শিরোনাম
রবিবার, ২৭ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

পশুর হাট ও সড়কে চাঁদাবাজি বন্ধে একাট্টা পুলিশ

নিয়েছে নানা ব্যবস্থা

প্রতিদিন ডেস্ক

কোরবানির ঈদ ঘিরে পশুর হাট ও সড়কে পশু বহনকারী যানবাহন আটকে চাঁদাবাজি নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এ ছাড়া পশুর হাটে জালনোট পাচার, অজ্ঞান পার্টির আতঙ্কে থাকেন গরু ব্যবসায়ীরা। এসব বিষয় মাথায় রেখে প্রশাসন তৎপর রয়েছে। নিয়েছে নানা ব্যবস্থা। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদকদের পাঠানো খবর—

চট্টগ্রাম : কোরবানির পশুর হাটে জালনোট পাচার, অজ্ঞান পার্টি, পশু ছিনতাই, পথে পথে চাঁদাবাজিসহ নানা কারণে আতঙ্কে চট্টগ্রামের গরু ব্যবসায়ীরা। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় তাদের কপালে ভাঁজ পড়লেও আশ্বস্ত করা হচ্ছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে। পুলিশ ও অন্যান্য সংস্থা এরই মধ্যে নিয়েছে গরু পরিবহন ও বাজারকেন্দ্রিক আলাদা পরিকল্পনা। চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) আকরামুল হোসেন বলেন, ‘কোরবানির পশুর হাটের নিরাপত্তায় ৪০০ পুলিশ সদস্য নিয়োজিত থাকবে। জাল টাকা চিহ্নিত করতে থাকছে বাংলাদেশ ব্যাংকের বুথ। পশুবাহী গাড়ি ছিনতাই কিংবা নির্দিষ্ট কোনো হাটে পশু নামাতে ব্যবসায়ীদের বাধ্য করলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। যে “হাসিল” নির্ধারণ করা হয়েছে তা হাটের একাধিক স্থানে প্রকাশ্যে টাঙিয়ে রাখতে হবে। নির্ধারিত হাসিলের বাইরে কেউ টাকা নিলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’ চট্টগ্রাম জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) রেজাউল মাসুদ বলেন, ‘কোরবানির ঈদ সামনে রেখে পশু পরিবহন ও হাটের জন্য বিশেষ নিরাপত্তা পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। বড় হাটগুলোয় নিয়ন্ত্রণকক্ষ স্থাপনের পাশাপাশি থাকছে জালনোট শনাক্তকরণ মেশিন। একই সঙ্গে বসানো হচ্ছে সিসিটিভি ক্যামেরা। পশুর হাট ও পরিবহনের নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবে অতিরিক্ত ২ হাজার পুলিশ।’ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কোরবানির পশুর হাটে প্রতি বছরই সক্রিয় হয়ে ওঠে জালনোট পাচারকারী চক্র এবং অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা। এ ছাড়া পশুর হাটে আধিপত্য বিস্তার ও ‘কুটি’ বাণিজ্য নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পশুবাহী গাড়ি থেকে পথে পথে চাঁদাবাজি, পশুর গাড়ি ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটে অহরহ। সড়কে খানাখন্দ, যানজট ও পুলিশি হয়রানির চিন্তায় কপালে ভাঁজ পড়েছে গরু ব্যবসায়ীদের। চট্টগ্রাম গবাদিপশু ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ মোস্তাফা বলেন, ‘কোরবানির আগে পশু পরিবহন করতে গিয়ে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় ব্যবসায়ীদের। এ সময় যানজট, পশু ছিনতাই ও পুলিশের চাঁদাবাজি বেড়ে যায়। যানজটের কারণে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে গরু আনতে যেখানে আগে ১৪-১৫ ঘণ্টা লাগত এখন তা ৪৮ ঘণ্টায়ও আনা যায় না। ব্যবসায়ীরা এসব বিষয় নিয়ে পুলিশের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তারা এ বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন।’

