নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর ৭ খুন মামলায় আসামিদের আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের ওপর আগামীকাল হাই কোর্ট রায় ঘোষণা করবে। গত ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেন এই হত্যা মামলার রায়ে নূর হোসেন, র্যাবের ৩ কর্মকর্তাসহ ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডের আদেশ দেন।
খুন হওয়া সাতজন হলেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র-২ নজরুল ইসলাম, সহযোগী সিরাজুল ইসলাম লিটন, তাজুল ইসলাম, মনিরুজ্জামান স্বপন ও গাড়িচালক জাহাঙ্গীর এবং জ্যেষ্ঠ আইনজীবী চন্দন সরকার ও তার গাড়িচালক ইব্রাহিম।
নজরুল ইসলামের মতো তার গাড়িচালক জাহাঙ্গীরও খুন হন। জাহাঙ্গীরের স্ত্রী সামসুন্নাহার নূপুর বলেন, ‘ঘটনার মাত্র ১০ মাস আগে আমাদের বিয়ে হয়। আমার শিশু বয়সী মেয়ে রোজা কিছুই বোঝে না। তার বয়স এখন ৩। সে তার দুই চাচাকে ‘বাবা’ বলে ডাকে। আমার দিন কোনো মতে চলে যাচ্ছে। মেয়ের কথা ভাবলেই ভয় হয়। কীভাবে তার পড়ালেখা চালাব! যারা আমাকে অকালে বিধবা করল, আমি তাদের ফাঁসি চাই।’ নিহত তাজুল ইসলামের বাবা আবুল খায়ের বলেন, ‘ছেলেকে আর ফিরে পাব না। কিন্তু যারা আমার ছেলেসহ সাতজনকে মেরেছে তাদের যেন ফাঁসি দেখে যেতে পারি। হাই কোর্টেও যেন তাদের ফাঁসি বহাল থাকে। আল্লাহর কাছে এটাই চাই’। তিনি আরও জানান, তাজুলের মা ছেলের শোকে অসুস্থ হয়ে গেছে। নাতির শোকে আমার বাবা-মাও দুনিয়া ছেড়ে চলে গেলেন। আমার সংসারটা শেষ হয়ে গেছে। এ ভাঙা সংসার টিকিয়ে রাখার জন্য আমি এখনো অসুস্থ শরীরে কাজ করি। নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি বলেন, তার স্বামী এক সময় বিএনপি-জামায়াত করতেন। সেখান থেকে আওয়ামী লীগে এসেছেন। তাই রাজনৈতিক প্রতিহিংসাবশত তার স্বামীকে খতম করে দেওয়া হয়েছে। বিউটি জানান, এখন বাড়ি ভাড়া থেকে যে আয় হয় তাই দিয়েই জীবনযাপনের ব্যয় নির্বাহ করছেন। বড় ছেলেকে অস্ট্রেলিয়ায় পাঠিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমার একটাই চাওয়া। নূর হোসেনের যে বিপুল অবৈধ সম্পদ তা বাজেয়াপ্ত করে যেন গরিব দুঃখীদের বিলিয়ে দেওয়া হয়।’