শুক্রবার, ১১ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

রিকশামুক্ত করা যায়নি ঢাকা

৮৮ হাজার নিবন্ধিত রিকশার বিপরীতে চলাচল ১০ লাখ

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

রিকশামুক্ত করা যায়নি ঢাকা

কয়েক লাখ রিকশার বিশৃঙ্খল চলাচলে স্থবির ঢাকা মহানগরী। রাজধানীর প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে অলিগলি সর্বত্র দীর্ঘদিনের একটি অতিপরিচিত শব্দ রিকশার টুং টাং ঘণ্টি। যাত্রাবাড়ী, টিকাটুলি, মতিঝিল নবাবপুর, বংশাল, মগবাজার, মৌচাক এককথায় নগরীর প্রতিটি সড়কের সর্বাত্মক দখল নিয়েছে রিকশা। ট্রাফিক সিগন্যাল বা জ্যামে পড়লে দেখা যায় সারি সারি রিকশাতে ঢাকা পড়ে আছে রাজধানী ঢাকা। ফলে যানজটের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই রিকশা। আশির দশক থেকে ঢাকা সিটি করপোরেশন রিকশার নতুন লাইসেন্স দেওয়া বন্ধ রেখেছে। কিন্তু রাজধানীর রাস্তায় প্রতিদিনই নামছে নতুন নতুন রিকশা। আর নগরীতে রিকশার হিসাব নিয়ে রয়েছে নানা মতানৈক্য। কারও কারও মতে, ১০ আবার কারও মতে ১২ লাখ। তবে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের হিসাবে অন্তত ১০ লাখ রিকশা ঢাকায় চলাচল করছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পাঁচবার উদ্যোগ নেওয়া হলেও ঢাকাকে আজও রিকশামুক্ত করা সম্ভব হয়নি। বরং অপ্রতিরোধ্য গতিতে বাড়ছে লাইসেন্সবিহীন রিকশার সংখ্যা। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের হিসাবে, রিকশার সংখ্যা ১০ লাখের মতো। আর নিবন্ধন আছে ৮৭ হাজার ৮১১টি রিকশার। এর মধ্যে উত্তর সিটি করপোরেশনে আছে ২৭ হাজারের মতো বৈধ রিকশা। আশির দশকের পর থেকে ঢাকায় নতুন রিকশার নিবন্ধন দেওয়া বন্ধ আছে। ফলে অবৈধ রিকশার সংখ্যা বাড়ছে।

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত পাঁচবার উদ্যোগ নেওয়া হলেও ঢাকাকে রিকশামুক্ত করা সম্ভব হয়নি। জানা গেছে, ৮০’র দশকে কর্নেল (অব.) আবদুল মালেক যখন ঢাকার মেয়র ছিলেন, তখন অবৈধ রিকশা বন্ধ করার কথা ব্যাপকভাবে বলা হয়। কিন্তু বিভিন্ন কারণে এই পরিকল্পনা আটকে যায়। তখন উল্টো ৮০ হাজার নতুন রিকশার লাইসেন্স দেওয়া হয়। সর্বশেষ ডিসিসি বিভক্তির পর ডিসিসি উত্তর ৭ হাজার ৮১১টি লাইসেন্স দিয়েছে। এরপর থেকে লাইসেন্সবিহীন রিকশার সংখ্যা বাড়ছেই। পরিবেশ দূষণের কারণে বেবিট্যাক্সি বন্ধ করে সিএনজি চালু করা হয়েছে। কিন্তু রিকশা নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি।  সূত্র জানায়, এডিবি, ইউএন, বিশ্বব্যাংকসহ পশ্চিমা দাতা সংস্থাগুলো ঢাকাকে রিকশামুক্ত করার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে বেশ কয়েকবার সুপারিশ করেছে। কিন্তু এ পেশার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিশাল জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসনের পথ বের করতে না পারায় রিকশা উচ্ছেদ করা যাচ্ছে না। ধারণা করা হয়, ঢাকায় ১০ থেকে ১২ লাখ শ্রমজীবী পরিবার জীবন ধারণে রিকশার ওপর নির্ভরশীল। পরিবহন বিশেষজ্ঞদের মতে, রিকশা চালকদের কর্মসংস্থানের বিকল্প ব্যবস্থা করে নগরীর রিকশা উচ্ছদ করা যায়। এক্ষেত্রে চালকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে যান্ত্রিক পরিবহনের পেশায় আনার পরামর্শ দিয়েছেন কেউ কেউ। এ জন্য নগর পরিবহনে আধুনিক যাত্রীসেবা চালু করতে হবে। বিআরটিসির মাধ্যমে ডাবল ডেকার বাস নামানোরও পরামর্শ দিয়েছেন অনেকে। তারা বলছেন, দ্বিতল বাস সার্ভিস চালু করা গেলে বেশি সংখ্যায় যাত্রী পরিবহন সম্ভব হবে। তা ছাড়া রিকশা বন্ধ করে সরু রাস্তায় ১২ সিটের ফোর হুইলার গাড়ি ও মিনিবাস চালুরও পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতি।

রাজধানী ঢাকায় কবে থেকে সাইকেল রিকশার যাত্রা শুরু হয়েছে তার কোনো সঠিক ইতিহাস নেই। ইতিহাসবিদ নাজির আহমেদের ‘ঢাকার ইতিহাস’ বই পড়ে জানা যায়, দেশ বিভাগের সময় ১৯৪৭ সালে ঢাকায় রিকশা ছিল ১৮০টি। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের অবসানে ভারত বিভাগের জ্বালানি সংকটের কারণে তেলবিহীন পায়ে টানা রিকশার চাহিদা বেড়ে যায়। ১৯৭১-এর আগে রাজধানী ঢাকায় রিকশার সংখ্যা পাঁচ হাজারে উন্নীত হয়। ষাটের দশকে কম জ্বালানির বেবিট্যাক্সি আমদানির পর মানুষের কায়িক শ্রমে চালানো রিকশা ঢাকা থেকে তুলে দেওয়ার প্রথম উদ্যোগ নেওয়া হয়। একাত্তরের স্বাধীনতার পর রাজধানী ঢাকার চিত্রপট দ্রুত পাল্টাতে থাকে। বাড়তে থাকে মানুষের চাপ। একই সঙ্গে বাড়তে থাকে রিকশা এবং যান্ত্রিক যানবাহন। ১৯৭৪ সালে রিকশার সংখ্যা ছিল ১৪ হাজার। তখন সমবায়ের মাধ্যমে বেবিট্যাক্সির আমদানি বাড়িয়ে রিকশা বন্ধ করে দেওয়ার দ্বিতীয় দফা উদ্যোগ নেওয়া হয়। পাঁচ হাজার বেবিট্যাক্সি ঢাকার শহর পথে চালু করা হলেও বন্ধ হয়নি রিকশা। বরং এর সংখ্যা বাড়তেই থাকে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর