সোমবার, ২১ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

পানি সংকটে রেলের ৫০ হাজার বাসিন্দা

সাইদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম

মারাত্মক পানি সংকটে ভুগছেন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বাসা, অফিস ভবন ও বিভিন্ন স্থাপনার ৫০ হাজার মানুষ। সে সঙ্গে রেলওয়ের ওয়ার্কশপ-মার্শালিং ইয়ার্ডেও পানি সংকটে ট্রেন পরিচর্যা করতে অসুবিধা হচ্ছে।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে ৭টি ভূগর্ভস্থ গভীর নলকূপ রয়েছে। পূর্বাঞ্চলে কর্মরত প্রায় কয়েক হাজার রেল কর্মীদের আবাসিক ছাড়াও ওয়ার্কশপ, হাসপাতাল, মার্শালিং ইয়ার্ড, লোকো শপ এলাকার কাজে প্রতিদিনই পানির প্রয়োজন। এক সময় পাহাড়তলীর ফয়স’ লেকের পানির মাধ্যমে চাহিদা মেটানো হতো। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে একটি পাম্প পুরোপুরি এবং বেশ কয়েকটি পাম্প থেকে পর্যাপ্ত পানি উত্তোলন করতে না পারায় বিপাকে পড়েছেন রেলের পরিবহন বিভাগ। এ নিয়ে রেলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে গত দেড় বছর ধরে লিখিত চিঠি দেওয়া হলেও পাম্প মেরামত ও পানি সরবরাহ বাড়াতে কোনো ধরনের কার্যকর ভূমিকা নেওয়া হচ্ছে না। এতে করে আবাসিক এলাকার বাসিন্দারা চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন।

অভিযোগে জানা গেছে, রেলওয়ে হাসপাতাল, বর্তমানে রেলের আবাসিক এলাকাগুলোতে পরিবেশিত পানি রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পানি দূষিত হয়ে গেছে। ফলে বিশুদ্ধ পানির বদলে বাসিন্দাদের জন্য সম্বল হয়ে দাঁড়িয়েছে এই নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর এবং লবণাক্ত পানি। কেউ কেউ পানি বাইরে থেকে কিনে খেতেও  বাধ্য হচ্ছেন। আরও জানা গেছে, রেলের পাম্প নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি ভূগর্ভস্থ পানির অভাবে ব্যাহত হচ্ছে ওয়ার্কশপসহ মার্শালিং ইয়ার্ডের কর্মকাণ্ড। ওয়াশপিটে প্রয়োজনের সময় পানি না পাওয়ায় নির্ধারিত সময়ে রেক ও ইঞ্জিন সরবরাহে বিলম্ব হওয়ায় নির্ধারিত সময়ে ট্রেন পরিচালনায় ব্যাঘাত ঘটছে। নামেমাত্র যে পানি পাওয়া যাচ্ছে সেগুলোও লবণাক্ত পানি। রেলওয়ে শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় নেতা সিরাজুল ইসলাম বলেন, পাহাড়তলী ওয়ার্কশপসহ বিভিন্ন স্থানে ট্রেন পরিচালনায় পর্যাপ্ত পানির প্রয়োজন। একটি ট্রেন ভ্রমণ শেষে মার্শালিং ইয়ার্ডে এনে ন্যূনতম এক ঘণ্টা থেকে আড়াই ঘণ্টা পর্যন্ত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা এবং কোচের উপরের ট্যাংকে পানি ভর্তি করা হয়। কিন্তু মার্শালিং ইয়ার্ডের জন্য ব্যবহৃত পাম্পে নিয়মিত পানি না থাকায় অধিকাংশ সময়ই মার্শালিং ইয়ার্ডের ওয়াশপিটে অলস বসে থাকছে শ্রমিকরা। ইয়ার্ডে আসার পর পানি না থাকায় সর্বশেষ জুলাই মাসে বেশ কয়েকটি ট্রেনকে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে জরুরিভিত্তিতে পরবর্তী ট্রেনের জন্য প্রস্তুত করা হয়। তিনি বলেন, বর্তমানে নামেমাত্র পানি থাকলেও রয়েছে নোংরা ও লবণাক্ত পানি। একই কথা বলেন শ্রমিক নেতা কামাল পারভেজ বাদলও। তিনি বলেন, রেলের প্রকৌশল ও বিদ্যুৎ বিভাগের একটি চিহ্নিত চক্র আছে, তারা দীর্ঘদিন ধরেই নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি করে আসছে। তাদের চিহ্নিত করলে অনেক কিছুর সমাধান হবে। পূর্বাঞ্চলের প্রধান মেডিকেল অফিসার ডা. ইমতিয়াজ বলেন, রেলের হাসপাতালে পানি সংকটের কারণে রোগীদের বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হয়। জিএমসহ অনেকেই বৈঠকও করেছে। তা ছাড়া একাধিকবার চিঠি ও মৌখিকভাবে বলার পরও কোনো ধরনের সুরাহা হয়নি। এটি আমাদের জাতীয় সমস্যার মতো তৈরি হচ্ছে। প্রাপ্ত পানি দিয়ে চা পর্যন্ত খাওয়া যাচ্ছে না। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান বলেন, ভূগর্ভস্থ পানির সংকট দীর্ঘদিনের। রেলওয়ে ফয়স’ লেক ছাড়াও পাম্পের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ পানি ওয়ার্কশপসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে সরবরাহ করা হয়। রেলের পানি সংকট মেটাতে নষ্ট পাম্প চালুর পাশাপাশি বিকল্প উৎস থেকে পানি সংগ্রহের জন্য এরই মধ্যে চিঠি দেওয়া হয়েছে মহাপরিচালক বরাবরে। আশা করছি দ্রুত পানি সংকটসহ নানাবিধ জটিলতা থেকে মুক্তি মিলবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর