বৃহস্পতিবার, ৬ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

প্রকাশ্যে ভাষণ দেন তবুও পুলিশ বলে ওরা পলাতক

ট্রিপল মার্ডারের আসামিরা বেপরোয়া

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

দিরাই উপজেলার জারলিয়া জলমহাল দখল নিয়ে গত জানুয়ারিতে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে তিন জেলে নিহত হওয়ার ঘটনায় দায়ের করা মামলার পলাতক আসামিদের কেউ কেউ পুলিশের নাকের ডগায় কেবল ঘুরেই বেড়াচ্ছেন না, প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের উপস্থিতিতে সভা-সমাবেশে অতিথি হয়েও যোগ দিচ্ছেন। পুলিশ বলছে, অভিযান চালিয়েও তাদের ধরা যাচ্ছে না। আসামিদের বেপরোয়া আচরণে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে পুলিশের ভাবমূর্তি।

কুলঞ্জ ইউনিয়নের জারলিয়া জলমহাল দখল নিয়ে ১৭ জানুয়ারি উপজেলা আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধে একপক্ষের তিন জেলে নিহত হন। ১৯ জানুয়ারি ওই ঘটনায় দিরাই পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা মোশাররফ মিয়া, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায় ও উপজেলা চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান তালুকদারসহ ৩৯ জনকে আসামি করে দিরাই থানায় হত্যা মামলা করেন উপজেলা যুবলীগ নেতা একরার হোসেন।  সূত্র জানায়, মোশাররফ, প্রদীপ ও হাফিজসহ ৮ আসামি উচ্চ আদালত থেকে ছয় সপ্তাহের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন পান। কিন্তু জামিনের মেয়াদ শেষে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করেননি। হাই কোর্টের আদেশ অমান্য করায় ৩ মে বাদীর আবেদনক্রমে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জামালগঞ্জ জোনের বিচারক আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সালেহ ওই ৮ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন।

গ্রেফতারি পরোয়ানা মাথায় থাকার পরও আদালতে আত্মসমর্পণ না করে হত্যা মামলার এই আসামিরা প্রকাশ্যে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন। যার খবর স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোতেও প্রকাশ হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০ জুন হাওরের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মাঝে উপজেলা সদরে আয়োজিত গো-খাদ্য বিতরণ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন মামলার আসামি মোশাররফ মিয়া। ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংসদ সদস্য জয়া সেনগুপ্তা। একই দিন পৌর কার্যালয়ে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে পৌরসভার বাজেট ঘোষণাও করেন তিনি। ওই অনুষ্ঠানে মামলার অপর আসামি উপজেলা চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমানসহ বেশ কজন আসামি উপস্থিত ছিলেন। একইভাবে, ১ জুলাই উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের উপজেলা বণিক সমিতির অস্থায়ী কার্যালয়ে ‘নিরাপদ খাদ্য প্রদর্শন অভিহিতকরণ সভায়’ পলাতক আসামি উপজেলা চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান সভাপতিত্ব করেন। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদুজ্জামান পাভেল ও হত্যা মামলার আরেক পলাতক আসামি পৌর মেয়র মোশাররফ মিয়া। স্থানীয়রা জানান, সরকারি কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে হত্যা মামলার আসামিরা প্রকাশ্যে একের পর এক সভা-সেমিনারে যোগ দিলেও তাদের গ্রেফতারের ব্যাপারে পুলিশ প্রশাসনের রহস্যজনক নীরবতা জনমনে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি করছে। দিরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল বলেন, ‘দুই আসামিকে ইতিমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের ধরতে পুলিশ তত্পর রয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে যেহেতু আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে সেহেতু তারা যতই প্রভাবশালী হোন না কেন তাদের ব্যাপারে পুলিশের কোনো দুর্বলতা প্রদর্শনের সুযোগ নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘কেউ কেউ হয়তো পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে সভা-সমাবেশ করছেন। আমরা তাদের ধরতে তত্পর আছি।’ 

সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. বরকতুল্লাহ খান বলেন, ‘বিষয়টি সিআইডি তদন্ত করছে। তারা যদি এ ব্যাপারে সহায়তা চায়, তবে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে সহায়তা দেওয়া হবে।’

সর্বশেষ খবর