রংপুর : কোরবানির ঈদ ঘিরে পশুর হাট ও সড়কে পশু বহনকারী যানবাহন আটকে চাঁদাবাজি বন্ধ এবং ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে বাসের ছাদে ও পণ্যবোঝাই ট্রাকে যাত্রী না তোলার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করেছে রংপুরের পুলিশ প্রশাসন। প্রতিটি পশুর হাটে অস্থায়ী পুলিশ বক্স স্থাপনের পাশাপাশি সড়ক-মহাসড়কে পুলিশের একাধিক ভ্রাম্যমাণ টিম কাজ করছে। চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িতদের আটক করে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বাসের ছাদে ও পণ্যবোঝাই ট্রাকে যাত্রী না তোলার জন্য পরিবহন মালিকদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। এ আদেশ অমান্যকারী চালকের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেবে পুলিশ। জানতে চাইলে রংপুরের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, ‘পশু ক্রেতা-বিক্রেতারা যাতে চাঁদাবাজির শিকার না হন সেজন্য প্রতিটি হাটে পুলিশ বক্স স্থাপন করা হয়েছে। হাটের দিনগুলোয় সড়ক-মহাসড়কে পুলিশের ভ্রাম্যমাণ টিম সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছে। চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িতদের আটক করে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা দেওয়া হবে।’ হাইওয়ে পুলিশ রংপুর সার্কেলের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার ধীরেন্দ্র চন্দ্র মহাপাত্র বলেন, ‘ঈদে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে বাসের ছাদে যাত্রী নেওয়া বন্ধ করতে পরিবহন মালিক সমিতি ও শ্রমিক ফেডারেশনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তাদের সহযোগিতায় অভিযান চালিয়ে রংপুর বিভাগের আট জেলার ওপর দিয়ে চলাচলকারী প্রতিটি বাসের ছাদে ওঠা সিঁড়ি খুলে দেওয়া হচ্ছে। প্রতিটি বাস আটকিয়ে পেছনে ও সামনের নির্দেশক লাইট পরীক্ষা করা হচ্ছে। যেগুলোর লাইট নেই সেগুলোয় লাগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এতে অনেক ফল পাওয়া যাচ্ছে। এর পরও যারা বাসের ছাদে যাত্রী তুলবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য হাইওয়ে থানা ও ফাঁড়ির ইনচার্জদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’ জানা গেছে, রংপুর জেলায় পশুর হাট রয়েছে ৮৩টি। এর মধ্যে স্থায়ী ৩২টি ও অস্থায়ী ৫১টি। গত কোরবানির ঈদে ব্যাপক চাঁদাবাজির শিকার হন পশু ক্রেতা-বিক্রেতারা। সড়ক-মহাসড়কে পশু বহনকারী যানবাহন আটকে চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটে। চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একশ্রেণির সদস্যের বিরুদ্ধেও। এ বিষয়ে জানতে রংপুরের বৃহৎ পশুর হাট লালবাগ হাটের ইজারাদার জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘গত কোরবানির ঈদে ব্যাপক চাঁদাবাজি হয়েছে। সড়কে পশু বহনকারী যানবাহন আটকে চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটে। এবার পুলিশ আগাম ব্যবস্থা নেওয়ায় এখন পর্যন্ত কোথাও এ ধরনের ঘটনার খবর পাওয়া যাচ্ছে না।

 ক্রেতা-বিক্রেতারা পশু কেনাবেচা করে নিরাপদে ঘরে ফিরতে পারছেন।’ রংপুর জেলা মোটর মালিক সমিতির সভাপতি আবু আজগার আহমেদ পিন্টু বলেন, ‘ঈদে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে হাইওয়ে পুলিশের উদ্যোগ সফল করতে চালকদের সব ধরনের সহযোগিতা করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

সর্বশেষ খবর