শুক্রবার, ৭ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা
শিল্পায়নের ক্ষেত্রে নীলফামারীর রয়েছে অমিত সম্ভাবনা

ঋণসুবিধা না পাওয়ায় কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হয়নি

—— মারুফ জামান কোয়েল

আবদুল বারী, নীলফামারী

ঋণসুবিধা না পাওয়ায় কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হয়নি

নীলফামারী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মারুফ জামান কোয়েল বলেছেন, অতীতে ঋণসুবিধা ও ব্যাংকিং খাতে পিছিয়ে থাকার কারণেই জেলায় কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়নি। সৃষ্টি হয়নি উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগের সুযোগ। ফলে উত্তরের এই জেলা যেমন পিছিয়েছে, তেমনি সুযোগ সৃষ্টি হয়নি কর্মসংস্থানের।

তবে ক্রমেই পরিবর্তন হচ্ছে কৃষিনির্ভর জেলা নীলফামারীর। স্থানীয় ও বিভিন্ন এলাকার উদ্যোক্তারা গড়ে তুলেছেন বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানে কাজ করছে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। উত্তরা ইপিজেডে গড়ে উঠছে নতুন নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া বেসরকারি উদ্যোক্তারাও বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছেন। সৈয়দপুরে ক্ষুদ্র শিল্পপল্লী গড়ে তোলা  হলে সেখানে প্রায় ৩০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে। সরকারি সহযোগিতা পেলে এসব বেসরকারি উদ্যোক্তা নীলফামারীকে শিল্পের জেলায় পরিণত করতে পারবেন।

প্রায় ১৮ লাখ মানুষ বাস করেন নীলফামারী জেলায়। ব্যবসা-বাণিজ্য বলতে শুধু খেতের ফসল ছাড়া অন্য কিছুই ছিল না এখানে। বর্তমানে পাল্টে গেছে এর চিত্র। পরিবর্তন হয়েছে মানুষের জীবনযাত্রার মান। সরকারি ও ব্যক্তি উদ্যোগে বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠায় কর্মসংস্থান হয়েছে হাজারো মানুষের। বড় কোনো শিল্প বলতে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা, নীলফামারী সদরে দুটি সিরামিক কারখানা, দারোয়ানি টেক্সটাইল মিলস ও সরকারিভাবে নির্মিত উত্তরা ইপিজেড, ঝুটকাপড়ের ক্ষুদ্র শিল্পপ্রতিষ্ঠান, উত্তরা আবাসনে শাড়ি-ব্লাউজে জরির কাজ, পোলট্রি শিল্প, টাইলস কারখানা, অটো রাইস মিল মানুষের ভাগ্য বদলে দিয়েছে। বিশেষ করে ঝুটকাপড় দিয়ে তৈরি পোশাক দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি হচ্ছে ভারত, নেপাল, ভুটানসহ বিভিন্ন দেশে। নীলফামারী পরিণত হয়েছে কর্মযজ্ঞ ও রপ্তানি পণ্যের জেলায়। কৃষিনির্ভর এ জেলায় যেভাবে ব্যক্তি উদ্যোগে ছোট-বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে, তাতে ভবিষ্যতে শিল্পের জেলায় পরিণত হবে নীলফামারী। সরকারি সহযোগিতা পেলে নীলফামারীতে আরও শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে।

উত্তরা ইপিজেডে প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিতকরণ, ইউপিজেড থেকে মাত্র ৩৮ কিলোমিটার অদূরে চিলাহাটি স্থলবন্দর চালু করে সরাসরি ভারতের সঙ্গে রেল যোগাযোগ স্থাপন ও সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানের করা হলে উৎপাদিত পণ্য ভারত-নেপাল-ভুটান, ইউরোপ মহাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে রপ্তানি করা সম্ভব হবে। কৃষিনির্ভর এ জেলায় যেভাবে ব্যক্তি উদ্যোগে ছোট-বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে, তাতে ভবিষ্যতে শিল্পের জেলায় পরিণত হবে নীলফামারী। সরকারি সহযোগিতা পেলে এখানে আরও শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। সোনা ফলানো নীলফামারীর মাটিতে উৎপাদিত আলু, আদা, আলু, টমেটো, রসুন দিয়ে খুব সহজেই কৃষিভিত্তিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা সম্ভব। এখানকার জমি ও সস্তা শ্রম শিল্পায়নকে আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে।

সুবর্ণখুলি কাদিখোলা এলাকায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এর স্থান নির্বাচন কমিটি ও বোর্ড অব গভর্নর কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছে, যা দ্রুত কার্যকর করা দরকার। শিগগিরই নীলফামারীতে গ্যাস সরবরাহের জন্য পাইপলাইন বসানোর দাবি দীর্ঘদিনের। নীলফামারী শহরের চারদিকে চার লেনবিশিষ্ট রিং রোড তৈরি করাসহ দারোয়ানি টেক্সটাইল মিলের অব্যবহূত জমিতে আইটি ভিলেজ তৈরি করা গেলে নীলফামারী ডিজিটাল জেলায় পরিণত হতে পারে। অন্যদিকে  নীলফামারীর মাটি আদা ও মরিচ চাষের জন্য খুবই উপযোগী। ভাইরাসমুক্ত উচ্চ ফলনশীল আদা চাষের জন্য এখানে একটি গবেষণাগার প্রয়োজন। এটি নির্মাণ করা গেলে কৃষিতেও বিশেষ অবদান রাখবে নীলফামারী।

সর্বশেষ খবর