শুক্রবার, ৭ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

কেউ উঁকিও দিল না, ছবি তুইল্লা কী অইব

রোমান চৌধুরী সুমন, নারায়ণগঞ্জ

কেউ উঁকিও দিল না, ছবি তুইল্লা কী অইব

‘কেউ উঁকিও দিল না, ছবি তুইল্লা কী অইব। কোথায় গেল জনপ্রতিনিধিরা। কোথায় গেল জেলার সরকারি কর্তারা। ডিএনডির রাস্তায় এখন নৌকা। এরপরও তারা কিছু করতে না পারুক, একটিবার এসে যদি দেখে যেত আমাদের দুর্দশা।  আজকে কারও কোনো খবর নেই’। গতকাল দুপুরে নারায়ণগঞ্জ ডিএনডির ফতুল্লার মধ্য ইসদাইর এলাকায় ছবি তুলতে গেলে ওই এলাকার পানিবন্দী সুফিয়া বেগম আক্ষেপের সুরে এসব কথা বলেন। গতকাল ডিএনডি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মানবেতর জীবনযাপন করছে ওই এলাকার নিম্নবিত্ত পরিবারগুলো। রোজে কাজ করা শ্রমিকদের অনেকেরই কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। এর মধ্যে বাড়িঘরে তলিয়ে গেছে রান্নাঘরের চুলা। ঘরে খাদ্যসামগ্রী থাকলেও রান্না করে খাওয়ার উপায় নেই। অনেকেই চিঁড়া ও মুড়ি খেয়ে জীবনযাপন করছেন।

একই এলাকার বাসিন্দা সরকারি তোলারাম কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্র সিফাত খন্দকার জানান, ‘আমরা তো পানিতে তলিয়ে গেলেও বাসায় খাবার রয়েছে। কিন্তু আশপাশে থাকা নিম্নবিত্ত পরিবারগুলোর নিচতলায় রান্নাঘর তলিয়ে গেছে। এমনকি আমার পরিচিত এক নির্মাণ শ্রমিক দিন আনে দিন খায়। ডিএনডির ভিতর নির্মাণাধীন একটি বাড়িতে সে কাজ করত। জলাবদ্ধতার কারণে ওই বাড়ির কাজ বন্ধ হয়ে গেছ। রোজগার বন্ধ। হাত খালি। বেশ কয়েকটি মুদিদোকান থেকে চিঁড়া ও মুড়ি বাকি নিয়ে খাচ্ছে। ডিএনডি এলাকায় এমন শত শত নিম্নবিত্ত পরিবার রয়েছে। তারা হয় তো লজ্জায় অভাবের কথা বলতেও পারছে না।’

গাবতলী লিংক রোডের বাড়ির মালিক মুক্তিযোদ্ধা আলী আহম্মদ বাচ্চুর বড় ছেলে ফয়সাল আহমেদ জানান, ডিএনডিতে জলাবদ্ধতা নিরসনে সমাধান হবে শুনছি। কিন্তু বর্তমানে ভোগান্তিতে পড়া অভাবী পরিবারগুলোর জন্য স্থানীয় সরকার প্রশাসনের কি কোনো দায়িত্ব নেই।

লালপুর এলাকার বাসিন্দা আলী মনসুর জানান, ভয়াবহ বিপর্যয়ে ডিএনডি এলাকার রাস্তায় নৌকা নামাতে বাধ্য হয়েছে মানুষ। কিন্তু জেলার অভিভাবক হিসেবে থাকা ডিসি বা সদর উপজেলা ইউএনও একটিবারের জন্য ওই সব এলাকা পরিদর্শনে পর্যন্ত যাননি। বিভিন্ন সভায় এসব কর্মকর্তা এসি রুমে বসে আমরা জনগণের পাশে আছি বলে বুলি আওড়ান। কিন্তু ডিএনডি এলাকায় জলাবদ্ধতা ভয়াবহ রূপ নিয়ে রাস্তায় নৌকা চলছে। এ অবস্থায় দায়িত্বরত সরকারি কর্তাদের চেহারা দেখা যায়নি ওই সব এলাকায়। এ নিয়ে চরম ক্ষোভ রয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে।

জলাবদ্ধতার বিষয়ে শিমরাইলের পাম্প হাউসের উপ-সহকারী রাম প্রসাদ বাছার গতকাল জানান, বৃষ্টি না হলে আরও এক সপ্তাহ লাগবে জলাবদ্ধতার পানি নিষ্কাশনে। সকাল থেকে হাউসে ভরপুর পানি রয়েছে। দুপুরে একটু কম।

নভেম্বরে ডিএনডির জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ শুরু হচ্ছে

অবশেষে ডিএনডি জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধানে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের প্রচেষ্টায় আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে। আগামী নভেম্বরে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে জলাবদ্ধতা নিরসনে ৫২৭ কোটি টাকার উন্নয়ন কর্ম শুরু হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

প্রতিবছর ডিএনডির জলাবদ্ধতায় লাখো মানুষ ভোগান্তিতে পড়ে।

এ পরিপ্রেক্ষিতে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান গত বছর এক ঝটিকা সফরে ফতুল্লার জলাবদ্ধ এলাকায় নিয়ে আসেন পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে। ওই সময় মন্ত্রী ডিও লেটার দিয়ে ডিএনডির উন্নয়নে ৫৭০ কোটি টাকার বাজেট বরাদ্দ দেন। পরবর্তীতে তা সংশোধন হয়ে ৫২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়।

ওই সময় সংসদ সদস্য শামীম ওসমান বলেছিলেন, বাংলাদেশ প্রতিদিনে প্রকাশিত ডিএনডির জলাবদ্ধ এলাকার মানুষের দুর্দশার একটি ছবি মন্ত্রীকে দেখাই। মন্ত্রী দুপুরের খাবার না খেয়ে ঝটিকা সফরে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় চলে আসেন। দুর্দশা পরিদর্শন শেষে তিনি তাত্ক্ষণিক একটি ডিও লেটারে লিখেন, “ডিএনডির দুর্দশা দেখে আমি কষ্ট পেয়েছি”। জরুরি ব্যবস্থা নিয়ে তিনি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে ডিও লেটার প্রেরণ করেন। এ বিষয়ে শিমরাইল পাম্প হাউসের উপ-সহকারী রাম প্রসাদ বাছার জানান, আগামী নভেম্বরেই শুরু হবে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ডিএনডির জলাবদ্ধতা নিরসনে ৫২৭ কোটি টাকার উন্নয়ন কর্ম। ইতিমধ্যে প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ হয়ে মাস্টারপ্ল্যান ও স্টিমিট হয়ে গেছে। সব কাজ শেষ।  নভেম্বরেই এ কাজ দৃশ্যমান হবে বলে আমরা শতভাগ নিশ্চিত।

সর্বশেষ খবর