রবিবার, ২৭ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

নিয়োগ পরীক্ষায় বয়স্কদের ছড়াছড়ি

সাইদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম

নিয়োগ পরীক্ষায় বয়স্কদের ছড়াছড়ি

রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলে খালাসি পদে নিয়োগ পরীক্ষায় বয়স্ক প্রার্থীদের ছড়াছড়ি লক্ষ্য করা গেছে। মৌখিক পরীক্ষার প্রথম দিনে গতকাল অংশ নেওয়া ৬০০ প্রার্থীর মধ্যে ৩০ শতাংশের বয়স চল্লিশোর্ধ্ব বা কাছাকাছি। তারা ৮ম শ্রেণীর জাল সনদ ব্যবহার করে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠেছে। এরা মূলত রেল শ্রমিক লীগ নেতা, রেলের ঠিকাদার ও ব্যবসায়ীদের আত্মীয়স্বজন। ১২৬টি খালাসি পদের বিপরীতে প্রায় ২৬ হাজার পরীক্ষার্থী অংশ নিয়েছেন। 

সরজমিনে গিয়ে বেলা ১২টার দিকে দেখা যায়, দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে পরীক্ষার্থীরা। একটি কক্ষে মৌখিক পরীক্ষা নিচ্ছেন কমিটির সদস্যরা। সুন্দর ও সুশৃঙ্খল এ পরীক্ষায় সিরিয়াল মোতাবেক ডাকা হচ্ছে পরীক্ষার্থীদের। তাদের মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশই বয়স্ক বা বুড়া-বুড়ি। তাদের বয়স ৩৮ বছরের উপরে।

লাইনে দাঁড়ানো মারজানা জান্নাত নামের একজন পরীক্ষার্থী বলেন, অনেক দূর থেকে পরীক্ষায় অংশ নিতে এসেছি। জানিনা চাকরিটা হবে কি-না। পরীক্ষা শেষে বের হওয়ার সময় তিনি বললেন, সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি। আশা করছি পাস করব। তবে বাইরে দাঁড়ানো লোকজন বলছেন, এ নিয়োগের বিষয়ে কমিটির কেউ কিছু করতে পারবেন না। উপরে লাইন থাকলে চাকরি নিশ্চিত। তারপরও আশা নিয়েই চলে যাচ্ছি। ৩৭ বছর ঊর্ধ্ব আবদুল করিম (ছদ্মনাম) নামের একজন পরীক্ষার্থী বলেন, পাহাড়তলী ওয়ার্কশপ এলাকায় তার দোকান। রেলে ব্যবসাও করি। রেলের সবাইকে চিনি। পরীক্ষাটা শুধু উপস্থিতি, আর কিছু নয়। তাছাড়া এখানে বয়সটা বিষয় নয়। লাইন থাকলে সবকিছু হয়। তাছাড়া বর্তমানে বিভিন্ন দফতরে শ্রমিকনেতাদের আত্মীয়-স্বজনদের অনেকেই বয়স্ক হলেও চাকরি নিয়েছেন। তারা চাকরি করছেন। রেলের বাসা-বাড়িও পেয়েছেন।

চাকরি প্রত্যাশী সুমন বড়ুয়া (ছদ্মনাম) ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, এখানে বয়স্ক যেসব পরীক্ষার্থী দেখছেন, সবাই জাল সার্টিফিকেটধারী। টাকা দিয়ে বিভিন্ন কৌশলে ৮ম শ্রেণী   পাস জাল সার্টিফিকেট তৈরি করে এ পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। দেখা যাবে, তারাই চাকরি পাবেন।

রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) প্রকৌশলী মো. আবদুল হাই  বলেন, রেলের সব নিয়োগ পরীক্ষা সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য কর্মকর্তারা কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, বয়স ও সার্টিফিকেটে কোনো ধরনের অনিয়ম হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে সার্টিফিকেটসহ সব কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করেই নিয়োগ চূড়ান্ত করা হবে। এতে বয়োবৃদ্ধসহ শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেট জাল কি-না সে বিষয়ে তদন্ত করা হবে বলে জানান তিনি। নিয়োগ কমিটির আহ্বায়ক ও পূর্বাঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (সেতু) আবদুল জলিল বলেন, যাচাই-বাছাই কমিটি চূড়ান্ত করেই আমাদের তালিকা দিয়েছেন। সেই তালিকা অনুযায়ী মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া শুরু করেছি। তাছাড়া সার্টিফিকেটের বয়স ঠিক থাকলে পরীক্ষার্থীরা বয়স্ক হলেও আমাদের কিছু করার নেই। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কর্মচারী ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, নিয়োগ কমিটির সদস্যদের মধ্যে বিতর্কিত কর্মকর্তারাও রয়েছেন।

জানা যায়, রেলওয়ের বিভিন্ন ক্যাটাগরির নিয়োগের সময় অনিয়ম, দুর্নীতি প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। এসব বিষয়ের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সাবেক জিএম ইউসুফ আলী মৃধাসহ কয়েকজন কর্মকর্তা চাকুরিচ্যুতও হয়েছিলেন। বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন মৃধা। চলছে দুদকের তদন্তও। তারপরও থেমে নেই নিয়োগবাণিজ্যসহ নানাবিধ অনিয়ম। ইতিমধ্যে প্রধান বৈদ্যুতিক প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে দুদক ও টেন্ডার জালিয়াতির বিষয়ে রেলের পৃথক দুটি তদন্তও চলছে।

সর্বশেষ খবর