রবিবার, ২৭ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

অপরিকল্পিত বক্স ড্রেনে ব্যয় ১০ কোটি টাকা!

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

বক্স ড্রেন নির্মাণ নিয়ে পরিবেশবাদীদের আপত্তি দীর্ঘদিনের। বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, নিয়মিত পরিচ্ছন্ন করার সুযোগ না থাকায় দীর্ঘমেয়াদে ‘বক্স ড্রেন’ প্রকল্প হিতে-বিপরীত হয়ে দাঁড়াবে। ময়লা-আবর্জনা জমে এসব ড্রেনের পানি নিষ্কাশন ক্ষমতা কমে যাবে। ফলে দেখা দেবে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা। এ ছাড়া বক্স ড্রেনের কারণে ছড়া ও খাল অস্তিত্ব হারানোর পাশাপাশি জীববৈচিত্র্যের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এ অবস্থায় বিশেষজ্ঞ ও পরিবেশবাদীদের আপত্তি অগ্রাহ্য করেই সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) একের পর এক নির্মাণ করছে ‘বক্স ড্রেন’। ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি ছড়ার ওপর চলছে এই ড্রেন নির্মাণ কাজ।

এই বক্স ড্রেন নির্মাণ নিয়ে সিটি করপোরেশনের জনপ্রতিনিধি ও প্রকৌশল বিভাগেরও রয়েছে পরস্পরবিরোধী মূল্যায়ন। সিটি করপোরেশনের মেয়র এই প্রকল্পের পক্ষে বললেও প্রধান প্রকৌশলী এটিকে অপরিকল্পিত উন্নয়ন বলেই মন্তব্য করেছেন। তবে বক্স ড্রেনের ক্ষতির বিষয়টি মানতে নারাজ মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তিনি বলেন, বক্স ড্রেনগুলো গভীরভাবে করা হয়েছে। এগুলোতে কখনই আবর্জনা জমে পানি নিষ্কাশনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে না। সিলেট নগরীর ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে ১১টি বড় ছড়া ও খাল। এদের সবকটিরই উৎপত্তিস্থল শহরতলির বিভিন্ন টিলা। তাই ভারি বর্ষণের সময় পানির সঙ্গে টিলা থেকে ভেসে আসে প্রচুর পরিমাণ বালু। এ ছাড়া নগরীর প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বর্জ্যও এসে পড়ে ছড়ায়। এতে কিছু দিন পরপরই ভরাট হয়ে যায় ড্রেন। তাই নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে সিটি করপোরেশনকে নিয়মিত পরিচ্ছন্ন করতে হয় ছড়া-খাল। এ অবস্থায় ২০১৪ সালে মঙ্গলীছড়ার মীরের ময়দান থেকে পশ্চিম চৌহাট্টা পর্যন্ত অংশে প্রায় ৩৭৫ মিটার দীর্ঘ ‘বক্স ড্রেন’ নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সিটি করপোরেশন। কাজের শুরুতেই এতে আপত্তি তুলেন পরিবেশবাদীরা। কিন্তু তাতে কর্ণপাত করেনি করপোরেশন। ওই বক্স ড্রেন নির্মিত হলে মীরের ময়দান থেকে চৌহাট্টা পর্যন্ত নতুন একটি রাস্তা তৈরি হবে এমন যুক্তি দিয়ে তারা কাজ চালিয়ে যেতে থাকে। ৬ কোটি টাকার ওই প্রকল্পটির কাজ শেষ হতে না হতেই নেওয়া হয় জল্লারখালের ওপর ‘বক্স ড্রেন’ নির্মাণ প্রকল্প। ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ওই খালের ওপর প্রায় এক কিলোমিটার ‘বক্স ড্রেন’ নির্মাণ হচ্ছে। জল্লারপাড় থেকে শুরু হয়ে অগ্রগামী স্কুল ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের পাশ দিয়ে তালতলা হোটেল গুলশান হয়ে সুরমা নদীর তীর পর্যন্ত নির্মিত হবে এই ড্রেন। মীরের ময়দানের বক্স ড্রেনের ওপর দিয়ে গাড়ি চলাচল করতে পারলেও এই ড্রেনের ওপর দিয়ে কেবলমাত্র পায়ে হাঁটা যাবে বলে জানিয়েছে সিটি করপোরেশন। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই দুটি খালের ওপর নির্মিত বক্স ড্রেনের ভিতর আবর্জনা জমে পানি নিষ্কাশনে বাধার সৃষ্টি হলে সিলেট নগরীর প্রায় অর্ধেক এলাকায় ভয়াবহ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে।  শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুর ও প্রকৌশল বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মোস্তাক আহমদ বলেন, ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকায় একসময় বক্স ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছিল। এখন সেগুলো ভেঙে ফেলা হচ্ছে। পানি নিষ্কাশনের জন্য এটি কোনো পরিকল্পিত উদ্যোগ নয়।

বক্স ড্রেনের ভিতর আবর্জনা জমলে সেটি পরিষ্কারের কোনো প্রযুক্তিও আমাদের হাতে নেই। তাই সিলেট সিটি করপোরেশনের নেওয়া এই প্রকল্প একসময় হিতে-বিপরীত হয়ে দাঁড়াতে পারে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন-বাপা’র সিলেট জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম কিম বলেন, মীরের ময়দানে বক্স ড্রেন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়ার পরই আমরা এর প্রতিবাদ জানাই। কিন্তু সিটি করপোরেশন তাতে কর্ণপাত না করে জল্লারখালের ওপর নতুন আরেকটি বক্স ড্রেন নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে একসময় নগরীর ছড়া-খালগুলো অস্তিত্ব হারাবে। এতে পরিবেশেরও বিপর্যয় ঘটবে।

প্রকল্পের অদূরদর্শিতার বিষয়টি স্বীকার করে সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, ‘বক্স ড্রেন নির্মাণের পক্ষে আমরা নই। এগুলো পরিষ্কার রাখা দুঃসাধ্য। জনপ্রতিনিধিদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে নতুন রাস্তা বের করার জন্য দুটি খালের ওপর বক্স ড্রেন নির্মাণ করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে এরকম প্রকল্প নেওয়া হবে না।’

সর্বশেষ খবর