রবিবার, ২৩ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

কোচিং বাণিজ্যের বিরুদ্ধে মাঠে নামছে দুদক

সম্পদের হিসাব চাওয়া হবে শিক্ষকদের

মোস্তফা কাজল

অবৈধ কোচিং বাণিজ্যের বিরুদ্ধে আজ-কালের মধ্যে মাঠে নামছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আপাতত রাজধানীর ২০টি নামিদামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক যারা অবৈধ কোচিং বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে। অভিযানে তালিকায় থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের সম্পদের হিসাব চাওয়া হবে। হিসাবে গরমিল পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এসব বিষয়ে গত ২০ জুলাই শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সঙ্গে সচিবালয়ে দুদক কমিশনার ড. নাসির উদ্দিনের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। ওই আলোচনার সূত্র ধরেই অভিযানে নামছে দুদক। জানতে চাইলে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দুদক মনে করছে সরকারি শিক্ষক এবং যারা এমপিওভুক্ত তারা ক্লাসে শিক্ষাদান করবেন এটাই নিয়ম। সরকারি অনুমোদন ছাড়া এর বাইরে যদি তারা কিছু করেন, সেটা আমরা দুর্নীতি বলে ধরে নেব। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। তিনি বলেন, কোচিং বাণিজ্য নিয়ে জনসাধারণের মধ্যে এক ধরনের উদ্বেগ-উত্কণ্ঠা রয়েছে। এই কোচিং বাণিজ্যের কারণেই অনেক অভিভাবক শিক্ষার্থীদের স্কুলে পড়াতে আগ্রহী হন না। এর আগে গত ২৭ মার্চ রাজধানীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর এক অনুষ্ঠানে কোচিং বাণিজ্য নিয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেছিলেন, সেদিন খুব কাছে, যেদিন শিক্ষা বাণিজ্যকীকরণের অবৈধ কোচিং সেন্টার বন্ধ হবে। একই সঙ্গে গাইড বইও থাকবে না। শিক্ষকরাই হবেন শিক্ষার্থীদের গাইড। অবশ্য দুদক   রাজধানীর ১৫টি নামিদামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি বাণিজ্যের বিরুদ্ধেও অনুসন্ধান  করেছে। চলতি বছরের জানুয়ারির প্রথম দিকে  দুদকের এ অনুসন্ধান কার্যক্রম চলে। তবে এর ফলাফল এখনো প্রকাশ করা হয়নি।

দুদক সূত্র জানায়, ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়-১ এর উপপরিচালক মোহাম্মদ ইব্রাহিমের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের টিম অনুসন্ধান শুরু করেছে। টিমের অন্য সদস্যরা হলেন সহকারী পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম, আবদুল ওয়াদুদ, মনিরুল ইসলাম, ফজলুল বারী ও উপসহকারী পরিচালক আতাউর রহমান। দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে দুদকের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক নাসিম আনোয়ার বলেন, অনুসন্ধানকালে কোনো শিক্ষকের বিরুদ্ধে কর্তব্য পালনে অবহেলা ও কোচিং নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা লঙ্ঘনের প্রমাণ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে কমিশনে প্রতিবেদনে পেশ করা হবে। জানা গেছে, কোচিং বাণিজ্যের বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নজরে এলে কোচিং নিয়ন্ত্রণে নীতিমালা তৈরি করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয় ২০১২ সালের মাঝামাঝিতে। মন্ত্রণালয়ের এই নীতিমালা উপেক্ষা করে একশ্রেণির অতিলোভী শিক্ষক অবাধে কোচিং বাণিজ্য চালাচ্ছেন। নীতিমালায় নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের কোচিং অথবা প্রাইভেট পড়াতে নিষেধ করা হয়েছে। তবে কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ ১০ জন ছাত্রছাত্রীকে নিজ বাসায় পড়ানোর সুযোগ দেওয়া হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে কোচিং সেন্টারের নামে বাসা ভাড়া নেওয়ার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধের কথা বলা হয়েছে। দুদকের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা ওই ১০ শিক্ষার্থীর মধ্যে নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একজনকে পড়ালেও তাকে অভিযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হবে। দুদক সূত্র জানায়, রাজধানীর অলিগলি, পাড়া-মহল্লায় কোচিং বাণিজ্যে জড়িত অসৎ শিক্ষকদের কোচিং আস্তানা খুঁজে তালিকা তৈরি করেছেন অনুসন্ধান টিমের সদস্যরা। টিমের সদস্যরা সরেজমিন ও নানা সোর্সের মাধ্যমে ওইসব শিক্ষকের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করছেন। পরে স্কুল-কলেজ থেকে পাওয়া তালিকার সঙ্গে তাদের নাম মিলিয়ে দেখা হচ্ছে।

জানা গেছে, দুদক টিমের সদস্যরা গোপনে অনুসন্ধান চালিয়ে কিছুসংখ্যক কোচিং সেন্টারের নাম, সেখানকার শিক্ষক, শিক্ষকদের স্কুল বা কলেজ, আয়-ব্যয়, নামে-বেনামে সম্পদ, সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীর নাম ও তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম সংগ্রহ করেছেন। ওই সব তথ্য যাচাই করা হচ্ছে। কোচিং বাণিজ্যের প্রাথমিক অনুসন্ধান প্রতিবেদন দুই দিন আগে কমিশনে পেশ করা হয়েছে। কমিশন প্রতিবেদনটি খতিয়ে দেখে এ বিষয়ে ব্যাপকভিত্তিক অনুসন্ধানের নির্দেশ দিয়েছে। দুদক সূত্র জানায়, এবার মাঠপর্যায়ের তথ্য সংগ্রহ করে কোচিং বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত শিক্ষকদের সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা হবে। তারা শিক্ষার্থীদের পাঠদানে অবহেলা করছেন কি-না, প্রতিদিন স্কুল বা কলেজে হাজির হন কি-না, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোচিং-সংক্রান্ত নীতিমালা লঙ্ঘন করা হচ্ছে কি-না দালিলিক প্রমাণসহ এসব তথ্য সংগ্রহ করা হবে। এ ছাড়া কোচিং ব্যবসার মাধ্যমে অর্জিত তাদের সম্পদও খুঁজে বের করা হবে। তার দখলে থাকা সম্পদ বৈধ আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ কি-না তা খতিয়ে দেখা হবে।

সর্বশেষ খবর