যাসিফিক গ্রুপ (এপিজি) ও আন্তর্জাতিক অ্যান্টি মানি লন্ডারিং কাউন্সিলের (এএমএলসি) সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে বাংলাদেশ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা রিজার্ভ চুরির সঙ্গে জড়িত রয়েছেন— এমন সন্দেহ অনেক দিন ধরেই চলছে। সরকার রিপোর্ট প্রকাশ না করায় সেটি আরও ঘনীভূত হচ্ছে। ফিলিপাইন সে সুযোগটাই কাজে লাগাচ্ছে। ফলে দিন যতই যাচ্ছে টাকা ফেরতের সম্ভাবনা ততই কমে আসছে বলে তিনি মনে করেন।

সূত্র জানায়, ফিলিপাইন এবং নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক আন্তরিক হলে চুরির অর্থ এত দিনে ফেরত আসত। বিশেষ করে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক ঘটনার শুরু থেকেই তাদের দায়িত্ব এড়িয়ে চলছে। এমনকি এ ঘটনায় তাদের ব্যর্থতার কথাও স্বীকার করছে না। ফিলিপাইন কেন্দ্রীয় ব্যাংক আর ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক চাইলে আরসিবিসিকে অর্থ ফেরত দিতে বাধ্য করতে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। শুধু তাই নয়, আন্তর্জাতিক অ্যান্টি মানি লন্ডারিং আইন অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি, দেশ বা প্রতিষ্ঠান ফেডারেল রিজার্ভকে ব্যবহার করে এক ডলার মানি লন্ডারিং করলে তার কাছ থেকে দ্বিগুণ হারে জরিমানা আদায় করার বিধান রয়েছে। তবে তা তদন্ত ও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার, কিন্তু অসম্ভব নয়। ২০১৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের ৮ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে চুরি হয়। এর মধ্যে ৬ কোটি ৫৬ লাখ ডলার বিভিন্ন দেশের জাংকেট ও ক্যাসিনোতে খরচ হয় বলে সন্ধান পাওয়া যায়। আর ১ কোটি ৫৪ লাখ ডলারের সন্ধান পাওয়া যায়নি। নানা দেনদরবারের পর দেড় কোটি ডলার ফেরতও এসেছে। বাকি অর্থের হদিস মেলেনি দেড় বছরেও। এ ঘটনা তদন্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে সরকার। কিন্তু আজ পর্যন্ত ওই কমিটির রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়নি। এদিকে এ ঘটনার সুরাহা করতে এবং চুরি হওয়া অর্থ ফেরত আনতে অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন মন্ত্রিসভা কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি টাকা ফেরত আনতে পারেনি। এমনকি ওই উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি বর্তমানে প্রায় নিষ্ক্রিয় বলে জানা গেছে।

সর্বশেষ খবর