শনিবার, ২৬ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

পুরান ঢাকায় ১৫ হাজার সেই অটোরিকশা

আলী আজম

পুরান ঢাকায় চলছে ১৫ হাজার ব্যাটারিচালিত অবৈধ অটোরিকশা। এসব রিকশা প্রতিনিয়ত যেমন দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে তেমনি বিভিন্ন শব্দে অতিষ্ঠ করে তুলছে জনজীবন। এদের নেই লাইসেন্স। নেই গতিসীমা। নেই ট্রেনিং। নিয়ন্ত্রণহীন এসব রিকশা ব্যবসায় অনেক অসাধু ব্যবসায়ী আকৃষ্ট হচ্ছে। ফলে দিন দিন বেড়েই চলছে যন্ত্রণাদায়ক এসব অটোরিকশা। এ ছাড়া স্টিকার বাণিজ্য করে দেড় কোটি টাকারও বেশি হাতিয়ে নিচ্ছে একটি চক্র। জানা গেছে, ঢাকা মহানগরীতে কোনো ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা থাকবে না— আদালতের এমন নির্দেশনার পর পুলিশ কমিশনার ট্রাফিক বিভাগকে অটোরিকশা বন্ধের নির্দেশ দেন। কিন্তু ট্রাফিক বিভাগ এ নির্দেশ মানছে না। তাদের সামনেই চলছে এই অটোরিকশা। পুরান ঢাকার বংশাল, হাজারীবাগ, কামরাঙ্গীরচর, লালবাগ, চকবাজার ও কোতোয়ালি থানা এলাকা ঘুরে দেখা যায়  ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা অবাধে চলাচল করছে। সোহরাব ও চকলেট কাশেম নামে দুই ব্যক্তি এসব অটোরিকশায় স্টিকার বাণিজ্য করে প্রতি মাসে দেড় কোটি টাকারও বেশি হাতিয়ে নিচ্ছে। সোহরাবের নিয়ন্ত্রণে ১৩ হাজার এবং কাশেমের ২ হাজার অটোরিকশা রয়েছে। তদারকির জন্য দুজনের রয়েছে শতাধিক লাইনম্যান। অটোরিকশার চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ইলিশ, মোরগ, বাঘসহ বিভিন্ন ছবিসংবলিত স্টিকার লাগিয়ে অটোরিকশা থেকে প্রতি মাসে এক হাজার টাকা করে চাঁদা তোলা হচ্ছে। রিকশায় ইলিশ মাছের স্টিকার মেরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনের ইলিশ মার্কা বলে প্রচার করে সোহরাব। এই টাকার অংশ মাসোয়ারা হিসেবে সংশ্লিষ্ট থানার ওসি, কাউন্সিলর, ট্রাফিক পুলিশ ও স্থানীয় নেতাদের দিতে হয়। সংশ্লিষ্ট এলাকার অটোরিকশার কয়েকজন চালক জানান, প্রতি মাসে এক হাজার টাকার বিনিময়ে স্টিকার সংগ্রহ করতে হয়। মেয়াদ শেষ হলেই সোহরাব ও কাশেমের লোকজন রিকশা আটকায়। পুলিশ ঝামেলা করে। স্থানীয় নেতারা হুমকি দেয়। ফলে স্টিকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই তা কালেকশন করেন অটোরিকশার মালিকরা। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্টিকার পাওয়া যায়। সোহরাবের লালবাগের শহীদনগরে এবং চকলেট কাশেমের কামরাঙ্গীরচরে ঝাউলহাটি চৌরাস্তায় অফিস রয়েছে। স্টিকার বাণিজ্য করে ইতিমধ্যে সোহরাব পুরান ঢাকায় তিনটি জমিও কিনেছেন। যারা অটোরিকশা চালাচ্ছেন তারা এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করে চলেছেন। এদের যত্রতত্র পার্কিংয়ে যেমন যানজট তীব্র আকার ধারণ করছে তেমন ইচ্ছামতো ভাড়া আদায়েরও অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, এসব অটোরিকশায় ব্যাটারি চার্জ দিতে ব্যবহৃত বিদ্যুৎও অবৈধ। এতে করে সরকার যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তেমন অতিরিক্ত ভাড়া ও লোডশোডিংয়ের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। অধিকাংশ গ্যারেজ মালিক বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ম্যানেজ করে অবৈধ বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে। অহরহ অটোরিকশার গ্যারেজ, অতিরিক্ত ভাড়া, যত্রতত্র পার্কিং ও বিভিন্ন প্রকার অসহ্য যন্ত্রণাদায়ক শব্দে মানুষ অতিষ্ঠ। ২০১৪ সালের ৩ জুলাই ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে ব্যাটারি ও ইঞ্জিনচালিত রিকশা চলাচল বন্ধে রায় দেয় হাই কোর্ট। এরপর ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ঢাকা মহানগরীর চার ট্রাফিক পুলিশের উপ-কমিশনারকে নির্দেশ দেন ডিএমপি কমিশনার। প্রথমদিকে এটা কার্যকর হলেও পরে ঝিমিয়ে পড়ে। এ বিষয়ে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের (দক্ষিণ) উপ-কমিশনার রিফাত রহমান শামীম বলেন, পুরান ঢাকায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল করে এটা সত্য। এসব অটোরিকশা বন্ধে সংশ্লিষ্ট ট্রাফিক জোনের এডিসি, এসি, ইন্সপেক্টরদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আশা করছি শিগগিরই অটোরিকশা বন্ধ করতে সক্ষম হব। 

সর্বশেষ খবর