শিরোনাম
মঙ্গলবার, ১৫ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

কক্সবাজার হবে প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের কথা জানালেন মেনন

জিন্নাতুন নূর

সোনার বাংলাকে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে পর্যটনের স্বর্গরাজ্য হিসেবে আকর্ষণীয় করে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আর এজন্য তিনি মাস্টার প্ল্যানও তৈরি করছিলেন।  বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন সুইজারল্যান্ডের আদলে কক্সবাজারকে ‘প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড’ বানাবেন। ১৯৬৯ সাল থেকে বিভিন্ন আলোচনায় তার সহযোগীদের নিজের এই স্বপ্ন ও তা বাস্তবায়নে বিভিন্ন পরিকল্পনার কথাও বলেছিলেন। সে সময় বঙ্গবন্ধুর এই স্বপ্ন সম্পর্কে যারা জানতেন তাদের একজন বর্তমান বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। তিনি সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কক্সবাজারকে ঘিরে বঙ্গবন্ধুর দেখা স্বপ্ন ও তার বাস্তবায়নে নেওয়া পরিকল্পনার কথা জানান। এ ছাড়াও বাংলাদেশের পর্যটন বিকাশে বঙ্গবন্ধুর এই আগ্রহের কথা সম্প্রতি পর্যটনবিষয়ক আন্তর্জাতিক জার্নাল ‘বঙ্গবন্ধু-দ্য গ্রেট ফিলোসফার, নেচার লাভার অ্যান্ড ট্যুরিস্ট চ্যাম্পিয়ন উইল গ্লোরিফাই ট্যুরিজম ইন বাংলাদেশ এজ ‘ফাদার অব ট্যুরিজম ইন্ডাস্ট্রি’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনেও প্রকাশিত হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু মনে করতেন বাংলাদেশের বিশাল সমুদ্র এলাকা দেশ-বিদেশের পর্যটক টানতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।  শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ৩০ জুলাই ইংল্যান্ডে গল ব্লাডারের অপারেশন করাতে যান আর সেখান থেকে তিনি চিকিৎসকের পরামর্শে শারীরিক সুস্থতার জন্য সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় ভ্রমণ করতে যান। সে সময় সুইজারল্যান্ডের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তাকে মুগ্ধ করে। আর তখন তিনি সুইজারল্যান্ডের আদলে কক্সবাজারকে পর্যটন নগর হিসেবে গড়ে তোলার তার সিদ্ধান্ত আরও দৃঢ় হয়। বাংলাদেশের এই পর্যটন নগরীকে তিনি এশিয়ার সুইজারল্যান্ড হিসেবে তৈরির    স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর তিনি তার এই স্বপ্নের কথা সে সময় সহযোগীদের কাছে তুলে ধরেন।

তাদের একজন ছিলেন বর্তমান সরকারের বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন।

বাংলাদেশ প্রতিদিনকে রাশেদ খান মেনন বলেন, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের পরে সামরিক শাসন জারি করা হয়। সে সময় বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তার বাসায় একদিন আমাদের দেখা হয়। সেদিন আলোচনায় বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে নিয়ে তার বিভিন্ন স্বপ্নের কথা বলতে গিয়ে আমাদের বলেন, কক্সবাজারকে আমরা প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড হিসেবে গড়ে তুলব। সেখানে আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজন করার কথাও আমাদের জানান। এরপরেও তার এই স্বপ্নের কথা তিনি আমাদের বলেছিলেন। ’৭২ সালে সুইজারল্যান্ড থেকে দেশে ফিরে এসে কক্সবাজারকে আন্তর্জাতিকমানের পর্যটননগরী হিসেবে গড়ে তোলার আগ্রহের কথা আমাদের জানিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু।

পর্যটনমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্নের বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া এখনো চলমান আছে। সরকার কক্সবাজারকে ঘিরে মেগা ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট গ্রহণ করেছে। কক্সবাজার এখন আর আগের অবস্থায় নেই। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পর্যটকরা এখন সেখানে যাচ্ছেন। আমরা আশা করছি ভবিষ্যতে তা বঙ্গবন্ধুর প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ডে পরিণত হবে।

কক্সবাজারকে ঘিরে বঙ্গবন্ধুর এই আগ্রহের ব্যাপারে বিস্তারিত আছে সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রতিবেদনেও। বাংলাদেশ ট্যুরিজম কনসালটেন্ট সোসাইটি লিমিটেড, বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক শেখ মাহাবুব আলম তার গবেষণা প্রতিবেদনে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের বিকাশে বঙ্গবন্ধুর সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার বিষয়ে আলোকপাত করেন। বঙ্গবন্ধু দ্য গ্রেট ফিলোসফার, নেচার লাভার অ্যান্ড ট্যুরিস্ট চ্যাম্পিয়ন উইল গ্লোরিফাই ট্যুরিজম ইন বাংলাদেশ এজ ‘ফাদার অব ট্যুরিজম ইন্ডাস্ট্রি’ শীর্ষক প্রতিবেদনেও বাংলাদেশের কক্সবাজার ও সেন্ট মার্টিনকে ঘিরে বঙ্গবন্ধুর আগ্রহের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে শত ব্যস্ততার মধ্যেও বঙ্গবন্ধু দেশের প্রতিটি থানা ও উপজেলায় গিয়ে মানুষের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেছিলেন। এদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রতি ছিল তার দুর্বার আকর্ষণ। আর ’৭২ সালে তিনি যখন সুইজারল্যান্ড ভ্রমণে যান এরপর তিনি বাংলাদেশের সৌন্দর্য বিশ্ববাসীকে দেখাতে চাইলেন। দেশে পর্যটকদের আনতে এবং কক্সবাজারের সৌন্দর্য বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরতে সুইজারল্যান্ডের আদলে গড়ে তুলতে চাইলেন।

অন্যদিকে নাফ নদের তীরে পার্বত্য এলাকায় অবস্থিত টেকনাফে পর্যটকরা মূলত আসেন পাহাড় ঘেরা নাফ নদের সৌন্দর্য দেখতে। কক্সবাজার থেকে ৯২ কি.মি. দূরে অবস্থিত টেকনাফে বেশ কিছু গুহা আছে। এই নদ দিয়েই পর্যটকরা কক্সবাজার থেকে সেন্ট মান্টিন দ্বীপে আসা যাওয়া করেন। কক্সবাজারের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু সেন্ট মার্টিন দ্বীপটিকেও বিস্ময়কর দ্বীপ হিসেবে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরতে চেয়েছিলেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, এই দ্বীপ নিয়ে বঙ্গবন্ধুর সুদূরপ্রসারী স্বপ্ন থাকার কারণেই আমেরিকা সরকার যখন বঙ্গবন্ধুকে সেন্ট মার্টিন দ্বীপটি তাদের দিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল তখন বঙ্গবন্ধু সেই প্রস্তাবে রাজি হননি। কোনো সময় নষ্ট না করেই তিনি আমেরিকার সরকারকে ‘না’ বলেছিলেন। কারণ এই দ্বীপকে বিশ্বের পর্যটকদের কাছে একটি স্বর্গরাজ্য হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। শেখ মুজিবুর রহমানের বিশ্বাস ছিল স্থানীয় প্রযুক্তি ও স্বল্প অর্থ ব্যয়ে এই দ্বীপটিকে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলা সম্ভব। আর এর মাধ্যমে লাখ লাখ ডলার আয় করাও সম্ভব।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর