শিরোনাম
সোমবার, ১০ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

এবারও ভর্তি ফরম বাণিজ্য করবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো

মানবিকতা উপেক্ষিত হচ্ছে শিক্ষক সমাজে

মর্তুজা নুর, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

সামনে কড়া নাড়ছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা। উচ্চ মাধ্যমিকের ফল প্রকাশ হলেই স্নাতকে (সম্মান) ভর্তির জন্য আবেদন ফরম বিক্রি করবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। জানা গেছে, আগের ধারাবাহিকতায় এবারও ভর্তি ফরম বাণিজ্যের প্রস্তুতি নিচ্ছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সরকারিভাবে সুস্পষ্ট ও জোরালো নীতিমালার অনুপস্থিতির সুযোগে লাখ লাখ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এবারও হাতিয়ে নেবে কোটি কোটি টাকা। মানবিকতা উপেক্ষিত হচ্ছে শিক্ষক সমাজে। অভিযোগ ওঠেছে ভর্তি বাণিজ্যের লক্ষ্যে কর্তৃপক্ষ ফরম পূরণের ক্ষেত্রে একডেমিক যোগ্যতার ক্ষেত্রে কিছুটা শিথিল করে থাকে। প্রতিযোগিতায় ঠিকতে পারবে না জেনেও এই কৌশল নেওয়া হয় অতিরিক্ত টাকা আদায়ের জন্য— এ অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের। সেই সঙ্গে রয়েছে ভর্তি ফরমের টাকা নিয়ে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ।

জানা যায়, সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আলাদা আলাদা ইউনিটে অনুষ্ঠিত    হয়। ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের আগেই প্রতি বছর শিক্ষার্থীরা কয়েকগুণ বেশি টাকা দিয়ে ভর্তি ফরম পূরণ করে। একজন শিক্ষার্থী যে ইউনিটের ভর্তি ফরম পূরণ করে তিনি কেবল ওই ইউনিটেই ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারেন। একাধিক ইউনিটে  ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে টাকা দিয়ে আলাদাভাবে ফরম পূরণ করতে হয়। তাই ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার   আগেই ফরমের টাকা জোগাড় করতেই কপালে ভাঁজ পড়ে বেশির ভাগ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের। এর ফলে অনেক শিক্ষার্থী যোগ্যতা থাকার পরও অর্থ সংকটে ভর্তি ফরম   পূরণ করতে পারেন না।

গত ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় পাঁচটি ইউনিটে। প্রতি ইউনিটের ফরম মূল্য ছিল ৩৫০ টাকা। আবেদন করেছিলেন তিন লাখ দুই হাজার ৪৮৯ জন। আর রাবির ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ৯টি ইউনিটে। যার ফরম মূল্য ছিল ৩৯০ থেকে ৮২৫ টাকা। ভর্তি ফরম পূরণ করেছিলেন এক লাখ ৭৮ হাজার ৯৫৯ জন। চবির ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ১০টি ইউনিটে। সেখানে প্রতি ইউনিটের ভর্তি ফরম মূল্য ছিল ৪৭৫ টাকা। ভর্তি ফরম পূরণ করেছিলেন দুই লাখ ৪৭ হাজার ৭৭৯ জন। অন্যদিকে, জাবির ভর্তি পরীক্ষা হয়েছিল ৮টি ইউনিটে। যার ফরম মূল্য ছিল ৩৫০ থেকে ৫৫০ টাকা। আবেদন করেছিলেন দুই লাখ ২০ হাজার ২৯৮ শিক্ষার্থী। এছাড়া বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (রুয়েট) টাকা দিয়ে ফরম পূরণ করেও প্রাথমিক বাছাইয়ের মাধ্যমে অযোগ্য ঘোষণা করে অনেক আবেদনকারীকে। এতে করে কয়েক লাখ টাকা লাভ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। রাবির শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মো. আনসার উদ্দিন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বেশি আবেদনকারী পাওয়ার জন্যই আবেদনের ক্ষেত্রে যোগ্যতা শিথিল করে। তিনি বলেন, মূল আবেদন প্রক্রিয়ার আগে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারে। রেজিস্ট্রেশনের জন্য ২০-৩০ টাকা নিয়ে নির্দিষ্ট সংখ্যক শিক্ষার্থীকে তারা আবেদনের সুযোগ দিতে পারে। এতে শিক্ষার্থীদের অর্থের ব্যয় কমে আসবে। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সব বিশ্ববিদ্যালয়েই চলছে এরকম ভর্তি ফরম বাণিজ্য। এ বছরও ভর্তি পরীক্ষায় ফরমের মূল্য কমার কোনো সম্ভাবনা নেই। অথচ কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা অজুহাতে ফরমের মূল্য বাড়তে পারে।  এদিকে অভিযোগ রয়েছে, ভর্তি ফরমের মূল্য যে যে খাতে ব্যয় হওয়ার করার কথা তা নিয়েও হচ্ছে নয়-ছয়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি ফরমের ৬০ শতাংশ ব্যয় হওয়ার কথা প্রশ্ন তৈরি, খাতা মূল্যায়ন, ফলাফল তৈরিসহ পরীক্ষার অন্যান্য কাজে। বাকি ৪০ শতাংশ জমা হওয়ার কথা বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকারি কোষাগারে। অথচ সরকারি কোষাগারে জমা না হয়ে বিভিন্ন খাতে টাকার ব্যয়ের হিসাব দেখানো হয়। এবিষয়ে কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষার পুরো পদ্ধতির পরিবর্তন করা দরকার। শিক্ষার সব ক্ষেত্রেই এখন বাণিজ্যিকীকরণ চলছে। ভর্তি পরীক্ষার নামেও বাণিজ্যিকীকরণ থেমে নেই। এটা বন্ধের জন্য সরকারের উচ্চ মহলকে নজর দিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি ফরম বাণিজ্য বন্ধ করা সম্ভব নয়।

সর্বশেষ খবর