শনিবার, ৫ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

এশিয়ায় সন্ত্রাস দমনে ব্যবহার হচ্ছে বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা

ইন্টারপোল থেকে দুই বছরের প্রকল্প গ্রহণ

মাহবুব মমতাজী

দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সন্ত্রাস প্রতিরোধে কাজে লাগানো হচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশের জঙ্গি দমন অভিজ্ঞতাকে। এজন্য ইন্টারপোল আগামী দুই বছরের জন্য ‘ইন্টার রিজিওনাল কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইন সাউথ অ্যান্ড সাউথ-ইস্ট এশিয়া’ নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রকল্পটি পরিচালনা করা হবে সিঙ্গাপুর থেকে। গত ১২ জুলাই প্রকল্প ব্যবস্থাপক এন্টেনিও সালদাগোর নেতৃত্বে তিন সদস্যের ইন্টারপোলের একটি প্রতিনিধি দল রাজধানীর পুলিশ সদর দফতরে বৈঠকে বসেন। শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, ওই বৈঠকে তারা দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সন্ত্রাস দমনের জন্য বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষজ্ঞ ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল চান। ইন্টারপোলের এ প্রকল্প বাংলাদেশ ছাড়া আরও সাতটি দেশে পরিচালিত হবে। দেশগুলো হলো—ভারত, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা, ফিলিপাইন ও সিঙ্গাপুর। এ ক্ষেত্রে ইন্টারপোলের ওই প্রকল্পে প্রশিক্ষণ, অন্য দেশের অভিজ্ঞতা আদান-প্রদান, পুলিশিং ব্যবস্থা ও জাতীয় পর্যায়ের কার্যক্রম গ্রহণসহ চারটি ধাপে কাজ সম্পন্ন করা হবে। এর মাধ্যমে আঞ্চলিক পর্যায়ের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদ মোকাবিলা করা হবে। জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় বাংলাদেশ পুলিশের সাফল্য, আত্মবিশ্বাস এবং জনপ্রতিরোধকে যথাযথভাবে কাজে লাগানো হবে। আন্তর্জাতিক সূত্রগুলোর মতে, ২০১৩-১৭ পর্যন্ত বাংলাদেশে যতগুলো জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেছে তার সবই র‌্যাপিড রাইড অর্থাৎ জঙ্গিদের যেমন ত্বরিত উত্থান ঘটেছে, পুলিশও তেমন ত্বরিত প্রতিরোধ করেছে।

এ ব্যাপারে পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (গোপনীয়) মনিরুজ্জামান এ প্রতিবেদককে জানান, জঙ্গি মোকাবিলায় বাংলাদেশ এখন বিশ্বের রোল মডেল। যেখানে অন্য দেশে জঙ্গি হামলার পর আরেক দেশের সহায়তায় তা দমন করতে হিমশিম খাচ্ছে, সে সময় জঙ্গি উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে   বাংলাদেশ পুলিশ তা প্রতিরোধে প্রতিটি ঘটনায় সফলতা দেখিয়েছে। এ কারণে অন্য দেশগুলো আমাদের কৌশল ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানোর আগ্রহ প্রকাশ করেছে। 

জঙ্গিবিরোধী অভিযানের বিষয়ে আন্তর্জাতিক পুলিশি সংস্থা ইন্টারপোলের সিকিউরিটি জেনারেল জর্জ স্টক বলেছিলেন, জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশ পুলিশ ভালো অবস্থানে রয়েছে। জঙ্গিবাদ দমনে তারা সফল। গত বছর যে জঙ্গি হামলা হয়েছে সেটা তারা ভালোভাবে মোকাবিলা করেছে। জঙ্গিবাদ কোনো একক দেশের সমস্যা নয়। এ নিয়ে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার প্রয়োজন। আমাদের চ্যালেঞ্জ হলো—সাইবার ক্রাইম ও আন্তর্জাতিক জঙ্গি সন্ত্রাস। এটা আমরা সবাই মিলে মোকাবিলা করব।

জানা গেছে, চলতি বছরের মার্চে রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে তিন দিনের পুলিশ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। যার নাম ছিল ‘চিফস অব পুলিশ কনফারেন্স অব সাউথ এশিয়া অ্যান্ড নেইবারিং কান্ট্রিস।’ এতে আফগানিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, ভুটান, ব্রুনাই, চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালদ্বীপ, নেপাল, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, ভিয়েতনামের পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা অংশ নেন। এ সম্মেলনেও জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় বাংলাদেশের ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করা হয়। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক পুলিশি সংস্থা ইন্টারপোলের কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশ যেভাবে পরিস্থিতির মোকাবিলা করেছে, তা থেকে শিক্ষা নিতে পারে অন্যরাও। 

প্রসঙ্গত, ২০১৫ সাল থেকেই দেশের বেশকিছু এলাকায় বিদেশিদের ওপর বিচ্ছিন্ন হামলার ঘটনা শুরু হয়। তবে হলি আর্টিজান হামলায় এক দিনে হত্যা করা হয় ১৭ জন বিদেশিকে। বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের ইতিহাসে এটি একটি টার্নিং পয়েন্ট। এত বড় মাপের জঙ্গি হামলা এর আগে বাংলাদেশে কখনো হয়নি। সেখানে খুন হন দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ পাঁচ বাংলাদেশি। এ ঘটনার এক সপ্তাহের মাথায় কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ঈদুল ফিতরের জামাতে জঙ্গি হামলার চেষ্টা হয়। ময়দানে ঢুকতে না পেরে জঙ্গিরা হামলা করে পুলিশের তল্লাশি চৌকিতে। এ সময় নিহত হন দুই পুলিশ সদস্য। আর পুলিশের গুলিতে মারা যায় এক হামলাকারী, সঙ্গে ধরা পড়ে আরও একজন। এরপর পুলিশ রাজধানীর মিরপুরের কল্যাণপুর, রূপনগর, আজিমপুর, এয়ারপোর্ট এলাকার আশকোনা, নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়া, গাজীপুরের পাতারটেক ও হারিনাল, আশুলিয়া এবং টাঙ্গাইলের কাগমারীতে জঙ্গিবিরোধী অভিযান চালায়। এসব অভিযানে ৪৭ জন জঙ্গি নিহত হয়। এসব অভিযানের পর জঙ্গিরা আর তেমন কোনো নাশকতা ঘটাতে পারেনি।

সর্বশেষ খবর